ছবি: এপি।
অবশেষে ‘নবযুগ’ আনিল চিনা কমিউনিস্ট পার্টি। ১৯৯৭ সালের ৩০ জুন ব্রিটেন হইতে বেজিং-এর নিকট হস্তান্তরিত হইয়াছিল হংকং। সেই ঘটনার ২৩তম বার্ষিকীতে এই শহরে অভূতপূর্ব অগণতান্ত্রিক জাতীয় নিরাপত্তা আইন বলবৎ করিল চিন সরকার। চিনের আইনসভায় সর্বসম্মত ভাবে পাশ হওয়া আইন অনুসারে বিদেশি শক্তির সহিত গোপন যোগসাজশ, জঙ্গি কার্যকলাপের পরিকল্পনা এবং চিন হইতে বিচ্ছিন্নতার চেষ্টা শাস্তিযোগ্য অপরাধ। এহ বাহ্য। উক্ত আইনে যোগসাজশ বা জঙ্গিবাদের যে সংজ্ঞা নির্ধারিত হইয়াছে, তাহাতে সামান্যতম সরকারবিরোধী আন্দোলনও জাতীয় নিরাপত্তার পক্ষে বিপজ্জনক ঠেকিবে। যথা, বিদ্যুৎ সরবরাহ বা গণপরিবহণ ব্যাহত করিবার চেষ্টা জঙ্গি কার্যকলাপ বলিয়া চিহ্নিত হইবে। আইনের আসল উদ্দেশ্য দিবালোকের ন্যায় স্পষ্ট। বিগত এক বৎসর ধরিয়া গণতন্ত্রপন্থী তথা চিনবিরোধী আন্দোলনে উত্তাল হংকং। কখনও সেই আন্দোলন উগ্র হইয়া সরকারি সম্পত্তিও ধ্বংস করিয়াছে। সকল উপায়ে তাহা ঠেকাইতে ব্যর্থ হইয়া শেষাবধি আইনের শরণ।
একটিমাত্র আন্দোলনকে ঠেকাইতে এত আয়োজন? সম্ভবত চিনের পরিকল্পনা সুদূরপ্রসারী। ব্রিটিশ রূপরেখায় আধা-স্বায়ত্তশাসিত হংকং-এর নিজস্ব আইনব্যবস্থা রহিয়াছে। কমিউনিস্ট পার্টির কর্তৃত্ববাদী আইনব্যবস্থার সহিত তাহার বিভেদ ঘুচাইতেই এই নূতন আইনের অবতারণা। ভারতের ন্যায় হংকং-এর আইনেও অভিযুক্ত ব্যক্তি অতিরিক্ত সুযোগসুবিধা ভোগ করিয়া থাকেন। এ বার অপরাধী আইন ব্যাখ্যা করিবার ক্ষমতাটি চিনা পার্লামেন্টের স্ট্যান্ডিং কমিটির হস্তে সমর্পিত হইবার ফলে একই অপরাধে কঠোরতর শাস্তি হইতে পারে। বিচার প্রক্রিয়ায় যদি ‘রাষ্ট্রীয় গোপনীয়তা’ বা ‘সরকারি নির্দেশিকা’ থাকে, তাহা হইলে সংবাদমাধ্যমের নিকট সেই প্রক্রিয়া প্রকাশ করিবার দরকার নাই, চূড়ান্ত রায়টুকু জানাইলেই চলিবে। এবং জাতীয় নিরাপত্তা বিঘ্নিত হইবার আশঙ্কা দেখিলেই শহরের স্বাধীন আদালতগুলি হইতে বেজিং এই আইন প্রয়োগের অধিকার পাইবে। কখন বৈদেশিক শক্তি হস্তক্ষেপে নিরাপত্তা বিঘ্নিত হইবে— অন্তত বেজিং-এর চোখে— তাহা বুঝিয়া লওয়া কঠিন নহে।
অনুমান করা যায়, এই সর্বগ্রাসী আইনের ফলে হংকং শহরের চরিত্রই পাল্টাইয়া যাইবে। কেবল চিন বা হংকংবাসী নহেন, বিশ্বের যে কোনও দেশের নাগরিকই যদি চিনা সরকারের সমালোচনা করেন, তাহা হইলে এই আইনের বলে হংকং-এ আসিয়া গ্রেফতার হইতে পারেন। এত কাল বেজিং-এর সমালোচনা করা এবং তাহাদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ সংগঠিত করিবার পীঠস্থান ছিল হংকং। বিরোধী মতাবলম্বী চিনা নাগরিক, পশ্চিমে বসবাসকারী শিক্ষাবিদ এবং স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাগুলির নিকট হংকং ছিল নিরাপদ আশ্রয়। সেই ভরসা আর রহিল না। চিনা-অস্ট্রেলীয় এক প্রতিবাদী শিল্পী জানাইয়াছেন, রাজনৈতিক মত প্রদর্শনের স্থান হিসাবে তিনি আর হংকং-কে বাছিয়া লইবেন না। বাণিজ্য বা ভ্রমণের উদ্দেশ্যে কোনও মার্কিনির হংকং যাওয়া উচিত নহে— বলিয়াছেন আমেরিকার নেতারা। বস্তুত, বেজিং-এর একতরফা আগ্রাসী সিদ্ধান্তে মূল ভূখণ্ডের ন্যায় হংকং-ও এক সম্পূর্ণ অগণতান্ত্রিক বাতাবরণে প্রবেশ করিল। ইহাই তাহা হইলে ‘নূতন যুগ’।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy