Advertisement
২৩ ডিসেম্বর ২০২৪
Joe Biden

পথ বন্ধুর

পূর্বতন বেপরোয়া প্রশাসনের ছায়া হইতে বাহির হইয়া প্রতি পদে জটিল হিসাব করিতে হইবে আমেরিকার নূতন প্রেসিডেন্টকে।

ফাইল চিত্র।

ফাইল চিত্র।

শেষ আপডেট: ২৬ নভেম্বর ২০২০ ০১:২০
Share: Save:

ডোনাল্ড ট্রাম্প ভাঙিয়াছেন, এবং শেষ পর্যন্ত মচকাইতেও শুরু করিয়াছেন। এত দিনে তিনি স্বীকার করিয়া লইতেছেন যে, এ বার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে তিনি পরাজিত। প্রেসিডেন্ট-ইলেক্ট হিসাবে জো বাইডেন ইতিমধ্যেই অল্পবিস্তর কাজকর্ম শুরু করিয়া দিয়াছিলেন, নিভৃতে। এ বার বিদায়ী প্রেসিডেন্টের ‘বিদায়’-পর্ব অন্তত আংশিক ভাবে পরিলক্ষিত হওয়ায় তিনি হয়তো নিভৃত ছাড়িয়া প্রকাশ্যেই কাজে নামিতে পারিবেন। কাজে নামা তাঁহার জন্য, এবং তাঁহার দেশের জন্য, অত্যন্ত জরুরি হইয়া পড়িয়াছে। আমেরিকা এই মুহূর্তে নানাবিধ সঙ্কটের সম্মুখীন। সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ কোভিড-১৯’এর মোকাবিলা। ট্রাম্পনীতির বিষম ফল প্রকট হইবার পর স্বাস্থ্য পরিষেবার ক্ষেত্রে উল্টা পথে হাঁটিবার কাজটি সহজ নহে। আমেরিকার নাগরিককে সামাজিক দূরত্বে ফিরাইয়া লইবার কাজটি সহজ নহে। গত কয়েক মাসের নিরন্তর ভুল প্রচারে নাগরিক গভীর ভাবে বিভ্রান্ত। তাঁহাদের বুঝানো হইয়াছে, কোভিড সঙ্কট আসলে একটি রাষ্ট্রীয় ষড়যন্ত্র, কিংবা চিনা আগ্রাসনের সামনে আমেরিকার আত্মসমর্পণ। স্বাভাবিকতায় ফিরিয়া গিয়া কোভিড-মোকাবিলা বাইডেন প্রশাসনের বিরাট চ্যালেঞ্জ, সন্দেহ নাই। যে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা হইতে ক্রোধান্বিত ট্রাম্প বাহির হইয়া আসিয়াছেন, তাহাতেও ফিরিবার কথা বলিয়াছেন বাইডেন। কিন্তু ‘এগজ়িকিউটিভ অর্ডার’ দিয়া ফিরিবার প্রক্রিয়া শুরু করা আদৌ সম্ভব কি না, তাহা লইয়া সংশয় বিদ্যমান। ইতিপূর্বে হু-এর সর্ববৃহৎ আর্থিক সহায় ছিল আমেরিকা। নূতন পর্বে কোভিড-১৯’এর ঔষধ ও টিকার জন্য বহু দরিদ্র দেশ তাহার মুখাপেক্ষী হইবেই। এই বিপুল প্রত্যাশার ভার বাইডেন প্রশাসন কী ভাবে মিটাইবেন, তাহা দেখিবার।

বিরাট চ্যালেঞ্জ পরিবেশ ক্ষেত্রও। যে ভাবে ট্রাম্প প্যারিস জলবায়ু চুক্তি হইতে আমেরিকার সমর্থন প্রত্যাহার করিয়াছেন, তাহাতে ইউ-টার্ন এখনই সম্ভব কি? অন্যান্য দেশ আমেরিকাকে পুনরায় স্বাগত জানাইতে ইচ্ছুক, ২০৫০ সালকে লক্ষ্যমাত্রা ধরিয়া ‘নেট-জ়িরো এমিশন’ অর্থাৎ মনুষ্যসৃষ্ট গ্রিনহাউস গ্যাস নিঃসরণ শূন্য করিবার পরিকল্পনা জানাইয়াও দিয়াছেন বাইডেন। চুক্তিতে পুনঃপ্রবেশের জন্য কংগ্রেসের সম্মতি না লাগিলেও তাহার সহযোগিতা বিনা তাঁহার কোনও অঙ্গীকারই বিশ্বাসযোগ্য হইবে না। কংগ্রেস ও সেনেটের বাধা তাঁহার সামনে পাহাড়প্রমাণ হইবে।

বুঝিয়া লওয়া ভাল, বাইডেন সকলকে তুষ্ট করিতে পারিবেন না। আমেরিকার জমানা পরিবর্তনের পর নিজেদের লাভ-ক্ষতির অঙ্ক কষিতেছে প্রতিটি দেশের সরকার। চিন ভাবিতেছে, ট্রাম্পের যুদ্ধং দেহী নীতি হইতে বাইডেন সরিবেন। ইউরোপীয় ইউনিয়নও সঙ্গীকে সর্বতো ভাবে ফেরত চাহিবে। ভারত আশা করিবে, ট্রাম্পের সহিত প্রধানমন্ত্রী মোদীর ব্যক্তিগত বন্ধুত্বের খেসারত নয়াদিল্লিকে দিতে হইবে না। ইতিপূর্বে গণতন্ত্র ও মানবাধিকারে ভারতের স্খলনের সমালোচনা করিয়াছিল বাইডেন প্রচারদল। কিন্তু প্রশাসনে আসিয়া চিনের বিরুদ্ধে ও পশ্চিম এশিয়ায় সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে ক্ষমতার ভারসাম্য নির্মাণ করিতে হইলে ভারত-নির্ভর হওয়া বিনা উপায় থাকিবে না তাঁহার। পূর্বতন বেপরোয়া প্রশাসনের ছায়া হইতে বাহির হইয়া প্রতি পদে জটিল হিসাব করিতে হইবে আমেরিকার নূতন প্রেসিডেন্টকে।

অন্য বিষয়গুলি:

Joe Biden Donald Trump USA assembly election
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy