Advertisement
০২ অক্টোবর ২০২৪
রাহুল জানিয়ে দিয়েছেন, তিনিই মোদীর বিরুদ্ধে প্রধান প্রতিবাদ

তুচ্ছ করার আর জো নেই

অনাস্থা প্রস্তাবের ভোটাভুটিতে নরেন্দ্র মোদী যে জিতবেন সেটা নিয়ে তো কোনও ধন্দ ছিল না। ময়না তদন্তের প্রশ্ন ছিল সংসদ ভবনে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে রাহুল গাঁধীর অপ্রত্যাশিত ঐতিহাসিক আলিঙ্গন নিয়ে।

রাহুল গাঁধী লোকসভা অধিবেশনে।

রাহুল গাঁধী লোকসভা অধিবেশনে।

জয়ন্ত ঘোষাল
শেষ আপডেট: ২৫ জুলাই ২০১৮ ০০:০০
Share: Save:

ময়না তদন্ত চলছে। অনাস্থা প্রস্তাবের ভোটাভুটিতে নরেন্দ্র মোদী যে জিতবেন সেটা নিয়ে তো কোনও ধন্দ ছিল না। ময়না তদন্তের প্রশ্ন ছিল সংসদ ভবনে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে রাহুল গাঁধীর অপ্রত্যাশিত ঐতিহাসিক আলিঙ্গন নিয়ে। তাতেও উচিত অনুচিতের যুক্তি তক্কো গপ্পো ছাপিয়ে উঠে একটি সহজ সরল সত্য প্রতিষ্ঠিত হল।

কী সেটা?

সেটা হল, ২০১৯-এর লোকসভা নির্বাচনের লড়াই নরেন্দ্র মোদী বনাম রাহুল গাঁধীর। ক’দিন আগেও বিজেপি এই রাহুল গাঁধীকে এক আনা রাজনৈতিক গুরুত্ব দিতে রাজি ছিল না। বলা হত পাপ্পু। পাপ্পু পাস নহী হোতা হ্যায়! সেখানে রাহুল নিজেই বলেছেন, তোমরা যা বলো তাই বলো, আমার লাগে না মনে। এবং বলেছেন, হিংসার বদলে হিংসা নয়, হিংসার বদলে প্রেম। এ তো মুন্নাভাইয়ের গাঁধীগিরি। আলিঙ্গনের তো বিরোধিতা করা যায় না! বিজেপি নেতারা এখন বলছেন, পাপ্পু নামক চরিত্র থেকে রাহুল বেরিয়ে এসেছেন। নতুন রাহুল নিজেকে নরেন্দ্র মোদীর প্রধান প্রতিপক্ষ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে সক্ষম হয়েছেন। ২০১৪ সালে লোকসভা নির্বাচনের আগে রাহুল আমাকে একান্ত আলোচনায় বলেছিলেন, নরেন্দ্র মোদী নামক এক হলোগ্রামের সঙ্গে লড়ছি আমরা, আমি একটা দলের জেনারেল, কর্মীদের কাছে আমাকে বলতেই হবে, আমি জিতব! সে দিনই আমার মনে হয়েছিল আর যা-ই হোক এই ছেলেটা পাপ্পু নয়! এত দিনে সেটা প্রতিষ্ঠিত হল।

তখন সবে মোদীর যাত্রা শুরু হয়েছে। সেই আদিপর্বে রাহুল একটা মন্তব্য করেছিলেন— এই সরকারটা স্যুট-বুটের সরকার! ব্যস। ওই একটা মন্তব্য মোদী সরকারের রাজনৈতিক অর্থনীতিটাই বদলে দিয়েছিল। গরিবের সরকার হওয়ার জন্য মোদী রাস্তাই বদল করে ফেললেন। রাহুল কিন্তু সে দিন চিৎকার করে পারিষদগণকে ডেকে নিজের ঢাক নিজে পিটিয়ে বলেননি। নিজেকে চ্যালেঞ্জার হিসাবে জাহির করার কোনও চেষ্টাই করেননি। কিন্তু এই অনাস্থা প্রস্তাবের পর যদি প্রশ্ন করা হয়, মোদীর বিরুদ্ধে রাহুল কি সিরিয়াস চ্যালেঞ্জার? শুক্রবার অনাস্থা ভোটের পর জবাব কিন্তু একটাই। হ্যাঁ, রাহুল গাঁধীই মোদীর প্রধান রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ। সংসদে যে কংগ্রেস কম সংখ্যার জন্য বিরোধী আসনের মর্যাদা পর্যন্ত পায়নি, সেই শতাধিক বর্ষের প্রাচীন কংগ্রেসের সভাপতি মোদী-বিরোধী ফ্রন্টের প্রধান নেতা হিসেবে নিজের দাবি জানালেন। বিজেপির পক্ষে মোট কত ভোট আর বিরোধী শিবিরের ভোট কত, সে সব তো দুনিয়ার অজানা ছিল না। সত্যি কথা বলছি জানেন, আমারও অভিমত ছিল, লোকসভা ভোট যখন দুয়ারে কড়া নাড়ছে তখন কংগ্রেসের কী দরকার ছিল এই অনাস্থা প্রস্তাব নিয়ে হইচই করার? এ তো কংগ্রেস চন্দ্রবাবুর ফাঁদেই পা দিচ্ছে! মোদী তো বিপুল ভোটে জিতবেন! ভোটের আগেই সেই বিপুল জয় তো তাঁকেই জোর দেবে। এর পর সে দিন যখন রাহুল বলতে উঠলেন তখন তাঁর কথা শুনছি আর ভাবছি, বিজেপি নেতারা কি বুঝতে পারছেন রাহুল কী বলছেন? সে দিন রাহুলের বক্তব্য, বক্তব্যের ভিতরে গভীর ব্যঙ্গ, হিন্দুত্ব নামক বিজেপির তথাকথিত কাউন্টারন্যারাটিভ-এর বিরোধিতা, হিন্দু ধর্ম আর হিন্দুত্বের ফারাক বুঝিয়ে দেওয়া— মারাত্মক! যখন রাজস্থানের অলওয়ারে গোরক্ষক বাহিনীর তাণ্ডব চলছে, তখন বিজেপির সাম্প্রদায়িকতাবাদের তীব্র সমালোচনা করে ব্যক্তিগত ভাবে প্রধানমন্ত্রীকে আলিঙ্গন! @হিংসার বদলে হিংসা নয়, হিংসার বদলে প্রেম।@ অশোক থেকে আকবর। বুদ্ধ থেকে চৈতন্য। এই সংলাপের পর আর যা-ই হোক, বিজেপির কোনও নেতার পক্ষে তাঁকে আর পাপ্পু বলাটা কি সম্ভব?

সে দিন সংসদের অধিবেশন শেষ হতে হতে বেশ রাত হয়ে গেল। কিন্তু ভোটাভুটির আগেই বিজেপির ট্রল ক্লাব ঝাঁপিয়ে পড়েছে হোয়াটসঅ্যাপ, টুইটার, ফেসবুকে এটাই প্রমাণ করতে যে রাহুলের এই যাত্রাপালায় পরিণতমনস্কতার নজির নেই, পাপ্পুর ভিতর থেকে রাহুল নিজেকে বার করে আনতে গিয়ে ভিতরের পাপ্পু থেকেই গিয়েছেন। বিজেপি এ প্রচার বিগত পাঁচ দিন ধরে করেই চলেছে। করেই চলেছে। আর রাহুল সে সবে কর্ণপাত না করে রাফালের চুক্তি নিয়ে দুর্নীতি স্বীকার না করে সংসদে অসত্য বলছেন— এই অভিযোগ তুলে প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে অধিকারভঙ্গের প্রস্তাব আনার হুমকি দিচ্ছেন। এত সক্রিয়, এত আক্রমণাত্মক রাহুলকে নরেন্দ্র মোদী দেখেননি গত চার বছরে।

সে দিন আলিঙ্গনের পর নিজের আসনে বসেই চোখ মারাটা আমার পছন্দ হয়নি। নবীন প্রজন্মের এক সাংবাদিক বললেন, আলিঙ্গনের মধ্যেও তো ব্যঙ্গ ছিল। মা যাঁকে বলেছিলেন মওত কা সওদাগর, তাঁর গলা জড়িয়ে বলা ‘তোমাকেও ভালবাসি’! ওই সাংবাদিককে বললাম, কিন্তু এতেই রাজনীতির কৌশলটাও রাহুল ঘুরিয়ে দিয়েছেন। কারণ এই আলিঙ্গনের ফলে মোদীর পক্ষে মেরুকরণের রাজনীতি করাটা তুলনায় মুশকিল হতে পারে। সেই সাংবাদিককে সে দিন আরও বললাম যে, আমি রক্ষণশীল লোক। তবে একটা কথা আমিও মানছি— ভারতীয় রাজনীতির বহু জ্যাঠামশাই আর জেঠিমাদের সামনে ৪৮ বছরের যুবক যদি কিছু ভুলভ্রান্তি করেও থাকেন তাতে মহাভারত অশুদ্ধ হয়ে যায় না। কত ভোটে মোদী জিতেছেন সেটা যেমন সে দিন অবান্তর ছিল, বক্তৃতাতেও কে ফার্স্ট বয় সেটাও কোনও বিতর্কের বিষয় ছিল না। নরেন্দ্র মোদী যে দারুণ কমিউনিকেটর সে কথা আমরা সবাই জানি। নরেন্দ্র মোদী কোনও অভিজাত পরিবার থেকে আসা মানুষ নন, খুব নিচুতলা থেকে ধাপে ধাপে ক্ষমতার সোপানে উত্থিত। ক্যারিশমা নামক শব্দটি মোদীর ব্যক্তিত্বের সঙ্গে কতখানি যুক্ত তা আমরা ২০১৪ সালে দেখেছি। কিন্তু আর মাত্র আট মাস পরেই সরকারটা যখন তদারকি সরকার হয়ে যাবে তখন আর বক্তৃতা নয়, মানুষ বিচার করবে এ সরকার গত পাঁচ বছরে আমাদের জন্য কী কী করেছে?

রাহুল ঝুঁকি নিয়েই আক্রমণাত্মক হয়েছেন। বড় ঝুঁকি। রাহুল ঝুঁকি নিচ্ছেন কার বিরুদ্ধে? নরেন্দ্র মোদীর বিরুদ্ধে, যাঁর দলের সাংসদ এখনও ২৭০ আর রাহুলের ৪৪। তবু শক্তিশালী প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে ‘কনট্যাক্ট স্পোর্ট’-এ গিয়ে নকআউট হননি রাহুল গাঁধী। বরং জিতেছেন।

মোদী গাঁধী পরিবারের প্রতিনিধির নাম পর্যন্ত নিতেন না। জনসভায় দাঁড়িয়ে রাহুলকে সম্বোধন করতেন নামদার বলে। সেখানে রাহুল অস্পৃশ্যতার রাজনীতিকে দূরে সরিয়ে আলিঙ্গনের রাজনীতি করে বিপদে ফেলেছেন মোদীকে। আমুল-এর বিজ্ঞাপনে বলা হল: এমব্রেস না এম্ব্যারাসমেন্ট! রাহুল জানেন নিশ্চয়ই, মোদীর সঙ্গে যে খেলাটি তিনি খেলেছেন, মোদী সেই ক্রীড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য। শিরোনাম তৈরির মহানায়ক। কাজেই তিনিও এর প্রতিশোধ নেওয়ার চেষ্টা করবেন না, তা হতেই পারে না। কিন্তু অনাস্থা প্রস্তাবের রঙ্গমঞ্চে রাহুল দুনিয়াকে জানিয়ে দিয়েছেন, তিনিই মোদীর বিরুদ্ধে প্রধান প্রতিবাদ! প্রধান চ্যালেঞ্জার।

ময়না তদন্ত চলছে। অনাস্থা প্রস্তাবের ভোটাভুটিতে নরেন্দ্র মোদী যে জিতবেন সেটা নিয়ে তো কোনও ধন্দ ছিল না। ময়না তদন্তের প্রশ্ন ছিল সংসদ ভবনে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে রাহুল গাঁধীর অপ্রত্যাশিত ঐতিহাসিক আলিঙ্গন নিয়ে। তাতেও উচিত অনুচিতের যুক্তি তক্কো গপ্পো ছাপিয়ে উঠে একটি সহজ সরল সত্য প্রতিষ্ঠিত হল।

কী সেটা?

সেটা হল, ২০১৯-এর লোকসভা নির্বাচনের লড়াই নরেন্দ্র মোদী বনাম রাহুল গাঁধীর। ক’দিন আগেও বিজেপি এই রাহুল গাঁধীকে এক আনা রাজনৈতিক গুরুত্ব দিতে রাজি ছিল না। বলা হত পাপ্পু। পাপ্পু পাস নহী হোতা হ্যায়! সেখানে রাহুল নিজেই বলেছেন, তোমরা যা বলো তাই বলো, আমার লাগে না মনে। এবং বলেছেন, হিংসার বদলে হিংসা নয়, হিংসার বদলে প্রেম। এ তো মুন্নাভাইয়ের গাঁধীগিরি। আলিঙ্গনের তো বিরোধিতা করা যায় না! বিজেপি নেতারা এখন বলছেন, পাপ্পু নামক চরিত্র থেকে রাহুল বেরিয়ে এসেছেন। নতুন রাহুল নিজেকে নরেন্দ্র মোদীর প্রধান প্রতিপক্ষ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে সক্ষম হয়েছেন। ২০১৪ সালে লোকসভা নির্বাচনের আগে রাহুল আমাকে একান্ত আলোচনায় বলেছিলেন, নরেন্দ্র মোদী নামক এক হলোগ্রামের সঙ্গে লড়ছি আমরা, আমি একটা দলের জেনারেল, কর্মীদের কাছে আমাকে বলতেই হবে, আমি জিতব! সে দিনই আমার মনে হয়েছিল আর যা-ই হোক এই ছেলেটা পাপ্পু নয়! এত দিনে সেটা প্রতিষ্ঠিত হল।

তখন সবে মোদীর যাত্রা শুরু হয়েছে। সেই আদিপর্বে রাহুল একটা মন্তব্য করেছিলেন— এই সরকারটা স্যুট-বুটের সরকার! ব্যস। ওই একটা মন্তব্য মোদী সরকারের রাজনৈতিক অর্থনীতিটাই বদলে দিয়েছিল। গরিবের সরকার হওয়ার জন্য মোদী রাস্তাই বদল করে ফেললেন। রাহুল কিন্তু সে দিন চিৎকার করে পারিষদগণকে ডেকে নিজের ঢাক নিজে পিটিয়ে বলেননি। নিজেকে চ্যালেঞ্জার হিসাবে জাহির করার কোনও চেষ্টাই করেননি। কিন্তু এই অনাস্থা প্রস্তাবের পর যদি প্রশ্ন করা হয়, মোদীর বিরুদ্ধে রাহুল কি সিরিয়াস চ্যালেঞ্জার? শুক্রবার অনাস্থা ভোটের পর জবাব কিন্তু একটাই। হ্যাঁ, রাহুল গাঁধীই মোদীর প্রধান রাজনৈতিক প্রতিপক্ষ। সংসদে যে কংগ্রেস কম সংখ্যার জন্য বিরোধী আসনের মর্যাদা পর্যন্ত পায়নি, সেই শতাধিক বর্ষের প্রাচীন কংগ্রেসের সভাপতি মোদী-বিরোধী ফ্রন্টের প্রধান নেতা হিসেবে নিজের দাবি জানালেন। বিজেপির পক্ষে মোট কত ভোট আর বিরোধী শিবিরের ভোট কত, সে সব তো দুনিয়ার অজানা ছিল না। সত্যি কথা বলছি জানেন, আমারও অভিমত ছিল, লোকসভা ভোট যখন দুয়ারে কড়া নাড়ছে তখন কংগ্রেসের কী দরকার ছিল এই অনাস্থা প্রস্তাব নিয়ে হইচই করার? এ তো কংগ্রেস চন্দ্রবাবুর ফাঁদেই পা দিচ্ছে! মোদী তো বিপুল ভোটে জিতবেন! ভোটের আগেই সেই বিপুল জয় তো তাঁকেই জোর দেবে। এর পর সে দিন যখন রাহুল বলতে উঠলেন তখন তাঁর কথা শুনছি আর ভাবছি, বিজেপি নেতারা কি বুঝতে পারছেন রাহুল কী বলছেন? সে দিন রাহুলের বক্তব্য, বক্তব্যের ভিতরে গভীর ব্যঙ্গ, হিন্দুত্ব নামক বিজেপির তথাকথিত কাউন্টারন্যারাটিভ-এর বিরোধিতা, হিন্দু ধর্ম আর হিন্দুত্বের ফারাক বুঝিয়ে দেওয়া— মারাত্মক! যখন রাজস্থানের অলওয়ারে গোরক্ষক বাহিনীর তাণ্ডব চলছে, তখন বিজেপির সাম্প্রদায়িকতাবাদের তীব্র সমালোচনা করে ব্যক্তিগত ভাবে প্রধানমন্ত্রীকে আলিঙ্গন! @হিংসার বদলে হিংসা নয়, হিংসার বদলে প্রেম।@ অশোক থেকে আকবর। বুদ্ধ থেকে চৈতন্য। এই সংলাপের পর আর যা-ই হোক, বিজেপির কোনও নেতার পক্ষে তাঁকে আর পাপ্পু বলাটা কি সম্ভব?

সে দিন সংসদের অধিবেশন শেষ হতে হতে বেশ রাত হয়ে গেল। কিন্তু ভোটাভুটির আগেই বিজেপির ট্রল ক্লাব ঝাঁপিয়ে পড়েছে হোয়াটসঅ্যাপ, টুইটার, ফেসবুকে এটাই প্রমাণ করতে যে রাহুলের এই যাত্রাপালায় পরিণতমনস্কতার নজির নেই, পাপ্পুর ভিতর থেকে রাহুল নিজেকে বার করে আনতে গিয়ে ভিতরের পাপ্পু থেকেই গিয়েছেন। বিজেপি এ প্রচার বিগত পাঁচ দিন ধরে করেই চলেছে। করেই চলেছে। আর রাহুল সে সবে কর্ণপাত না করে রাফালের চুক্তি নিয়ে দুর্নীতি স্বীকার না করে সংসদে অসত্য বলছেন— এই অভিযোগ তুলে প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে অধিকারভঙ্গের প্রস্তাব আনার হুমকি দিচ্ছেন। এত সক্রিয়, এত আক্রমণাত্মক রাহুলকে নরেন্দ্র মোদী দেখেননি গত চার বছরে।

সে দিন আলিঙ্গনের পর নিজের আসনে বসেই চোখ মারাটা আমার পছন্দ হয়নি। নবীন প্রজন্মের এক সাংবাদিক বললেন, আলিঙ্গনের মধ্যেও তো ব্যঙ্গ ছিল। মা যাঁকে বলেছিলেন মওত কা সওদাগর, তাঁর গলা জড়িয়ে বলা ‘তোমাকেও ভালবাসি’! ওই সাংবাদিককে বললাম, কিন্তু এতেই রাজনীতির কৌশলটাও রাহুল ঘুরিয়ে দিয়েছেন। কারণ এই আলিঙ্গনের ফলে মোদীর পক্ষে মেরুকরণের রাজনীতি করাটা তুলনায় মুশকিল হতে পারে। সেই সাংবাদিককে সে দিন আরও বললাম যে, আমি রক্ষণশীল লোক। তবে একটা কথা আমিও মানছি— ভারতীয় রাজনীতির বহু জ্যাঠামশাই আর জেঠিমাদের সামনে ৪৮ বছরের যুবক যদি কিছু ভুলভ্রান্তি করেও থাকেন তাতে মহাভারত অশুদ্ধ হয়ে যায় না। কত ভোটে মোদী জিতেছেন সেটা যেমন সে দিন অবান্তর ছিল, বক্তৃতাতেও কে ফার্স্ট বয় সেটাও কোনও বিতর্কের বিষয় ছিল না। নরেন্দ্র মোদী যে দারুণ কমিউনিকেটর সে কথা আমরা সবাই জানি। নরেন্দ্র মোদী কোনও অভিজাত পরিবার থেকে আসা মানুষ নন, খুব নিচুতলা থেকে ধাপে ধাপে ক্ষমতার সোপানে উত্থিত। ক্যারিশমা নামক শব্দটি মোদীর ব্যক্তিত্বের সঙ্গে কতখানি যুক্ত তা আমরা ২০১৪ সালে দেখেছি। কিন্তু আর মাত্র আট মাস পরেই সরকারটা যখন তদারকি সরকার হয়ে যাবে তখন আর বক্তৃতা নয়, মানুষ বিচার করবে এ সরকার গত পাঁচ বছরে আমাদের জন্য কী কী করেছে?

রাহুল ঝুঁকি নিয়েই আক্রমণাত্মক হয়েছেন। বড় ঝুঁকি। রাহুল ঝুঁকি নিচ্ছেন কার বিরুদ্ধে? নরেন্দ্র মোদীর বিরুদ্ধে, যাঁর দলের সাংসদ এখনও ২৭০ আর রাহুলের ৪৪। তবু শক্তিশালী প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে ‘কনট্যাক্ট স্পোর্ট’-এ গিয়ে নকআউট হননি রাহুল গাঁধী। বরং জিতেছেন।

মোদী গাঁধী পরিবারের প্রতিনিধির নাম পর্যন্ত নিতেন না। জনসভায় দাঁড়িয়ে রাহুলকে সম্বোধন করতেন নামদার বলে। সেখানে রাহুল অস্পৃশ্যতার রাজনীতিকে দূরে সরিয়ে আলিঙ্গনের রাজনীতি করে বিপদে ফেলেছেন মোদীকে। আমুল-এর বিজ্ঞাপনে বলা হল: এমব্রেস না এম্ব্যারাসমেন্ট! রাহুল জানেন নিশ্চয়ই, মোদীর সঙ্গে যে খেলাটি তিনি খেলেছেন, মোদী সেই ক্রীড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য। শিরোনাম তৈরির মহানায়ক। কাজেই তিনিও এর প্রতিশোধ নেওয়ার চেষ্টা করবেন না, তা হতেই পারে না। কিন্তু অনাস্থা প্রস্তাবের রঙ্গমঞ্চে রাহুল দুনিয়াকে জানিয়ে দিয়েছেন, তিনিই মোদীর বিরুদ্ধে প্রধান প্রতিবাদ! প্রধান চ্যালেঞ্জার।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE