ফাইল চিত্র
সত্যই যদি কেহ ভারতীয় ভূখণ্ডে ঢুকিয়া না পড়ে, তবে কুড়ি জন সৈনিক প্রাণ হারাইলেন কী ভাবে? যদি বন্দিই না করা হয়, তবে দশ জন ভারতীয় সৈনিককে চিন মুক্তি দিল কেমন করিয়া? ভারত কি তবে মানিয়া লইল, আকসাই চিন সত্যই চিনের ভূখণ্ড, এবং ভারতীয় সেনাই সেখানে অনুপ্রবেশ করিয়াছিল? প্রশ্নগুলির স্পষ্ট সদুত্তর দেওয়া প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর দায়িত্ব। কেবল দায়িত্ব নহে, জাতীয়তাবাদের খাতিরে তাঁহার কর্তব্য। দেশ যখন আক্রান্ত হয়, সেনাবাহিনীর বক্তব্যকে ডাহা মিথ্যা বলিয়া নস্যাৎ না করিয়া দিলে অস্বীকার করিবার উপায় নাই যে, সত্যই লাদাখে ভারত আক্রান্ত হইয়াছে— তখন পরিস্থিতিটি ঠিক কেমন, জানিবার পূর্ণ অধিকার দেশবাসীর আছে। বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলিরও সেই অধিকার আছে, কারণ সংসদীয় গণতন্ত্রে তাহারাও দেশের জনসাধারণের প্রতিনিধি। বৈদেশিক আক্রমণ ঘটিলে অভ্যন্তরীণ রাজনীতির বিবাদ ভুলিয়া সব দল সরকারের সমর্থনে দাঁড়াইবে, তাহা যেমন প্রত্যাশিত, তেমনই প্রত্যাশিত যে প্রধানমন্ত্রীও ক্ষুদ্র রাজনৈতিক ব্যবধান ভুলিয়া প্রত্যেককে সঙ্গে লইয়া চলিবেন। বহিঃশত্রুর আক্রমণের সময় দেশ যে কোনও রাজনীতির ঊর্ধ্বে থাকিবে, তাহাই জাতীয়তাবাদের দাবি। এই সঙ্কটের মুহূর্তে প্রতিটি বিরোধী দলই কেন্দ্রীয় সরকারের প্রতি পূর্ণ সমর্থন জ্ঞাপন করিয়াছে। কিন্তু, প্রধানমন্ত্রী তাঁহার কর্তব্য পালন করিলেন কি? যেখানে তাঁহার কর্তব্য ছিল যাবতীয় প্রশ্নের স্পষ্ট এবং সত্য উত্তর দেওয়া, সেখানে সর্বদল বৈঠকের শেষ লগ্নে তাঁহার বক্তব্য আরও অধিক প্রশ্নের জন্ম দিল। দেশময় প্রশ্নচিহ্ন ছড়াইয়া পড়িতে পর দিন প্রধানমন্ত্রীর দফতর হইতে যে সাফাই গাওয়া হইল, তাহাও অতি দুর্বল। এবং বিপজ্জনক। যে ভাবে বিরোধীদের কাঠগড়ায় দাঁড় করাইবার চেষ্টা করিল পিএমও, তাহাতে আশঙ্কা কমে না, বরং বাড়ে। বহির্দেশীয় শত্রু, না কি অভ্যন্তরীণ শত্রু, কোন দিকে মন দিতেছেন প্রধানমন্ত্রী, তাহা লইয়া ধন্দ উপস্থিত হয়।
‘সীমান্তে কিছুই হয় নাই’ বলিলে অন্য একটি সঙ্কটও হয় বইকি। এই একটি মন্তব্যে সেনাবাহিনীর যাবতীয় কথা মিথ্যা প্রতিপন্ন হয়, সৈনিকদের আত্মত্যাগের মাহাত্ম্য বিনষ্ট হয়। প্রধানমন্ত্রীর স্মরণে থাকিবার কথা যে, দলের রাজনৈতিক বয়ানে সিয়াচেনের সীমান্তে প্রহরারত সৈনিকদের তাঁহারা পূর্বে কতখানি গুরুত্ব দিয়াছিলেন। সিয়াচেন হইতে গালওয়ান উপত্যকার দূরত্ব সামান্যই— অন্তত, নরেন্দ্র মোদীর রাজনৈতিক বয়ান ও প্রকৃত আচরণের মধ্যবর্তী দূরত্বের তুলনায় ঢের কম। তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে, এমন সঙ্কটকালেও প্রধানমন্ত্রী, প্রতিরক্ষামন্ত্রী ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর মুখে চিনের নামোল্লেখ শোনা যায় নাই।
ইতিমধ্যে চিনের সরকারি সংবাদমাধ্যম দাবি করিয়াছে, যে অঞ্চল লইয়া বিতর্ক, তাহা নাকি চির কাল চিনেরই অঙ্গ। চিনের সাম্রাজ্যবিস্তারের প্রবণতাটি সুপরিচিত। প্রধানমন্ত্রীর চর্চিত নীরবতা কি ইঙ্গিত করিতেছে, লাদাখে চিনের আগ্রাসনের নিকট ভারত আপাতত পরাস্ত? এবং, ‘কিছুই হয় নাই’ বলিয়া অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে মুখরক্ষা করিতে ব্যস্ত? গত বৎসর এই ভূখণ্ডের প্রশ্নেই অমিত শাহ বলিয়াছিলেন, আকসাই চিনের জন্য তিনি জীবন দিতেও প্রস্তুত। সেনাবাহিনীর কথা যদি নির্জলা মিথ্যা না হয়, তাহা হইলে কিছু হামলা হইয়াছে। রাজনৈতিক ছাতি চাপড়াইবার খাতিরে এহেন বৃহৎ কূটনৈতিক পরাজয় মানিয়া লইলে প্রধানমন্ত্রী ও তাঁহার দলের উপকার হইলেও হইতে পারে, দেশের হইবে না। বাস্তবিক, ইহাই দেখাইয়া দেয় যে রাজনৈতিক ভাষ্যে অতিজাতীয়তাবাদী হুঙ্কার প্রকৃত প্রস্তাবে দেশের পক্ষে কতখানি ক্ষতিকারক। ঘরোয়া রাজনীতির লাভের গুড় বাঁচাইতে যদি দেশের স্বার্থকে বিসর্জন দিতে হয়, তবে সেই নেতৃত্বের আর জাতীয়তাবাদের ঢাক বাজাইবার নৈতিক অধিকার থাকে কি?
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy