কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গাঁধী। দিল্লিতে, সাংবাদিক সম্মেলনে। শুক্রবার। ছবি- পিটিআই
লক্ষ্যের দিকে এগোনোর আভাস মাত্র পেয়েই দিগ্বিদিক জ্ঞানশূন্য হয়ে পড়লে অজান্তেই লক্ষ্যের থেকে দূরে সরে যেতে হয়। কংগ্রেস নেতৃত্বের এবং কংগ্রেস কর্মীবর্গের বোঝা দরকার এ কথা।
পাঁচ রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচনের ফল প্রকাশিত হয়েছে ১১ ডিসেম্বর। তিনটে রাজ্যের শাসনক্ষমতা কংগ্রেসের হস্তগত হয়েছে। কিন্তু জয়ের পরেও মসৃণ হল না রাহুল গাঁধীর পথটা। মধ্যপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী কে হবেন— ঘোষণা করতে দু’দিন লেগেছে। রাজস্থানের মুখ্যমন্ত্রী বাছাই করতে তিন দিন লাগল। ছত্তীসগঢ়ে কাকে মুখ্যমন্ত্রী করা হবে, সে সিদ্ধান্তে পৌঁছতে সম্ভবত চার দিন লাগবে।
মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী হিসেবে কাউকে তুলে ধরে ভোটে যায়নি কংগ্রেস। অতএব প্রতিটি রাজ্যেই কংগ্রেসে মুখ্যমন্ত্রিত্বের একাধিক দাবিদার নিজের নিজের ভাগ্যে শিকে ছেঁড়ার আশায় ছিলেন। ভোটের ফল বেরোতেই সব দাবিদার নিজের নিজের মতো করে সক্রিয়। অতএব মুখ্যমন্ত্রী বেছে নেওয়াটা ঈষত্ কঠিন হয়ে গিয়েছে। কিন্তু দলের উপরে সর্বোচ্চ নেতৃত্বের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ থাকলে বিষয়টা এত কঠিন হয়ে দাঁড়াত না। নেতৃত্বের মধ্যে মুখ্যমন্ত্রিত্ব নিয়ে যে টানাপড়েন চলছে, তা মেটাতে দু’দিন বা তিন দিন বা চার দিন করে সময় লাগত না।
সম্পাদক অঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা আপনার ইনবক্সে পেতে চান? সাবস্ক্রাইব করতে ক্লিক করুন
দীর্ঘ দিন পরে নির্বাচনে মোটামুটি স্পষ্ট জয় পেল কংগ্রেস। যে তিনটে রাজ্যে কংগ্রেস ক্ষমতায় আসতে পারল, সেগুলোর মধ্যে দুটোয় আবার দেড় দশক পর কংগ্রেস জয়ে ফিরল। অর্থাত্ অনেক দিন পরে দেশের একটা অংশের মানুষ কংগ্রেসকে আবার সুযোগ দিল। লক্ষ্য যদি হয় দিল্লি দখল, তা হলে কিন্তু এইটুকু সুযোগেই আত্মহারা হয়ে পড়লে চলবে না। রাহুল গাঁধীর চূড়ান্ত লক্ষ্য যে দিল্লি দখল করা, তা কারও অজানা নয়। অতএব রাহুলকেই সবচেয়ে বেশি সতর্ক থাকতে হবে এ বিষয়ে। কমল নাথ না জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়া— এই প্রশ্নকে ঘিরে অস্বস্তি ক্রমশ বাড়ছিল মধ্যপ্রদেশের কংগ্রেসে। দুই নেতার অনুগামীদের মধ্যে তিক্ততাও বাড়ছিল। রাজস্থানেও একই প্রশ্ন— অশোক গহলৌত, না সচিন পাইলট? এই দুই নেতার সমর্থকদের মধ্যে তিক্ততা চরমে পৌঁছল, স্লোগান দেওয়া, বিক্ষোভ দেখানো থেকে শুরু করে সংঘর্ষ পর্যন্ত গড়াল। কংগ্রেস কর্মীদের বাগে আনতে পুলিশকে জলকামান পর্যন্ত ব্যবহার করতে হল। এই রকম দিগ্বিদিক জ্ঞানশূন্য দশায় ভেসে যাওয়ার সময় কিন্তু কংগ্রেসের জন্য এখনও আসেনি।
আরও পড়ুন: গহলৌতই রাজস্থানের মুখ্যমন্ত্রী, উপ-মুখ্যমন্ত্রী হচ্ছেন পাইলট
উত্তরপ্রদেশে মুখ্যমন্ত্রী বেছে নিতে বেশ কিছুটা সময় নিয়েছিল বিজেপিও। কিন্তু সেই বাছাই পর্বের দিনগুলোতে বিজেপি কর্মীদের সামলে রাখতে জলকামান ব্যবহারের কথা প্রশাসনকে ভাবতে হয়নি। কিন্তু কংগ্রেসের ক্ষেত্রে তেমনটাই ঘটল। এ বিশৃঙ্খলা কংগ্রেসের ভাবমূর্তিকে উজ্জ্বল তো করবেই না, ২০১৯-এ চূড়ান্ত লড়াইটার আগে এই ধরনের ছবি কংগ্রেসকে সংহত বা সশক্তও করবে না।
আরও পড়ুন: মধ্যপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী কমল নাথ, ধৈর্য-অস্ত্রে জট খুলছেন রাহুল
মনে রাখতে হবে, পাঁচ রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচনে কংগ্রেস এমন কোনও ফল করেনি, যার ভিত্তিতে এখনই বলে দেওয়া যায় যে, ২০১৯ কংগ্রেসের বছর হতে চলেছে। বিজেপির শক্তিক্ষয় হয়েছে ঠিকই, কিন্তু একা কংগ্রেসই বিজেপিকে ধরাশায়ী করার জায়গায় চলে এসেছে, এমনটা বলার মতো পরিস্থিতি এখনও তৈরি হয়নি। লক্ষ্যে পৌঁছনোর জন্য কংগ্রেসকে কিন্তু ভরসা করতে হবে দেশজোড়া বিরোধী ঐক্যের উপর। অনেকগুলো দলকে, অনেকগুলো মতামতকে, অনেকগুলো দৃষ্টিভঙ্গিকে সঙ্গে নিয়ে চলতে হবে, তাদের মধ্যে সমন্বয়সাধন করতে হবে। তার জন্য নিজের ঘরটাকে গুছিয়ে রাখা কিন্তু সর্বাগ্রে জরুরি। ঘরোয়া অনৈক্যই যদি সামলে উঠতে না পারেন কংগ্রেস নেতৃত্ব, তা হলে ঘরের বাইরে থাকা বিভিন্ন পক্ষকে সঙ্গে নিয়ে সফল জোটের নেতৃত্ব দেওয়া কংগ্রেসের পক্ষে আদৌ সম্ভব হবে তো? কংগ্রেসের সর্বোচ্চ নেতৃত্ব থেকে বুথ স্তরের কর্মী, প্রত্যেকের ভাবা উচিত এই কথাটা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy