Advertisement
২৬ নভেম্বর ২০২৪
Bihar Election 2020

ন্যায়-অন্যায়

একটি ন্যায়ের দাবির পিছনে কতগুলি অন্যায় লুকাইয়া থাকিতে পারে, সুশান্ত-পর্ব তাহার অভ্রান্ত উদাহরণ।

শেষ আপডেট: ০৫ নভেম্বর ২০২০ ০১:২৫
Share: Save:

বিহারে দুই দফা ভোট হইয়া গেল। প্রধানমন্ত্রী তাঁহার জনসভায় জঙ্গলরাজের কথা বলিলেন; কাহারা ‘জয় শ্রীরাম’ বলিতে ভয় পায়, সেই ব্যাখ্যা শুনাইলেন; ‘যুবরাজ’দের পতন ও মূর্ছার ভবিষ্যদ্বাণী করিলেন— কিন্তু, সুশান্ত সিংহ রাজপুতের নামটি কোথাও শুনা যাইল না। আশ্চর্য বটে। বলিউডের এই বিহারি অভিনেতার আকস্মিক মৃত্যুর পর বিহারে বিজেপি যে ভঙ্গিতে ‘সুশান্তের জন্য ন্যায়’ দাবি করিয়া তাহাকেই নির্বাচনী প্রচারের মূল সুর করিয়া লইয়াছিল, সেই পরিপ্রেক্ষিতে আজিকার নীরবতা বড় উচ্চগ্রামে বাজিতেছে। সুশান্ত কেন আর নির্বাচনী-প্রশ্ন নহেন, তাহা বুঝিতে রাজনীতিজ্ঞ হইবার প্রয়োজন নাই। শত চেষ্টাতেও অভিনেতার মৃত্যুতে অন্য কাহাকে দায়ী করা সম্ভব হইল না। বলিউডের নায়ক-পরিচালক-প্রযোজকদের নহে, সুশান্তের বান্ধবী ও তাঁহার পরিবারকেও নহে। সিবিআই, ইডি, নার্কোটিক্স কন্ট্রোল বুরো— তাবড় রাষ্ট্রীয় এজেন্সির সর্বাত্মক প্রচেষ্টাতেও রিয়া চক্রবর্তীকে দোষী প্রমাণ করা এখনও সম্ভব হয় নাই। কাজেই, সুশান্তের প্রশ্নে হাতে থাকিল একটি মৃত্যু— ষড়যন্ত্রহীন মৃত্যু। সেই মৃতদেহ দেখাইয়া ভোট চাওয়া যায় না। অতএব, বিহারে বিজেপি সুশান্ত সিংহ রাজপুতের জন্য ন্যায়ের দাবিকে আঁস্তাকুড়ে নিক্ষেপ করিল। এবং বুঝাইয়া দিল, বিহারের ভূমিপুত্রের প্রতি শ্রদ্ধা, তাঁহার জন্য ন্যায়বিচার— সবই কৌশলমাত্র। সেই কৌশলে ভোট না আসিলে ভিন্নতর কৌশল গ্রহণ করিতে দ্বিধা নাই। ইহাতে বিহারের মানুষের, বিহারি সত্তার অপমান হইল কি না, সেই প্রশ্নটি সম্ভবত বিজেপির নিকট অপ্রাসঙ্গিক।

একটি ন্যায়ের দাবির পিছনে কতগুলি অন্যায় লুকাইয়া থাকিতে পারে, সুশান্ত-পর্ব তাহার অভ্রান্ত উদাহরণ। একটি মৃত্যুর ঘটনাকে কী ভাবে ক্রমে রাজনৈতিক প্রশ্নে পরিণত করিয়া তোলা হইল, গোটা দেশ তাহার সাক্ষী। কেন, সেই কারণটিও স্পষ্ট— অর্থনীতি হইতে প্রতিরক্ষা, প্রতিটি ক্ষেত্রেই কেন্দ্রীয় সরকার যে অপার ব্যর্থতার প্রমাণ দিতেছে, সেগুলি হইতে জনগণের, বিশেষত বিহারের ভোটারদের, নজর সরাইয়া রাখা। ইহাকে অন্যায় বলা চলে কি না, কেহ প্রশ্ন তুলিতে পারেন— হাজার হউক, রাজনীতির খেলায় নিজের দোষ ঢাকিবার চেষ্টা সব পক্ষই করিয়া থাকে। কিন্তু, তাহার জন্য যে ভাবে অন্য অনেককে দোষী সাব্যস্ত করিবার চেষ্টা হইল, যে ভঙ্গিতে কর্ণ জোহর হইতে রিয়া চক্রবর্তীদের বিনা বিচারেই বিভিন্ন মাপের অপরাধী সাব্যস্ত করিয়া দেওয়া হইল, তাহাকে অন্যায় না বলিয়া উপায় নাই। সংবাদমাধ্যমের একাংশ যে ভাবে স্বেচ্ছায় ব্যবহৃত হইল, যে ভঙ্গিতে সরকারের দোষ ঢাকিতে জান লড়াইয়া দিল, তাহাকেও অন্যায় বলাই বিধেয়। একাধারে সরকারের জনসংযোগ সংস্থা ও উকিল হইয়া উঠা সংবাদমাধ্যমের কাজ নহে— তাহা গণতন্ত্রের পক্ষে দুর্ভাগ্যজনক।

এবং, সর্বাধিক অন্যায় কি সুশান্ত সিংহ রাজপুতের প্রতি হইল না? যে ভাবে প্রথমে তাঁহাকে ব্যবহার করা হইল, এবং যথেষ্ট কার্যকর না হওয়ায় তাঁহাকে ছুড়িয়াও ফেলা হইল, তাহাতে স্পষ্ট— বিজেপি তাঁহাকে ‘মানুষ’ হিসাবে দেখে নাই, নেহাতই রাজনৈতিক অস্ত্র বিবেচনা করিয়াছে। এই অসম্মান কাহারও প্রাপ্য হইতে পারে না— তাহা ন্যায়ের একেবারে গোড়ার শর্ত। বিজেপি সেই ন্যায়ের দর্শনের খবর সম্ভবত রাখে না।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy