Advertisement
২৩ নভেম্বর ২০২৪
NH 34

দুষ্টচক্র

গোদের উপর বিষফোড়ার ন্যায় উপস্থিত ক্ষুদ্র স্বার্থের রাজনীতি। বামফ্রন্টের দীর্ঘ শাসনকালে উত্তরবঙ্গের বিস্তীর্ণ অঞ্চল তাহাদের ক্ষমতার অধরাই রহিয়া গিয়াছিল। তৎকালে বারংবার অভিযোগ উঠিত, বিরোধী দলের আধিপত্য কায়েম থাকিবার কারণেই উত্তরবঙ্গের সহিত দুয়োরানির ন্যায় আচরণ করিয়া থাকে কলিকাতার মহাকরণ হইতে পরিচালিত রাজ্য সরকার।

ফাইল চিত্র।

ফাইল চিত্র।

কলকাতা শেষ আপডেট: ১৬ অক্টোবর ২০২০ ০১:১৮
Share: Save:

কলিকাতা হইতে শিলিগুড়ি। বারো ঘণ্টার এই দূরত্ব সড়কপথে অতিক্রম করিতে কতখানি সময় লাগিবে, তাহার নিশ্চিত জবাব বোধ করি বিধাতাপুরুষের নিকটও অলভ্য। সংখ্যাতীত খানাখন্দে পরিপূর্ণ এক অতি সঙ্কীর্ণ জাতীয় সড়কে স্থানে স্থানে যানজট না দেখিলেই আশ্চর্য হইতে হয়। তাহার অধিক বিপদও ‌উপস্থিত। জাতীয় সড়কের মালদহ জেলার অংশটিতে ২০১৮ সাল হইতে পথ দুর্ঘটনায় প্রতি বৎসর গড়ে শতাধিক মানুষের মৃত্যু হইয়াছে। সড়কের বহুলাংশে ছোটবড় গর্ত থাকায় এবং অবশিষ্টাংশে সম্প্রসারণের কাজ চলায় বারংবার দুর্ঘটনা ঘটিতেছে। অপর দিকে খাতায়-কলমে জানা যাইতেছে, প্রত্যেক বৎসর বর্ষাকালের পর সড়কের মেরামতিও হয়। প্রশ্ন হইল, একটি সড়ক যথাযথ ভাবে মেরামত করিলে কী উপায়ে তাহা প্রত্যেক বার বৎসরান্তে বেহাল হইয়া যায়? দুর্জনে বলে, এই খাতে সরকার কর্তৃক বরাদ্দ অর্থের পুরা ভাগটি ঠিকাদার কর্তৃক যথাযথ রূপে ব্যয়িত হয়, ইহা নিশ্চিত রূপে বলা যায় না। ফি বৎসর ইট-বালি-সিমেন্ট ক্রয় করিবার আবর্তে লাভের গুড় আছে, পিপীলিকারও অভাব নাই। সমগ্র রাজ্যেই।

এতৎসত্ত্বেও, বিগত কয়েক বৎসরে দক্ষিণবঙ্গে সড়কের কিছু উন্নতি হইয়াছে। উত্তরবঙ্গে তাহার চিহ্নমাত্র নাই। গভীরতর প্রশ্নটি এইখানেই— পাকাপাকি শুশ্রূষার বন্দোবস্ত না করিয়া প্রতি বৎসর রাস্তা সারাইবার উদ্যোগ কেন? উত্তর-দক্ষিণ সংযোগকারী ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়কটি বহু দিন ধরিয়া নির্দিষ্ট কিছু সমস্যায় জর্জরিত, যাহা মূলত প্রক্রিয়াগত জটিলতা বা লাল ফিতার ফাঁস। জমি জটের কারণে সড়কের দক্ষিণবঙ্গের কিছু অংশে সম্প্রসারণের কাজ স্থগিত আছে। সমস্যা হইল, সেই যুক্তিতে সড়কের সমস্ত অংশেই তাৎক্ষণিক মেরামতও বন্ধ রাখা হইয়াছে। জাতীয় সড়কটি মালদহ, ডালখোলা, ইসলামপুর, শিলিগুড়ি, আলিপুরদুয়ার, কোচবিহারের ন্যায় একাধিক ব্যস্ত শহর পার হইলেও বাইপাস বা উড়ালপুল নির্মাণে যথেষ্ট উদ্যোগ অনুপস্থিত, অনেক ক্ষেত্রে পরিকল্পনাও নাই। সড়ক নির্মাণের দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থাকে লইয়াও নানা আর্থিক সঙ্কট ঘনাইয়াছে। কিন্তু কর্তৃপক্ষের গড়িমসি দেখিয়া এই সকল সমস্যার দ্রুত সুরাহা দুরাশা বলিয়াই মনে হয়।

গোদের উপর বিষফোড়ার ন্যায় উপস্থিত ক্ষুদ্র স্বার্থের রাজনীতি। বামফ্রন্টের দীর্ঘ শাসনকালে উত্তরবঙ্গের বিস্তীর্ণ অঞ্চল তাহাদের ক্ষমতার অধরাই রহিয়া গিয়াছিল। তৎকালে বারংবার অভিযোগ উঠিত, বিরোধী দলের আধিপত্য কায়েম থাকিবার কারণেই উত্তরবঙ্গের সহিত দুয়োরানির ন্যায় আচরণ করিয়া থাকে কলিকাতার মহাকরণ হইতে পরিচালিত রাজ্য সরকার। শাসক দল পরিবর্তন হইয়াছে, বিরোধী দলও পাল্টাইয়াছে, কিন্তু উত্তরবঙ্গের চরিত্রে নড়চড় হয় নাই। এক্ষণেও উত্তরের জেলাগুলিতে বিরোধীদেরই প্রশ্নাতীত প্রাধান্য। অতএব, পুরাতন যুক্তিগুলিও তামাদি হয় নাই। তবে কারণ যাহাই হউক, রাজ্যের একটি বৃহদংশের প্রতি বৈষম্যমূলক আচরণ সভ্য ব্যবস্থার দস্তুর হইতে পারে না। কলিকাতা হইতে খড়্গপুর এবং দার্জিলিং যাইবার সড়ক দুইটির গুণমান যাহাতে সমান হয়, তাহা প্রশাসনকেই নিশ্চিত করিতে হইবে। উহার জন্য দুর্নীতি ঠেকাইতে হইবে, প্রশাসনিক সহযোগিতার আবহ তৈরি করিতে হইবে, রাজনৈতিক স্বার্থ ভুলিতে হইবে। না হইলে দুষ্টচক্র ভাঙিবে না।

অন্য বিষয়গুলি:

Editorial NH 34
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy