ছবি এপি।
অতিমারির প্রকোপবৃদ্ধি প্রতিরোধ করা হইবে, না কি বিধ্বস্ত অর্থনীতির জন্য ব্যবস্থা করা হইবে অক্সিজেনের? এমনই একটি মারাত্মক চয়নের সিদ্ধান্তের সম্মুখীন হইয়াছিল কেন্দ্রীয় সরকার। মারাত্মক, কারণ যে বিকল্পটিকে বাতিল করা হইবে, তাহাই দেশের পক্ষে প্রাণঘাতী হইয়া দাঁড়াইবে, আক্ষরিক অর্থেই। স্বীকার করিতেই হইবে, এই পরিস্থিতিতে সরকার যে সিদ্ধান্ত করিল, তাহাই সম্ভবত সর্বাপেক্ষা গ্রহণযোগ্য। অর্থাৎ, লকডাউনের মেয়াদ বাড়িল, কিন্তু অপেক্ষাকৃত নিরাপদ অঞ্চলে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিবার প্রক্রিয়াও আরম্ভ হইল। সামাজিক দূরত্ববিধি বজায় রাখিয়া, নিরাপত্তার অন্যান্য শর্ত পূরণ করিয়া অর্থনীতির চাকা মন্থর গতিতে হইলেও গড়াইতে আরম্ভ করিবে। সরকারের দায়িত্ব অবশ্য সিদ্ধান্তগ্রহণেই ফুরাইয়া যায় না— বস্তুত, ইহা দায়িত্বের নূতনতর পর্বের সূচনালগ্ন। লকডাউনের নিয়মবিধি শিথিল হইবার পর কোভিড-১৯’এর সংক্রমণের হার যাহাতে না বাড়ে, তাহা নিশ্চিত করা প্রধান দায়িত্ব। পরীক্ষার সংখ্যাবৃদ্ধি, স্বাস্থ্য পরিষেবাকে সচল রাখা ইত্যাদি কাজে গাফিলতি চলিবে না। লকডাউনে যাঁহারা বিপন্ন, মেয়াদবৃদ্ধির কারণ তাঁহাদের কথা আরও বেশি গুরুত্বের সহিত বিবেচনা করিতে হইবে। অভিবাসী শ্রমিকদের ঘরে ফিরাইবার প্রক্রিয়া বহু বিলম্বে হইলেও শুরু হইয়াছে। তাঁহাদের, এবং অন্যদেরও, খাদ্য নিরাপত্তা, আর্থিক সাহায্য, কর্মসংস্থান ইত্যাদির ব্যবস্থা করিতে হইবে। সর্বোপরি, লকডাউনের শর্ত শিথিল করিয়া যে অর্থনৈতিক কাজগুলি শুরু করিবার কথা বলা হইয়াছে, তাহা যেন চলিতে পারে, নিশ্চিত করিতে হইবে। কাঁচামাল বা শ্রমিক পরিবহণের ক্ষেত্রে সতর্কতা যেমন প্রয়োজন, মসৃণতাও তেমনই জরুরি।
তবে, দায়িত্ব শুধু সরকারের নহে। অতিমারির বিরুদ্ধে লড়াইয়ের সাফল্য বহুলাংশে নির্ভর করে সাধারণ মানুষের উপর। নিতান্ত প্রয়োজন না হইলে ঘরের বাহির না হওয়া, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা-সহ নিরাপত্তাবিধিগুলি মান্য করা ইত্যাদি দায়িত্ব নাগরিকের। এই অতিমারি ঠেকাইতে কোন আচরণটি করা সঙ্গত এবং কোনটি নহে, নাগরিককে তাহা বুঝিতে হইবে। বিশেষত এই দফায়, যখন বহু ক্ষেত্রেই ছাড়ের ব্যবস্থা হইয়াছে। সেই সুযোগ যে অপব্যবহার করিবার জন্য নহে, তাহা ভুলিলে চলিবে না। মানুষ সচেতন না হইলে অতিমারি ফের আগুনের মতো ছড়াইতে পারে, সেই আশঙ্কা বিদ্যমান। কাজেই এই মুহূর্তে নাগরিকের সচেতনতা বস্তুটি ঐচ্ছিক নহে, আবশ্যিক।
একটি পরিণতমনস্ক গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় সর্বদাই তাহা হইবার কথা। সরকার সেই দায়িত্বের কথা স্মরণ করাইয়া দিতে পারে, কোথাও বাড়াবাড়ি হইলে পুলিশ নামাইয়া নাগরিকদের ঘরে ফেরত পাঠাইতে পারে। কিন্তু, নাগরিকরা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিশু নহেন, রাষ্ট্রও স্কুলের দিদিমণি নহে যে সর্বদা চোখে চোখে না রাখিলেই নাগরিকরা দুষ্টামি করিতে আরম্ভ করিবেন। প্রাপ্তবয়স্ক নাগরিক যেমন ব্যক্তিজীবনে প্রাপ্তবয়স্কসুলভ আচরণ করিয়া থাকেন, রাষ্ট্রের সহিতও সেই আচরণই প্রত্যাশিত— রাষ্ট্র অভিভাবক ও নাগরিক শিশু, এই মনোভাবটি দুই পক্ষের জন্যই সমান ক্ষতিকর। এই মুহূর্তে রাষ্ট্রকে যেমন তাহার দায়িত্ববোধের প্রমাণ দিতে হইবে, নাগরিকের নিকটও তাহাই প্রত্যাশিত। নাগরিককে সর্বার্থেই রাষ্ট্রের অংশীদার হইতে হইবে। সিদ্ধান্তগ্রহণের ক্ষেত্রে রাষ্ট্র যেমন নাগরিকের মতামত স্মরণে রাখিবে, নাগরিককেও তেমনই স্বতঃপ্রণোদিত ভাবে বুঝিতে হইবে, এই মুহূর্তে কোন আচরণটি যথার্থ। তাহাতে ব্যর্থ হইলে বিপদ— শুধু অতিমারি সংক্রমণের বিপদ নহে, গণতন্ত্রেরও বিপদ। নাগরিক নিতান্ত নাবালক, এই যুক্তির ছিদ্র দিয়াই গণতন্ত্রে স্বৈরতন্ত্রের কালসর্প প্রবেশ করিতে চাহিবে। অতএব, সাবধান।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy