Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
Diwali 2020

সমাজ-বিরোধী

হয়তো বিস্ময়ের কিছুই নাই— এই আচরণেই তাঁহারা অভ্যস্ত, প্রতি বৎসর জানিয়া-শুনিয়াই শব্দের তাণ্ডবে মাতেন, অন্যদের জীবন দুর্বিষহ করিয়া তোলেন।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

শেষ আপডেট: ১৩ নভেম্বর ২০২০ ০১:৪১
Share: Save:

আদালত নিষিদ্ধ ঘোষণা করিয়াছে। চিকিৎসকরা বলিয়াছেন, বিপজ্জনক। কিন্তু কলিকাতায় তথা পশ্চিমবঙ্গে বাজি অদৃশ্য বা অশ্রাব্য হয় নাই। অন্য বছরের তুলনায় তাহার প্রকোপ কম। সপ্তাহান্তের উৎসবের দিনেও সম্ভবত কমই থাকিবে। কিন্তু ধোঁয়া ও ধ্বনি হইতে মুক্তি মিলিবে, এমন লক্ষণ নাই। গলদ একেবারে গোড়ায়। বাজির বেচাকেনা সম্পূর্ণ বন্ধ হওয়া উচিত ছিল, হয় নাই। হইবার কারণও নাই; প্রকাশ্যে বাজি বিক্রয় কমিলেও অপ্রকাশ্যে তাহা দিব্য চলিতেছে— মহানগরীর কেন্দ্রে বিক্রেতা অম্লানবদনে বলিতেছেন: আদালত বলিয়াছে তো কী, বছরকার দিনটিতে ছোটরা একটু বাজি ফাটাইবে না? ক্রেতাও ইতস্তত চাহিয়া কৃষ্ণবর্ণ থলিতে বাজি ভরিয়া ঘরে ফিরিতেছেন, বছরকার দিনে ছোটরা খুশি হইবে, তিনিও। সাংবাদিক এই বিষয়ে প্রশ্ন করিলে পুলিশের কর্তা অকম্পিত কণ্ঠে জানাইতেছেন, এমন কোনও খবর তাঁহাদের কাছে নাই।

খবরেরা বোধ করি থানা অবধি পৌঁছাইতে পারে নাই, তাহার পূর্বেই কোনও জটিল লেনদেনের কানাগলিতে পথ হারাইয়াছে। পুলিশের এক কানে খবর পৌঁছাইলেও কী ভাবে অন্য কান দিয়া সেই খবর বাহির হইয়া যায়, তাহার রহস্যও অবশ্য অজানা নহে। বাজি বন্ধ করিবার ব্যাপারে পুলিশ প্রশাসনের মুখ চাহিয়া লাভ নাই। আদালত কঠোর হইয়াছে, এইটুকুই ভরসা।

সেই ভরসায় বুক বাঁধিয়া অপেক্ষারত সুনাগরিক একটি প্রশ্নই করিতে পারেন। এমন পরিস্থিতিতেও যাঁহারা সগৌরবে বাজি পুড়াইতেছেন তাঁহাদের ন্যূনতম মনুষ্যত্বও কি অবশিষ্ট নাই? সমাজের প্রতি দায়বোধ বা আইন-আদালতকে মান্য করিবার দায়িত্বজ্ঞান নাহয় অবান্তর হইয়া গিয়াছে, কিন্তু নিজের কাছে নিজের সামান্যতম মর্যাদাও হারাইয়াছেন? তাঁহারা বিলক্ষণ জানেন যে, বাজির বিষ বাতাসে ছড়াইলে বহু মানুষ বিপন্ন হইবেন, অতিমারির মরসুমে সেই বিপদ অনেক বেশি। কোভিড সংক্রমণ এখনও প্রশমিত হয় নাই, উপরন্তু আসন্ন শীতের মাসগুলিতে তাহা নূতন করিয়া বাড়িবার আশঙ্কা, কলিকাতা তথা রাজ্যের বাতাসে এই ঋতুতে প্রবল দূষণ ঘটিয়া থাকে, সুতরাং সেই আশঙ্কা সমধিক।

এই পরিপ্রেক্ষিতেই বিচারক, বিশেষজ্ঞ ও সুনাগরিকরা বাজি না পুড়াইবার আদেশ বা আবেদন জানাইয়াছেন। তাহার পরেও যাঁহাদের আতশবাজিতে অগ্নিসংযোগ করিবার প্রবৃত্তি হয়, তাঁহাদের মনুষ্যত্বের তহবিলে আর যাহাই থাকুক, আত্মসম্মানের ধারণাটি ষোলো আনা অন্তর্হিত। নিজেকে সম্মান করিবার প্রথম শর্ত আপন সামাজিক অস্তিত্বের প্রতি শ্রদ্ধা, সমাজের সদস্য হিসাবে আপন ভূমিকা সম্পর্কে সচেতনতা। এই মানুষগুলির সমাজ-বিরোধী আচরণ সেই শর্তটিকেই লঙ্ঘন করিতেছে।

হয়তো বিস্ময়ের কিছুই নাই— এই আচরণেই তাঁহারা অভ্যস্ত, প্রতি বৎসর জানিয়া-শুনিয়াই শব্দের তাণ্ডবে মাতেন, অন্যদের জীবন দুর্বিষহ করিয়া তোলেন। কিন্তু এমন একটি ভয়ঙ্কর সময়েও নিছক ব্যক্তিগত উল্লাসের স্বার্থে তাঁহারা প্রতিবেশী ও সহনাগরিকদের জীবন বিপন্ন করিতে পিছপা নহেন— ইহা গভীর উদ্বেগের কারণ। একটি সমাজের নাগরিকরা আত্মমর্যাদাবোধ সম্পূর্ণ হারাইয়া ফেলিলে সেই সমাজের ভবিষ্যৎ সম্পূর্ণ অন্ধকার হইয়া যায়। পশ্চিমবঙ্গের সমাজে সেই অন্ধকার নানা দিক হইতেই ঘনাইয়া আসিতেছে। কোনও দীপাবলির তাহা ঘুচাইবার সাধ্য নাই।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy