কেন্দ্রকে বিমাতা এবং রাজ্যকে সপত্নীসন্তান ভাবিলেও বলিতে হয়, এই মুহূর্তে কেন্দ্র-রাজ্য অশান্তির যে রূপটি পশ্চিমবঙ্গের জনগণ দেখিতেছে, তেমন নেহাত সস্তা কুনাট্যেই ঘটিয়া থাকে। সকলের সামনে দুই তরফ মারপিট করিবে, মাঝখান হইতে জ্ঞাতিগুষ্টিদেরও অনেক ক্ষতি হইবে, কিছুতে পাত্তা দেওয়া হইবে না—এতখানি স্থূলতায় যাইতে হয় না চিত্রনাট্যটি সামান্য উচ্চ মানের হইলেই। এই মুহূর্তে পশ্চিমবঙ্গ ও দিল্লির আদানপ্রদান কিন্তু অতীব স্থূল, নিম্ন মানের। কেন্দ্রীয় সরকার একটি পরীক্ষা লইয়াই ছাড়িবে, এবং রাজ্য সরকার সেই পরীক্ষার আগে লকডাউনও করিয়াই ছাড়িবে। মধ্যখান হইতে রবিবার নিট নামক পরীক্ষা দিতে যাইবে যে পরীক্ষার্থীরা, শুক্র ও শনিবারের লকডাউন পার হইয়া তাহারা সকলে কী ভাবে সেন্টারে পৌঁছাইবে— বোঝা ভার। কোভিড-কালীন যাতায়াতের অসুবিধার উপর আরও ভয়াবহ এই অতিরিক্ত লকডাউনের চাপ। কে তাহা ভাবে? রাজায় রাজায় যুদ্ধ চলিতেছে, ছাত্রছাত্রীদের দুর্দশা তো কেবল পার্শ্বিক ক্ষতিমাত্র।
বাস্তবিক, জেইই এবং নিট পরীক্ষাকে কেন্দ্র করিয়া যে কুনাট্য দেশে ঘটিতেছে, তাহা ঐতিহাসিক মাত্রায় পৌঁছাইয়াছে। করোনাভাইরাস সংক্রমণ এখন গোটা দেশে অভূতপূর্ব ভাবে বাড়িতেছে। কিন্তু কেন্দ্রীয় সরকার প্রমাণ করিতে ব্যতিব্যস্ত যে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হইয়া আসিতেছে, আনলক-পর্ব মাখনের ন্যায় মসৃণ কাটিতেছে। এত বড় সর্বভারতীয় পরীক্ষা পিছাইবার বিষয়ে কোনও অনুরোধই তাহারা শুনিবে না, পরীক্ষা হইবেই। মন্ত্রী বৈঠকে আসিতে পারিতেছেন না কোভিড-আতঙ্কে, কিন্তু কিশোর পরীক্ষার্থীরা ও তাহাদের অভিভাবকরা নাকি বাড়ি হইতে বহু দূরে পরীক্ষা সেন্টারে যাইতে পারিবেন, ছেলেমেয়েরা কয়েক ঘণ্টা মাস্কপরিহিত থাকিয়া পরীক্ষাও দিতে পারিবে! লক্ষ না করিয়া উপায় নাই, যে রাজ্যগুলি ইহাতে আপত্তি জানাইয়াছিল, সেগুলি সব অ-বিজেপিশাসিত। অর্থাৎ বিষয়টি কেন্দ্রীয় শাসক দল ও বিরোধী শাসিত রাজ্য সরকারের পাঞ্জা লড়ার ক্ষেত্র হইয়া উঠিয়াছে। গত কালও আদালতে শুনানি চলিয়াছে, অথচ জয়েন্ট এনট্রান্স ইতিমধ্যেই সমাপ্ত, নিট পরীক্ষাও সমাগত।
রাজ্য সরকারের বিবেচনা লইয়াও গভীর প্রশ্ন। কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে রাজ্য সরকারের প্রধান সমালোচনাই ছিল, ছাত্রছাত্রীদের যাতায়াত সমস্যা। ট্রেন বাস এখনও ঠিকমতো চলিতেছে না, ইহার মধ্যে পরীক্ষার্থী দূরবর্তী পরীক্ষাকেন্দ্রে যাইবে কী করিয়া? সঙ্গত সমালোচনা। কিন্তু পরীক্ষা যখন হইবেই, রাজ্যবাসীকে কিছু একটা উপায় বাহির করিতেও হইবে। তাই অনেকে স্থির করিয়াছিলেন এক দিন আগে গন্তব্যের কাছাকাছি পৌঁছাইয়া যাইবেন। রাজ্যব্যাপী লকডাউনে সেই পথও বন্ধ হইয়াছে। কেন্দ্র যখন সিদ্ধান্ত পাল্টাইবে না, রাজ্যের কি উচিত ছিল না, লকডাউনের তারিখ পুনর্বিবেচনা করা? জনগণের কথা ভাবিয়া কি পশ্চিমবঙ্গ সরকার এইটুকু পরিবর্তন করিতে পারিত না? বিশেষত যখন এক সপ্তাহে তিন-তিনটি দিন লকডাউনের পরিকল্পনা এমনিতেই সাধারণ বুদ্ধির অগম্য? নাকি, রাজ্য সরকার সমস্যা বাড়াইয়া প্রমাণ করিতেছে যে সমস্যা সত্যই ছিল ও আছে? নাগরিক কি কেবলই উলুখাগড়া— কেন্দ্র-রাজ্য দ্বৈরথের শিকার?
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy