Advertisement
২১ জানুয়ারি ২০২৫
Coronavirus

যথেষ্ট নহে

এই ভাষণেও স্পষ্ট— দরিদ্র ভারতের চেহারাটি কী রকম, প্রধানমন্ত্রী জানেন না।

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ১৬ এপ্রিল ২০২০ ০০:৩৭
Share: Save:

ভারতে কোভিড-১৯ ছড়াইয়া পড়িবার পর এই চতুর্থ বার টেলিভিশনের পর্দায় জাতির উদ্দেশে ভাষণ দিলেন প্রধানমন্ত্রী। সত্য বলিতে, এই প্রথম বার ভাষণ শুনিয়া যেন মনে হইল, দেশের প্রধানমন্ত্রী কথা বলিতেছেন। অবান্তর নাটুকেপনা কিংবা দেখনদারি, দুইই এই বার কিছু কম। তবে কি না, এ বারও তাঁহার মুখে যাহা শোনা গেল, তাহা যথেষ্ট আশ্বাসদায়ক, এমন বলা মুশকিল। কিছু আত্মশ্লাঘার কথা শোনা গেল, যাহাকে দেশের এই সঙ্কটমুহূর্তে সঙ্গত বলিয়া দাবি করা মুশকিল। যেমন, নাগরিক সুরক্ষার প্রশ্নে ভারতের অবস্থা দুনিয়ার সর্বোত্তম, এ হেন দাবিটিকে তথ্যপ্রমাণের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠা করা প্রায় অসম্ভব। কেন ভারত করোনা-পরীক্ষার অঙ্কে দুনিয়ার সর্বশেষ সারিতে থাকা দেশগুলির অন্যতম, কেন এখনও চিকিৎসক-স্বাস্থ্যকর্মীদের জন্য যথেষ্ট পিপিই-র ব্যবস্থা করা যায় নাই, প্রধানমন্ত্রীর ভাষণে এই প্রসঙ্গগুলিও আসিল না। এখনও অবধি ভারতের সঙ্কট হাতের বাহিরে চলিয়া যায় নাই, এই বাস্তবেরই অপর দিক হইল, বিপদ ঘটিবার সম্ভাবনা এখনও সামনে পড়িয়া রহিয়াছে, তাহাকে যথাযথ ভাবে দূর না করিলে বিপদ মারাত্মক হইতে পারে। এই পরিস্থিতিতে ব্যক্তিগত কিংবা সমষ্টিগত কোনও আত্মশ্লাঘারই স্থান থাকিতে পারে না। দেশ যে বিপাকে পড়িয়াছে, তাহা হইতে উদ্ধারের পথ মুখের কথায় রচিত হইবে না, তাহার জন্য অতি দক্ষ ও সুযোগ্য নেতৃত্ব দরকার। এই ভাষণে কিছু কাজের কথা থাকিলেও, দুর্ভাগ্য, প্রয়োজনীয় নেতৃত্বের দিশা মিলিল না।

এই ভাষণেও স্পষ্ট— দরিদ্র ভারতের চেহারাটি কী রকম, প্রধানমন্ত্রী জানেন না। সেই অজ্ঞানতার হাতেনাতে উদাহরণ— আরোগ্য সেতু নামক অ্যাপটি। এই অ্যাপ বিপদ হইতে নিস্তার পাইবার অন্যতম হাতিয়ার ঠাহরাইয়াছেন তিনি। ভুলিয়াছেন, যে দরিদ্র মানুষরা এই লকডাউনের অকূল পাথারে হাবুডুবু খাইতেছেন, এবং এই পরিস্থিতি হইতে উদ্ধারের প্রয়োজন যাঁহাদের সর্বাধিক, তাঁহাদের অধিকাংশের স্মার্টফোন নাই। প্রধানমন্ত্রীর মানসচক্ষুতে যে ভারত ধরা পড়ে, তাহাতে সম্ভবত এই ভারতীয়দের অস্তিত্ব নাই। তবে তাঁহার অজ্ঞানতার আসল প্রমাণ অন্যত্র। জাতির উদ্দেশে চতুর্থ ভাষণেও তিনি বিপন্নতম জনগোষ্ঠী, অর্থাৎ অভিবাসী শ্রমিকদের জন্য কোনও নির্দিষ্ট ব্যবস্থার কথা জানাইতে পারিলেন না। ঘটনাচক্রে, তাঁহার ভাষণের দিনই মুম্বইয়ের বান্দ্রা স্টেশনে ঢল নামিল বিপর্যস্ত অভিবাসী শ্রমিকদের। দেশের মহানগরগুলির, শিল্পকেন্দ্রগুলির অভিবাসী শ্রমিকদের সুরক্ষার জন্য কেন্দ্রীয় সরকার কী করিতেছে, তাঁহাদের খাদ্যের কী সংস্থান হইবে, তাঁহারা মাথা গুঁজিবার ঠাঁই পাইবেন কোথায়— প্রধানমন্ত্রীর সুচর্চিত ভাষণে তাহার উল্লেখ নাই। দেশ জুড়িয়া অভিবাসী শ্রমিকদের ঘরে ফিরিবার মরিয়া চেষ্টা প্রত্যক্ষ করিবার পরেও নাই। তাহার কারণ কি ইহাই যে প্রধানমন্ত্রী এই জনগোষ্ঠীকে দেখিতেই পান না?

গত তিন সপ্তাহে কেবল পরিযায়ী শ্রমিক নহে, সাধারণ শ্রমিক সমাজেরও পিঠ দেওয়ালে ঠেকিয়া গিয়াছে। মার্চের উপার্জনের অর্থ দিয়া যদি-বা এপ্রিলের দুর্যোগ কিছু মাত্রায় ঠেকানো গিয়াছে, কর্মহীন এপ্রিলের পর মে মাস অবধি দুর্যোগ কোন স্তরে পৌঁছাইতে চলিয়াছে, ভাবিলে আতঙ্ক উপস্থিত হয়। প্রধানমন্ত্রী স্মরণ করাইয়া দিয়াছেন, এলাকায় যেন কেহ অভুক্ত না থাকে, প্রত্যেক নাগরিককে তাহা দেখিতে হইবে। নাগরিকের সদিচ্ছা সর্বদাই প্রশংসনীয়, কিন্তু রাষ্ট্র কি এই চরম সঙ্কটকালে নাগরিকের ভরসাতেই থাকিবে? প্রথম লকডাউন ঘোষণার সময়ও প্রধানমন্ত্রী বা তাঁহার উপদেষ্টারা অভিবাসী শ্রমিকের বিপন্নতার মাত্রা আঁচ করিতে ব্যর্থ হইয়াছিলেন, তিন সপ্তাহ কাটিয়া যাওয়ার পরও তাঁহারা এই বিপদের মাপ বুঝিতে অসমর্থ।

আরও পড়ুন: মোদীর কর্তব্য কই, প্রশ্ন

অন্য বিষয়গুলি:

Coronavirus Health Coronavirus Lockdown Narendra Modi
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy