ছবি: সংগৃহীত
পুজো শেষ। তার পরে দফায় দফায় নেমেছে বৃষ্টি। কখনও ঘূর্ণাবর্ত, কখনও বা ঘূর্ণিঝড় বুলবুল। মুষলধারে বৃষ্টি নয়। এক নাগাড়ে ঝিরঝিরে বৃষ্টি। এই সে দিন পুজো শেষ হয়েছে। মণ্ডপ গুটিয়ে নেওয়া হয়েছে ইতিমধ্যে। কিন্তু মাটিতে যে গর্ত খুঁড়ে বাঁশ কিংবা খুঁটি পোঁতা হয়েছিল, সেই ঘা সারানোর সময় হয়নি কারও। ওই গর্তে জমেছে জল।
কোথাও ভাঙা মণ্ডপের বাতিল সামগ্রী ডাঁই হয়ে পড়ে আছে মণ্ডপের কাছে। প্লাইউডের পরিত্যক্ত টুকরো, পরিত্যক্ত মালসা, ঘট, প্লাস্টিকের কাপ ইত্যাদি। তাতে জমেছে বৃষ্টির জল। আর সেই পরিষ্কার জমা জলে জন্মেছে মশা। মুখ্যমন্ত্রী নিজেই স্বীকার করেছেন, পুজোর সময় ডেঙ্গি অভিযানে ঢিলেমি ছিল। তাঁর মতে, রাজ্যে হঠাৎ করে ডেঙ্গি ভয়াবহ আকার ধারণ করার অন্যতম কারণ সেটাই।
কিন্তু এখানে প্রশ্ন দু’টি। যে ক্লাবগুলিকে রাজ্য সরকার বছরে এক লক্ষ টাকা করে অনুদান দিচ্ছে, তাদের কি কোনও দায়িত্বই নেই? সরকার ক্লাবগুলিকে ওই টাকা দেয় খেলাধুলার উন্নতির জন্য। বাস্তবে খেলাধুলা কিছুই হচ্ছে না। ক্লাবে মার্বেল বসছে। একতলা ক্লাব দোতলা হচ্ছে। বিয়ে, জন্মদিন, অন্নপ্রাশন, শ্রাদ্ধে ভাড়া খাটানো হচ্ছে। অর্থবান হচ্ছে ক্লাব।
অথচ ডেঙ্গি, ম্যালেরিয়া নিয়ন্ত্রণে ক্লাবগুলির ভূমিকা শূন্য। কেন ক্লাবগুলিকে এর জন্য দায়বদ্ধ করবে না রাজ্য সরকার? কেনই বা বরাদ্দ টাকা থেকে জরিমানা হিসেবে টাকা কেটে নেবে না রাজ্য? মুখ্যমন্ত্রী কেনই বা পাড়ায় পাড়ায় ডেঙ্গি-ম্যালেরিয়ার প্রচারে দায়িত্ব দেবেন না? অপ্রতুল সরকারি পরিকাঠামোয় ক্লাবগুলি হয়ে উঠতে পারে ডেঙ্গি-ম্যালেরিয়া ও অন্য সংক্রামক রোগ প্রতিরোধে সরকারি প্রচারের মূল হাতিয়ার।
এ বার আসি পুজো কমিটিগুলির কথায়। পুজোর জন্য পুজো কমিটিগুলিকে ঢালাও অনুদান দেওয়া হয়। তা ছাড়া কর ও বিদ্যুতের বিলে আছে প্রচুর ছাড়। এর উপরে পুরসভার এবং রাজ্য সরকারের ৫০ হাজার টাকার পুরস্কার রয়েছে।
কিন্তু কোনও পুজো কমিটিকেই ডেঙ্গি, ম্যালেরিয়া নিয়ে অভিযানে তেমন সক্রিয় হতে দেখা যায় না। মণ্ডপের খোঁড়া গর্ত বোজানোই হয় না অনেক ক্ষেত্রে। সেখানে জল জমে মশার বংশবৃদ্ধি ঘটে। ভাঙা মণ্ডপ পড়ে থাকে এক দিকে। সেখানে জমে জল। সে দিকে পুজো কমিটিগুলির নজরই নেই। কেন ওই সব পুজো কমিটির কাছ থেকে জরিমানা আদায় করবে না পুরসভা বা রাজ্য প্রশাসন? বেশ কিছু পুজোয় পুরসভা এবং রাজ্য স্বাস্থ্য দফতর ডেঙ্গি-ম্যালেরিয়া নিয়ে স্টল দেয়। সেগুলি এক ধরনের বিজ্ঞাপন। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই টাকা পায় পুজো কমিটিগুলি। ওই সব স্টলেই দেখেছি, মশা ঘুরে বেড়াচ্ছে। খাবারের স্টলে ভিড় উপচে পড়ছে। স্বাস্থ্য সচেতনতার স্টলে ভিড় কই? মশার কামড় খেয়ে দায়িত্ব সামলাচ্ছেন গুটিকয়েক কর্মী। সরকারি টাকাই শুধু নষ্ট হচ্ছে। কাজের কাজ হচ্ছে কই?
দশ-বারো বছর আগে একটা সময় ছিল, যখন বেহালার যে-সব ক্লাব পুজো করে, তারা সারা বছর ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে রক্তদানের ক্যাম্প করত। প্রতিটি ক্লাবের কাছে, তাদের এলাকায় কোন কোন রক্তদাতার ব্লাড গ্রুপ কী— তার তালিকা, তাঁদের ঠিকানা ও যোগাযোগ করার নম্বর থাকত। সেই তালিকা প্রতিটি ক্লাব নিজেদের মধ্যে আদান-প্রদান করত। কোনও এলাকার কারও প্রয়োজন হলে, ওই তালিকা কাজে লাগত। তখন কিন্তু ক্লাবগুলিকে এমন অনুদান দিত না সরকার। ক্লাবগুলি এ কাজটা করত নিজেদের দায়বদ্ধতা থেকে।
এখন সেই ব্যবস্থাটা বেহালায় আছে কি না, জানি না। তবে ক্লাবগুলিকে যে জনস্বাস্থ্যের ব্যাপারে প্রত্যক্ষ ভূমিকায় নামানো যায়, তার সম্যক ধারণা সে সময় হয়েছিল। আর এখন ক্লাবের জন্য সরকারি অনুদান রয়েছে। সরকারের টাকা নেবে, কিন্তু এলাকার মানুষের জন্য কিছু করবে না— এটা কত দিন চলতে পারে, সেই প্রশ্ন ওঠার সময় এসে গিয়েছে। সরকার বিষয়টি ভেবে দেখবে কি?
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy