Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪

উল্লেখযোগ্য

সমগ্র ঘটনাটির মধ্যে মার্কিন কংগ্রেসের প্রতিনিধিদের একটি নৈতিকতাবোধ স্পষ্ট যাহা অন্যান্য দেশের নিকট দৃষ্টান্তস্বরূপ হইতে পারে।

ডোনাল্ড ট্রাম্প।

ডোনাল্ড ট্রাম্প।

শেষ আপডেট: ১৮ জুলাই ২০১৯ ২৩:২২
Share: Save:

প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে ইতিহাস তাড়া করিয়া বেড়ায় বলিলে অত্যুক্তি হইবে কি? তাঁহার বিরুদ্ধে আনীত ইম্পিচমেন্ট প্রস্তাবটি, আর এক বার, ইতিহাসে নাম তুলিয়া লইল। ডেমোক্র্যাট কংগ্রেসম্যান আল গ্রিনের আনীত প্রস্তাব পরাজিত হওয়ায় স্বভাবতই ট্রাম্প অত্যন্ত খুশি। নর্থ ক্যারোলাইনায় সফররত প্রেসিডেন্ট জানাইয়াছেন, প্রস্তাব আনিবার বিষয়টিই ‘হাস্যকর’। ইহার আগে মাত্র দুই জন প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে ইম্পিচমেন্ট প্রস্তাব পাশ হইয়াছিল, প্রেসিডেন্ট অ্যান্ড্রু জনসন ও প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিন্টন, যদিও তাঁহাদের কাহাকেও শেষ পর্যন্ত পদ হইতে সরিতে হয় নাই কেননা সেনেটের ভোট ছিল অন্য রকম। মার্কিন প্রেসিডেন্ট সংবিধানের বিপক্ষে গিয়া কাজ করিলেই ইম্পিচমেন্ট প্রস্তাব আনা যায়, যাহার অর্থ, প্রস্তাব পাশ না হইলেও তাহা আনীত হইবার মধ্যেই প্রেসিডেন্টের বিস্তর অমর্যাদা রহিয়াছে। স্বভাবতই ট্রাম্প তাহা গ্রাহ্য করিতেছেন না।

ডেমোক্র্যাট কংগ্রেস-প্রতিনিধি ওকাসিয়ো কর্তেজ়-এর বিরুদ্ধে একটি জাতিবিদ্বেষী টুইট-মন্তব্য করিয়াছিলেন ট্রাম্প মহাশয়। মন্তব্যটির মূল কথা ছিল: কর্তেজ়-এর মতো সংখ্যালঘুরা যেন তাঁহাদের নিজেদের ‘স্থান’-এ ফিরিয়া যান। তাহার পরই ডেমোক্র্যাট প্রতিনিধিদের একাংশ খেপিয়া উঠিয়াছিলেন, এবং অসাংবিধানিক ব্যবহারের জন্য প্রেসিডেন্টের শাস্তি প্রাপ্য বলিয়া সিদ্ধান্ত করিয়াছিলেন। বাস্তবিক, ট্রাম্প গত তিন বৎসরে নিজের মানসিক সঙ্কীর্ণতার বহু পরিচয় দিয়াছেন, প্রেসিডেন্টের কেন, সাধারণ কংগ্রেস-প্রতিনিধির মর্যাদারেখাও তিনি মানিয়া চলেন নাই। তবে এ সব সত্ত্বেও যে ডেমোক্র্যাট প্রতিনিধিরা ইম্পিচমেন্ট-এর বিরুদ্ধে ভোট দিয়াছেন, তাঁহাদের মত— প্রেসিডেন্টকে শাস্তিদানের প্রচেষ্টা ব্যর্থ হইবার অর্থ এই নহে যে তাঁহার মানসিকতা সমর্থনীয়। ইহার অর্থ, এখনও তাঁহাকে পদ হইতে সরাইবার মতো যথেষ্ট হেতু মিলে নাই।

সমগ্র ঘটনাটির মধ্যে মার্কিন কংগ্রেসের প্রতিনিধিদের একটি নৈতিকতাবোধ স্পষ্ট যাহা অন্যান্য দেশের নিকট দৃষ্টান্তস্বরূপ হইতে পারে। প্রথমত, নানা অসাংবিধানিক কথা প্রকাশ্যে বলিবার পরও রাষ্ট্রপ্রধানের প্রতি আস্থা রাখিবার মধ্যে ‘সিস্টেম’ বা সাংবিধানিক ব্যবস্থার প্রতি এক গভীর মান্যতাবোধ আছে। গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে আসনে অধিষ্ঠিত যে প্রেসিডেন্ট, তাঁহাকে যথেষ্ট সুযোগ দিবার চেষ্টা রহিয়াছে। ভারতীয় গণতন্ত্রে কিন্তু জনপ্রতিনিধির এই সাংবিধানিক মান্যতা উধাও হইয়াছে বলিলেই চলে। সেখানে এক দলের ভোট-চিহ্নে দাঁড়াইয়া জিতিবার পর সহজেই অন্য দলে চলিয়া যাওয়া যায়, এবং কারণে অকারণে জনপ্রতিনিধিকে উচ্চতর নেতারা বহিষ্কৃত করিতে পারেন। দ্বিতীয়ত, ২০০-রও বেশি ডেমোক্র্যাট প্রতিনিধি যে হাউসে রহিয়াছেন, ইম্পিচমেন্ট ভোটের ৩৩২-৯৫ ফলই বলিয়া দেয় যে, রিপাবলিকান প্রেসিডেন্টের বিপক্ষে কিন্তু সকল ডেমোক্র্যাট ভোট দেন নাই। অর্থাৎ বিরুদ্ধ দলের প্রেসিডেন্ট হইলেও সিস্টেমের প্রতি সম্মানবশত প্রেসিডেন্টের উপর তাঁহারা আস্থা রাখিয়াছেন। হুইপ ও তাহার গ্রাহ্যতা লইয়া যখন ভারতের মতো দেশে আলোচনা চলিতেছে, তেমন সময় এই দৃষ্টান্তটিও আলাদা করিয়া খেয়াল করিবার মতো। ট্রাম্পের ইম্পিচমেন্ট পর্ব একটি উল্লেখযোগ্য অধ্যায় হইয়া রহিল, সন্দেহ নাই।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy