ভারতে সর্বাধিক কর্মসংস্থান এখনও কৃষিক্ষেত্রেই হয়। তাহার পরই যে ক্ষেত্রটির গুরুত্ব, তাহা অতি ক্ষুদ্র, ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোগ— মাইক্রো, স্মল অ্যান্ড মিডিয়াম এন্টারপ্রাইজ়েস, বা এমএসএমই। অ-কৃষি কর্মসংস্থানের সিংহভাগ হয় এই ক্ষেত্রেই, প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ভাবে। নরেন্দ্র মোদী তাঁহার নোট বাতিল ও জিএসটি-র জোড়া ফলায় কৃষি এবং এমএসএমই, এই দুইটি ক্ষেত্রকেই মোক্ষম ঘায়েল করিয়াছেন। কর্মসংস্থান বৃদ্ধির হার অর্ধশতকের তলানিতে ঠেকা তাহার একটি ফল, আর্থিক বৃদ্ধির বণ্টনে অসাম্য বৃদ্ধি আর একটি। আঁচ করা চলে, ভোটের বাজারে ইহার বাড়া উদ্বেগ নরেন্দ্র মোদীদের খুব কমই আছে। সম্প্রতি জানা গেল, এই ক্ষুদ্র উদ্যোগগুলি যে ঋণ পাইয়া থাকে, তাহাতে রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের প্রদত্ত ঋণের অনুপাত কমিয়াছে। বেসরকারি ব্যাঙ্ক ও নন-ব্যাঙ্কিং ফিনানশিয়াল কর্পোরেশনের ঋণের অনুপাত তুলনায় বাড়িয়াছে। সংবাদটি একাধিক কারণে তাৎপর্যপূর্ণ। প্রথমত, ক্ষুদ্র উদ্যোগকে মদত দেওয়ার কাজটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্ক যে উদ্দেশ্যে করে, মুনাফা-চালিত বেসরকারি ব্যাঙ্ক বা অন্য আর্থিক প্রতিষ্ঠানের উদ্দেশ্য তাহা না হওয়াই স্বাভাবিক। অর্থাৎ, রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের ঋণের অনুপাত হ্রাস ক্ষুদ্র উদ্যোগের নাগালে থাকা ঋণের গুণগত মান পরিবর্তন করিতে পারে। তবে, উদ্বেগের বৃহত্তর কারণটি হইল, কিছু কাল পূর্বে স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী এই গোত্রের উদ্যোগের জন্য ঋণ নিশ্চিত করিবার কথা ঘোষণা করিয়াছিলেন। ভোটাভিমুখী ঘোষণা, সন্দেহ নাই। কিন্তু, দেখা যাইতেছে, ভোটের তাগিদেও প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা বাস্তবে রূপান্তরিত হয় না। শিল্প বলিতে তিনি যে মুষ্টিমেয় বৃহৎ পুঁজিকেই বোঝেন, দেশের সর্বত্র ছড়াইয়া থাকা ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র উদ্যোগগুলিকে নহে, তাহার সহিত জড়িত মানুষগুলিকে নহে, তাহাতে সন্দেহের আর কারণ থাকিল কি?
এমএসএমই-র গুরুত্ব শিল্প উৎপাদনে বা বাণিজ্যিক সংগঠনে যতখানি, সম্ভবত তাহার অধিক কর্মসংস্থানে। যাঁহারা ট্রিকল ডাউন বা চুয়াইয়া পড়া অর্থনীতির তত্ত্বে বিশ্বাসী, ভারতের ন্যায় উন্নয়নশীল দেশে তাঁহাদের নিকট এমএসএমই কার্যত পরশপাথর, যাহার ছোঁয়ায় বিপুল জনগোষ্ঠীর নিকট আর্থিক বৃদ্ধির সুফল পৌঁছাইয়া দেওয়া যায়। আশ্চর্যের বিষয়, ভারতীয় রাজনীতিতে ট্রিকল ডাউনের ধ্বজাধারী বিজেপি এমএসএমই-র কর্মসংস্থান-ক্ষমতা বিষয়ে নিদারুণ রকম উদাসীন। তাহাদের নির্বাচনী ইস্তাহারে এমএসএমই-র প্রসঙ্গ যতখানি আসিয়াছে, তাহা মূলত ঋণপ্রাপ্তির নিশ্চয়তার অলীক প্রতিশ্রুতির ভাষ্যে। বিপরীতে, কংগ্রেসের ইস্তাহার একটি কাঠামোগত পরিবর্তনের কথা বলিয়াছে। এমএসএমই-র সংজ্ঞা পরিবর্তন। কংগ্রেস প্রতিশ্রুতি দিয়াছে, পুঁজির অঙ্কে নহে (বিজেপির একাংশের আগ্রহ যে দিকে, অর্থাৎ পুঁজির পরিবর্তে বাৎসরিক লেনদেনের অঙ্কের নিরিখে এমএসএমই-র সংজ্ঞা স্থির করা, তাহাও নহে), অতি ক্ষুদ্র, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প স্থির হইবে শিল্পক্ষেত্রে নিযুক্ত শ্রমিকের সংখ্যা অনুসারে। অর্থাৎ, কর্মসংস্থানের সহিত শিল্পের প্রাপ্য সুবিধার প্রত্যক্ষ যোগসূত্র রচিত হইবে। অনুমান করা চলে, সত্যই সংজ্ঞা পরিবর্তিত হইলে এই ক্ষুদ্র উদ্যোগগুলিতে কর্মসংস্থানের পরিমাণ বাড়িবে। এই গোত্রের উদ্যোগ তুলনায় পুঁজিনিবিড় না হইয়া আরও বেশি শ্রমনিবিড় হইলে তাহার ফল সামগ্রিক অর্থনীতির পক্ষে মঙ্গলজনক হইবে কি না, তাহা তর্ক এবং পরিসংখ্যান সাপেক্ষ। কিন্তু, এমএসএমই যে নিছক একটি পার্শ্বচরিত্র নহে, বরং ভারতীয় অর্থনীতির অন্যতম নায়ক, এই কথাটির স্বীকৃতি বিজেপির ইস্তাহারে নাই, কংগ্রেসের খাতায় আছে। ক্ষেত্রটির গুরুত্ব নির্ণয়ে কোন পক্ষ কোন মাপকাঠি ব্যবহার করিতেছে, কে বৃহৎ পুঁজির চশমায় দেখিতেছে আর কে কর্মসংস্থানের প্রিজ়মে, সম্ভবত তাহাতেই গুরুত্বভেদের কারণটি নিহিত।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy