Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
Water Pollution

প্রকৃতিদূষণ 

বিসর্জন ও জলদূষণ যে আসলে মানবপরিবেশেরই দূষণ— আমরা মনে রাখিব তো? 

শেষ আপডেট: ২৬ অক্টোবর ২০২০ ০১:২৮
Share: Save:

দশমী তিথি পোহাইবে, এত দিনের অপেক্ষা আর আবেগের সমাপন আনিবে, প্রতি বারের মতোই। প্রতি বারের মতোই পরের বৎসরের পূজোৎসবের জন্য দিন গোনা শুরু হইবে। তবে প্রতি বার অপেক্ষা একটি বিষয় নিষ্করুণ ভাবে পৃথক— বঙ্গবাসীকে পূজাশেষে এ বার ফিরিতে হইবে করোনাচ্ছন্ন ভয়ার্ত বাস্তবে। সেই বাস্তবের কথা ভাবিতে গিয়া আজ এক নূতন আশঙ্কা, ঠাকুর বিসর্জনের সময়ে এই বৎসর মানুষ সংযত থাকিবে তো? এই বৎসরটি অবশ্য সর্বতো ভাবেই অন্যান্য বার অপেক্ষা আলাদা। বাস্তবিক, ২০২০ সালের দুর্গোৎসবকে ইতিহাস স্মরণে রাখিবে একটি অভূতপূর্ব ঘটনা হিসাবে। যে ভাবে আলোক-আড়ম্বর এড়াইয়া অধিকাংশ মানুষ ঘরে বসিয়া পূজা পালন করিলেন, তাহার দৃষ্টান্ত নিকট অতীতে কেন, দূর অতীতেও খুঁজিয়া পাওয়া দুষ্কর। অবশ্যই হাই কোর্টের কড়া নির্দেশ ছাড়া ইহা সম্ভব হইত না। সরকারি নেতারা যে ভাবে মিশ্র নির্দেশ দিতেছিলেন, তাহাতে এই সার্বিক সামাজিক আত্মসংযম সম্ভব হইত না। কিন্তু আদালতের রায়, এবং তাহার উপর ভিত্তি করিয়া প্রশাসনের ব্যবস্থাপনা— এই দুই মিলিয়া বাঙালির মহোৎসব শেষ পর্যন্ত মহাবিপদকে আগল দিবার চেষ্টা করিল— কম কথা নহে। এই পরিপ্রেক্ষিতেই বিসর্জনের দিনটি লইয়াও আলাদা ভাবনার প্রয়োজন আছে। এত ব্যতিক্রমী একটি পূজার সমাপনটিও ব্যতিক্রমী হইবে, সংযমের দৃষ্টান্ত হইয়া থাকিবে: এমনই আশা থাকিল।

করোনা-সঙ্কটকালে উৎসব নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা যে কত জরুরি, তাহা অন্যান্য রাজ্যেও সাম্প্রতিক কালে দেখা গিয়াছে। উত্তরপ্রদেশে পূজার উপর সীমা আরোপের কথা বলা হইয়াছিল, যদিও তাহা পরে পরিবর্তন করা হইয়াছে। দিল্লি প্রশাসন দুর্গাপূজার উপর কড়া সীমারেখা বলবৎ করিয়াছে। প্রসঙ্গত আলাদা ভাবে বিসর্জন প্রক্রিয়ার কথাও বলিতে হয়। কিছু দিন আগে মহারাষ্ট্রে গণেশচতুর্থীর ভাসানকে কেন্দ্র করিয়া কড়া নিষেধ জারি হইয়াছিল, যাহাতে কোনও বিসর্জন-শোভাযাত্রা না বাহির হয়, এবং বিসর্জন যেন নিজেদের পূজা-বেষ্টনীর মধ্যে সম্পন্ন হয়, প্রয়োজনে প্রতীকী বিসর্জন হয়। অর্থাৎ মহারাষ্ট্র বিষয়টিতে সামান্য কিছুটা আগাইয়া আছে। জলাশয় দূষণের কারণে সেখানে বেশ কিছু দিন ধরিয়াই বিসর্জনের উপর কড়াকড়ি চলিতেছিল, কৃত্রিম জলাশয়ের সহায়তায় বিপদ এড়াইবার চেষ্টা হইতেছিল। সে রাজ্যে ঠাকুর ভাসানের বিকল্প পদ্ধতি ইতিমধ্যেই আরম্ভ হইয়াছে, কেবল করোনাসঙ্কটের মুশকিল আসান হিসাবে তাহা শোনা যাইতেছে না।

পশ্চিমবঙ্গেও পূজোৎসবের অবসানে ভাসান অনেক দিন যাবৎ একটি পৃথক সঙ্কটে পরিণত হইয়াছে। বিপুল পরিমাণ মৃৎপ্রতিমার নিরঞ্জন লইয়া একটি সার্বিক পরিকল্পনা অসম্ভব জরুরি হইয়া পড়িয়াছে। পরিবেশবিদরা বহু বৎসর ধরিয়া বলিয়া আসিতেছেন, বৎসরের এই একটি উৎসবের কারণে যে পরিমাণ জলদূষণ রাজ্যব্যাপী ঘটিয়া থাকে, তাহা আর ‘আশঙ্কা’ নহে— ‘আতঙ্ক’ উদ্রেককারী। প্লাস্টিক হইতে শুরু করিয়া রাসায়নিক রং ও অন্যান্য বর্জ্য জলের সহিত মিশিতেছে, সারা বৎসরের সমস্ত দূষণরোধ প্রকল্পকে অর্থহীন করিয়া দিতেছে। ইহা একটি বৃহৎ সামাজিক অ-সচেতনতার বিষয়: আরও বড় সচেতনতা তৈরি করা ছাড়া এই বিপদ কাটানো যাইবে না। করোনাকাল দেখাইয়া গেল যে, প্রকৃতিকে অনবরত দূষিত করিয়া চলিলে, তাহার সীমা যৎপরোনাস্তি লঙ্ঘন করিলে, প্রকৃতি রুষ্ট হইয়া প্রতিশোধ লয়, মানুষের বিরাট সর্বনাশ নামিয়া আসে। ইহা একটি জরুরি শিক্ষা, যাহা ভাইরাসের ভ্যাকসিন বাহির হইলেই ভুলিয়া যাওয়া যাইবে না। বিসর্জন ও জলদূষণ যে আসলে মানবপরিবেশেরই দূষণ— আমরা মনে রাখিব তো?

অন্য বিষয়গুলি:

Durga Puja 2020 Water Pollution
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy