Advertisement
২৬ নভেম্বর ২০২৪
Nabanna

ব্যর্থ

অন্য কয়েকটি কথা মান্যতা পাইল, যাহা পশ্চিমবঙ্গে বিজেপির রাজনৈতিক ভবিষ্যতের পক্ষে ইতিবাচক নহে।

শেষ আপডেট: ১০ অক্টোবর ২০২০ ০২:৩৯
Share: Save:

‘রাস্তার রাজনীতি’ বস্তুটিকে অশ্রদ্ধা করিবার উপায় গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় নাই। সবার উপরে সংখ্যা সত্য, কাজেই ‘রাস্তার রাজনীতি’-র প্রথম ও প্রধান লক্ষ্য হইল, সেই সংখ্যার জোর প্রমাণ করা। মিটিং-মিছিল, বিক্ষোভ অবস্থান আর অভিযান, সবেরই গোড়ার কথা হইল, কত মানুষ দলের পতাকা বহিয়া পথে আসিয়া দাঁড়াইলেন, সেই সংখ্যাটি দেখাইয়া দেওয়া। অন্য দিকে উদ্দেশ্য হইল, কোনও একটি কর্মসূচিকে কেন্দ্র করিয়া যত বেশি সম্ভব মানুষকে সক্রিয় করিয়া তোলা। নবান্ন অভিযানের উত্তেজনা কমিলে মুরলীধর লেনের কার্যালয়ে বসিয়া বিজেপির নেতারা ভাবিতে পারেন, বুধবারের কর্মসূচিতে উদ্দেশ্যগুলি সাধিত হইল কি? তাঁহাদের ডাকে শহরের রাজপথে মানুষের ঢল নামিয়াছে, এমন দাবি করা মুশকিল। জেলা হইতে দলে দলে মানুষ স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে কলিকাতায় আসিয়াছেন, তাহা বলিলেও অত্যুক্তি হইবে। এক রসিক নেটিজ়েনের মন্তব্য, ময়দানে জর্জ টেলিগ্রাফের খেলা দেখিতে ইহার অধিক মানুষ কলিকাতায় আসেন! অর্থাৎ, রাজ্যের শাসক দলের মনে সংখ্যার জোরে কাঁপন ধরাইয়া দিবার উদ্দেশ্যেই যদি কর্মসূচিটি গৃহীত হইয়া থাকে, তবে সেই লক্ষ্য পূরণ হইল না।

বরং, অন্য কয়েকটি কথা মান্যতা পাইল, যাহা পশ্চিমবঙ্গে বিজেপির রাজনৈতিক ভবিষ্যতের পক্ষে ইতিবাচক নহে। প্রথম কথাটি হইল, বঙ্গে বিজেপি এখনও বহুলাংশে বহিরাগত। যে দিন বিজেপির মিছিল বিদ্যাসাগরের মূর্তি ভাঙিয়াছিল, সেই দিনও যেমন মিছিলের সিংহভাগ ছিল বহিরাগত, বুধবারের নবান্ন অভিযানেও দৃশ্যত প্রাধান্য ছিল ভিন্‌রাজ্যের বিজেপি সমর্থকদেরই। দ্বিতীয়ত, সেই মিছিলের ন্যায় বুধবারের অভিযানও বলিতেছে, বিজেপির রাজনীতি মূলত হিংসাত্মক। ভাঙচুর, পাথর ছোড়া, টায়ার জ্বালাইয়া দেওয়া, পুলিশের সহিত খণ্ডযুদ্ধ— সবই যেন অরাজকতার অভিমুখে চলিতেছে। দুর্ভাগ্যজনক হইলেও সত্য, ভারতে রাস্তার রাজনীতি বস্তুটি ক্রমেই দুষ্কৃতীদের আখড়া হইয়া উঠিয়াছে। কিন্তু সেই মাপকাঠিতেও বঙ্গ বিজেপি বেয়াড়া রকম হিংস্র। তৃতীয় কথাটি হইল, বঙ্গীয় বিজেপি বারে বারেই প্রমাণ করিতেছে, বাঙালি সত্তার প্রতি তাহাদের তিলমাত্র সম্ভ্রম নাই। এই দফায় কোনও মনীষীর মূর্তি ধূলিসাৎ হয় নাই, সত্য— কিন্তু, বহিরাগত অবাঙালি শক্তির সাহায্যেই বঙ্গ রাজনীতির দখল লওয়া সম্ভব, এই বিশ্বাসটিই অতি বিপজ্জনক। এই কথাগুলিতে বিজেপির দলীয় রাজনীতির কী লাভ-ক্ষতি, সেই হিসাব দলের নেতারা কষিবেন— কিন্তু, রাজ্য রাজনীতিকে তাঁহারা একটি ভয়ানক বাঁকের মুখে দাঁড় করাইতেছেন।

রাজ্য প্রশাসন যে ভঙ্গিতে বিজেপির কর্মসূচি সামলাইয়াছে, তাহাতে সংযম ছিল, দক্ষতাও ছিল। কিন্তু সেই কৃতিত্বে জল ঢালিয়া দিল বেগুনি রং। মুখ্যসচিব জানাইয়াছেন, জলকামানে হোলির রং মেশানো হইয়াছিল, এবং ‘আন্তর্জাতিক স্তরে এই পদ্ধতি মানা হয়’। তিনি উল্লেখ করিতে ভুলিয়াছেন, আন্তর্জাতিক স্তরে অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এই পদ্ধতিটি প্রয়োগ করে সর্বাধিপত্যকামী, অগণতান্ত্রিক সরকারের প্রশাসন। দেশের মধ্যেও এই পদ্ধতি অনুসৃত হইয়াছে কাশ্মীরে। পশ্চিমবঙ্গ সরকার কাহাকে আদর্শ মানিতেছে, কথাটি ভাবিয়া দেখিবার মতো। শাসকের বিরোধিতা করিলেই সেই নাগরিককে চিহ্নিত করিয়া ফেলিবার মানসিকতাটি ভয়ঙ্কর। রঙিন জল ছিটাইয়া আক্ষরিক অর্থেই সেই ব্যবস্থা করিল রাজ্য পুলিশ। কেহ বলিতেই পারেন, বঙ্গ বিজেপির রাজনীতি যেখানে গণতন্ত্রের তোয়াক্কা করে না, সেখানে সরকারেরই বা গণতান্ত্রিক পদ্ধতিরক্ষার দায় থাকিবে কেন? তাহার প্রধানতম কারণ, যাঁহারা ক্ষমতায় থাকেন, গণতন্ত্রের প্রতি দায়বদ্ধতা তাঁহাদেরই অধিকতর। সেই দায় তাঁহারা স্বীকার না করিলে কী পরিণতি হয়, ভারতের বিভিন্ন প্রান্তে তাহার প্রমাণ অঢেল।

অন্য বিষয়গুলি:

Nabanna BJP Mamata Banerjee
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy