Advertisement
E-Paper

অকারণ সুবিধা?

মাতৃত্বকালীন ছুটি ‘অন্যায় সুবিধা’ নহে। রাষ্ট্র স্ব-প্রয়োজনেই এই ছুটি প্রদানে বাধ্য। উদ্দেশ্য, সদ্যোজাতের সঙ্গে মায়ের বন্ধনটি নিবিড় করা।

শেষ আপডেট: ০৬ নভেম্বর ২০২০ ০১:২২
Share
Save

মাতৃত্ব সাড়ম্বরে উদ্যাপিত হয় যে দেশে, সেই দেশেই নূতন মায়েদের কী দুরবস্থা! মাতৃত্বকালীন ছুটির মধ্যেই এক অস্থায়ী কলেজ শিক্ষিকাকে চাকুরি হইতে অপসারিত করিবার কারণে দেশের সর্বোচ্চ আদালতকে তিরস্কার করিতে হইতেছে এক প্রথম সারির বিশ্ববিদ্যালয়কে। ঘটনার সূত্রপাত গত বৎসরের গোড়ায়। দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনস্থ এক কলেজে কর্মরত শিক্ষিকা তাঁহার পাওনা মাতৃত্বকালীন ছুটির আবেদন করিলেও বিশ্ববিদ্যালয় তাহাতে কর্ণপাত করে নাই। এবং তাঁহার চু্ক্তিটিরও নবীকরণ না করিবার ফলে সদ্যজননী চাকুরিটি খোয়াইয়াছিলেন। জানা গিয়াছিল, বিশ্ববিদ্যালয় শুধুমাত্র তাহার স্থায়ী শিক্ষকদের ক্ষেত্রেই এই সুবিধা মঞ্জুর করিয়া থাকে, অস্থায়ী শিক্ষকদের জন্য নহে। সম্প্রতি সেই মামলার প্রেক্ষিতেই বিশ্ববিদ্যালয়ের সিদ্ধান্ত লইয়া গভীর অসন্তোষ প্রকাশ করিল সুপ্রিম কোর্ট। জানাইল, সন্তানের জন্ম নারীর পেশাগত দক্ষতাকে প্রভাবিত করিতে পারে না।

দুর্ভাগ্য, এই সত্যটি বুঝাইতে আদালতের হস্তক্ষেপের প্রয়োজন পড়িল। অথচ, ২০১৭ সালে পাশ হওয়া আইনে চাকুরিজীবী মহিলাদের মাতৃত্বকালীন ছুটির মেয়াদ ১২ সপ্তাহ হইতে বৃদ্ধি করিয়া ২৬ সপ্তাহ করা হইয়াছিল, বিশ্বে যাহা নাকি তৃতীয় দীর্ঘতম। অথচ, সেই আইনের সুযোগ সকল নারী-কর্মীকে দিবার অনিচ্ছার প্রমাণ প্রায়ই মিলিতেছে। কখনও অস্থায়ী, কখনও চুক্তিভিত্তিক, স্বেচ্ছাসেবী— ইত্যাদি নানা অজুহাতে এই বিশেষ ছুটিতে কোপ মারিবার প্রবণতাটি এখনও অব্যাহত। সন্তানের জন্ম মায়ের কর্মনৈপুণ্য হ্রাস করে— এমন ধারণা সমাজে প্রবল, যদিও ইহার পশ্চাতে কোনও যুক্তিগ্রাহ্য কারণ নাই। বরং কয়েকটি সমীক্ষায় স্পষ্ট যে, সন্তানের জন্ম কিছু ক্ষেত্রে মায়ের কর্মদক্ষতা বৃদ্ধি করিয়া থাকে। তৎসত্ত্বেও, অসংগঠিত ক্ষেত্র তো বটেই, সংগঠিত ক্ষেত্রও এই অবিচারের বাহিরে নহে। অনেক বেসরকারি সংস্থায় প্রবেশের সময় সন্তানের জন্ম সংক্রান্ত নানাবিধ প্রশ্ন এবং শর্তের সম্মুখীন হইতে হয়। বাড়ির পরিচারিকাটিকে দুধের শিশু ঘরে রাখিয়া কাজে যোগদান করিতে হয়। এমনকি আশাকর্মীদের জন্য মাতৃত্বকালীন ছুটি বরাদ্দ হয় মাত্র ৪৫ দিন। কারণ, সরকারি খাতায় তাঁহাদের পরিচয় ‘স্বেচ্ছাসেবী’। তাঁহারা শিশুর জন্মের পর টানা ছয় মাস মাতৃদুগ্ধ পানের প্রয়োজনীয়তার কথা প্রচার করেন। আর তাঁহাদেরই সন্তান দেড় মাস হইতে কৌটার দুধে অভ্যস্ত হয়।

মাতৃত্বকালীন ছুটি ‘অন্যায় সুবিধা’ নহে। রাষ্ট্র স্ব-প্রয়োজনেই এই ছুটি প্রদানে বাধ্য। উদ্দেশ্য, সদ্যোজাতের সঙ্গে মায়ের বন্ধনটি নিবিড় করা। সন্তান প্রতিপালনের ক্ষেত্রে প্রথম ছয় মাস অতীব গুরুত্বপূর্ণ। মা ও শিশু— উভয়ের ক্ষেত্রেই। এই সময় শিশুর পার্শ্বে মায়ের উপস্থিতি নিশ্চিত না করা হইলে শিশুর বৃদ্ধিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। ভবিষ্যৎ প্রজন্মের অ-সুস্থতা কোনও রাষ্ট্রের পক্ষেই শুভ সঙ্কেত নহে। পরবর্তী কালে সেই ক্ষতি রাষ্ট্রকেই পূরণ করিতে হয়। এই কারণে বিদেশে কিছু ক্ষেত্রে ৫২ সপ্তাহ অবধি মাতৃত্বকালীন ছুটি লইবার সুবিধা মিলে। সুতরাং, আইনের পশ্চাতের যুক্তিটিকে বুঝিয়াই আইনটিকে গ্রহণ করিতে হইবে। কর্মক্ষেত্রগুলি দেশের সার্বিক কল্যাণের বাহিরে নহে। রাষ্ট্রের যাহাতে ভাল হয়, তাহা দেখিবার নৈতিক দায়টি তাহারা কোনও অজুহাতেই এড়াইয়া যাইতে পারে না।

Maternity Holiday Leave Holiday Pregnant

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

{-- Slick slider script --}}