Advertisement
২০ নভেম্বর ২০২৪

যে ধ্রুবপদ

যুযুধান দুই পক্ষ। নার্সিং পড়ুয়ার দল এক দিকে, কুকুর তথা পশুপ্রেমীবৃন্দ আর এক দিকে। বাকিরা দুইটি পক্ষে একে একে যোগ দিতেছেন। আর সব মিলাইয়া সমগ্র সমাজ দুই ভাগে বিভক্ত হইতেছে।

অভিযুক্ত: সোমা বর্মণ (উপরে) ও মৌটুসি মণ্ডল। ভিডিয়ো-চিত্র

অভিযুক্ত: সোমা বর্মণ (উপরে) ও মৌটুসি মণ্ডল। ভিডিয়ো-চিত্র

শেষ আপডেট: ১৯ জানুয়ারি ২০১৯ ০০:০০
Share: Save:

যুযুধান দুই পক্ষ। নার্সিং পড়ুয়ার দল এক দিকে, কুকুর তথা পশুপ্রেমীবৃন্দ আর এক দিকে। বাকিরা দুইটি পক্ষে একে একে যোগ দিতেছেন। আর সব মিলাইয়া সমগ্র সমাজ দুই ভাগে বিভক্ত হইতেছে। দুই দিকেরই অভিযোগ, অপর পক্ষ ভয়ানক রকমের অসংবেদনশীল। পশুপ্রেমী শিবির এখন দুই নার্সিং ছাত্রীকে এনআরএস কলেজ হইতে বহিষ্কারের দাবি তুলিয়াছে। স্বয়ং মন্ত্রী মেনকা গাঁধী হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে দূরভাষে জানাইয়াছেন, এখনই ইহাদের বহিষ্কার করিতে হইবে নতুবা এই নার্সিং প্রশিক্ষণ কলেজের ‘রেজিস্ট্রেশন’ বাতিল হইতে পারে। কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর আদেশ তথা হুমকির পর ছাত্রীদের ভবিষ্যৎ কোন দিকে যাইতেছে, বলিয়া দিতে হয় না। মুশকিল পাকাইতেছেন অন্যান্য পড়ুয়ারা। তাঁহারা দাবি তুলিয়াছেন যে পড়ুয়াদের পড়িবার সুযোগ হইতে বঞ্চিত করা চলিবে না। বলিয়াছেন, নার্সিং সুপারকে ঘটনার দায়িত্ব লইতে হইবে, কেননা, হাসপাতাল চত্বরে গত কয়েক বৎসরে বহু পড়ুয়াকে কুকুর কামড়াইবার ফলে সুপারই নাকি প্রস্তাব করিয়াছিলেন, কুকুরদের বিষ দিয়া মারা হউক। শোনা যাইতেছে, নার্সিং সংগঠন ও পড়ুয়াদের প্রতিনিধি হিসাবে যাঁহারা দেখা দিতেছেন, তাঁহারা নাকি শাসকবিরোধী। আর দুই পড়ুয়াকে যে হেতু পুলিশ জেলে রাখিয়াছে, বোঝাই যাইতেছে কুকুরপন্থীরা ভিড় জমাইতেছে শাসক দলের দিকে। এই যদি বাহিরের সমাজের চেহারা হয়, সমাজের ভিতরমহল অর্থাৎ সোশ্যাল মিডিয়ার রূপটি কদর্যতর। উত্তাল সেই পরিসরে বস্তুত যুদ্ধ বাধিয়াই গিয়াছে। দিবারাত্রি দুই পক্ষ পরস্পরের প্রতি গালিগালাজ ও আক্রমণের বন্যা ছুটাইতেছে। অর্থাৎ, পশ্চিমবঙ্গে যে কোনও ঘটনাই শেষ পর্যন্ত যে ধ্রুবপদে গিয়া পৌঁছায়, সেই শাসক-বিরোধী চাপানউতোর ও সংঘর্ষে বিদীর্ণ হইতেছে মাঘের মেঘাচ্ছন্ন আকাশ।

ইহার পাশাপাশি আর এক চিত্র। যে দুই জন ভাবী নার্সকে লইয়া এত ধুন্ধুমার, তাঁহারা কিন্তু জেলে বসিয়া আছেন। নানা ছোটখাটো শর্ত পূর্ণ না হইবার জন্য তাঁহাদের জামিন মঞ্জুর হয় নাই। জামিন গণতান্ত্রিক দেশের একটি মূল্যবান অধিকার। কিছু চরম অপরাধ বাদ দিয়া অন্যান্য ক্ষেত্রে অপরাধ প্রমাণিত না হওয়া পর্যন্ত গণতন্ত্রে জামিনলাভ অধিকার বলিয়াই গণ্য হয়। কিন্তু সামান্য কতকগুলি শর্ত পূরণের ব্যবস্থা না হওয়ায় সেই অধিকারে অন্বিত হইতে পারিতেছেন না দুই তরুণী। পশুপ্রেমীরা সম্ভবত এই পরিস্থিতিতে খুশি: পড়ুয়াদ্বয় চিরবন্দি থাকিয়া যান, কুকুরপক্ষীয়দের হয়তো ইহাই দাবি। অন্য দিকে বিক্ষোভকারীরা পড়ুয়াদ্বয়ের প্রতি অনাচারের বিরুদ্ধে গলা ফাটাইতেছেন আর মিছিল করিতেছেন বটে, হাসপাতালের কাজকর্ম অচল করিয়া বহু মানুষের অসুবিধার কারণও হইতেছেন সদর্পে— কিন্তু বন্দি তরুণীদের তরফে জামিনের শর্ত পূরণের ব্যবস্থা করিতে তাঁহারা মোটেই উৎসাহী নন। এই চিত্রের মধ্যে এ রাজ্যের সামগ্রিক বিকৃতিটি সংক্ষিপ্তাকারে ধরা পড়ে। এখানে যে কাজগুলি স্বাভাবিক ভাবে করণীয়, সেগুলি কখনওই করা হইয়া ওঠে না, কারণ সেগুলিতে হাততালি মিলিবার সম্ভাবনা নাই, গোলযোগ ও অশান্তি পাকাইয়া তুলিবার পরিসরও নাই। সামাজিক সংবেদনশীলতা যখন কেবলমাত্র রাজনীতির অস্ত্র, আর রাজনীতির অর্থ যখন হাউমাউ রবে শাসক-বিরোধী সংঘর্ষের ব্যবস্থা, তখন ঠিক এমনটাই ঘটিবার কথা। ঠিক যেমনটি এখন ঘটিতেছে।

অন্য বিষয়গুলি:

NRS hospital Nurse Dogs
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy