Advertisement
২৩ নভেম্বর ২০২৪
Madrasa

ভ্রমের ভূত

মাদ্রাসা লইয়া সংখ্যাগুরু বাঙালি সমাজ যে একেবারেই স্বচ্ছ ধারণা বহন করে না, ইহা লইয়া সংশয়ের অপেক্ষা নাই।

ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

শেষ আপডেট: ১৫ জানুয়ারি ২০২০ ০০:০৪
Share: Save:

মাদ্রাসা লইয়া সংখ্যাগুরু বাঙালি সমাজ যে একেবারেই স্বচ্ছ ধারণা বহন করে না, ইহা লইয়া সংশয়ের অপেক্ষা নাই। নানা আলোচনার পরিসর হইতে অনুমান করা যায়, ইসলামপ্রধান শিক্ষাপ্রাঙ্গণ লইয়া ভ্রমের ভূত মাথার ভিতর বাস করে। সেই ভূত দূর করিতে মাদ্রাসা সার্ভিস কমিশন লইয়া সুপ্রিম কোর্টের সাম্প্রতিক রায়টি পড়িয়া দেখা জরুরি। উক্ত কমিশনকে বৈধ স্বীকৃতি দিয়া দুই বিচারপতি জানাইয়াছেন, সংখ্যালঘু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের হস্তে শর্তহীন ক্ষমতা থাকা চলিবে না। পশ্চিমবঙ্গের বিদ্যালয়গুলির নিয়োগকর্তা স্কুল সার্ভিস কমিশন, তদ্রূপে মাদ্রাসার ক্ষেত্রেও নিয়োগের ক্ষমতা মাদ্রাসা সার্ভিস কমিশনের হস্তে। ২০০৮ সালে বামফ্রন্ট সরকার কমিশন তৈয়ারি করিলেও উহার বৈধতা লইয়া আদালতের দ্বারস্থ হয় কাঁথির এক মাদ্রাসা কর্তৃপক্ষ। অনেকগুলি বৎসর অতিক্রান্ত হইয়াছে, মামলা হাইকোর্ট হইতে সুপ্রিম কোর্টে পৌঁছাইয়াছে। শেষাবধি কমিশনের পক্ষে রায় দান করিয়া সুপ্রিম কোর্টের যুক্তি, সাংবিধানিক রক্ষাকবচের বলে পেশাদার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে মেধার ভিত্তিতে নিয়োগ ঠেকাইয়া রাখিতে পারে না সংখ্যালঘু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। ‘সংখ্যালঘু’ অপেক্ষা ‘শিক্ষা প্রতিষ্ঠান’ কথাটি গুরুতর, বুঝিয়া লওয়া আবশ্যক।

এবং ইহাও অনুধাবন করা প্রয়োজন যে বিদ্যালয়ের সহিত মাদ্রাসার মূলগত তফাত নাই। এ-ক্ষণে দশম শ্রেণির যে পরীক্ষা হয়, তাহাতে ইসলাম ও আরবি শিক্ষা— যথাক্রমে একশত ও পঞ্চাশ নম্বরের পরীক্ষা— বিনা দুই প্রতিষ্ঠানে কোনও ফারাক নাই। বিদ্যালয় ও মাদ্রাসা উভয় স্থলেই নানা ধর্ম সম্প্রদায়ের মানুষ পাঠদান ও পাঠগ্রহণের কাজ করেন। ২০১৭ সালে হাই মাদ্রাসার মাধ্যমিক পরীক্ষায় রাজ্যের মধ্যে তৃতীয় হইয়া আলো কাড়িয়াছিলেন খলতপুর হাই মাদ্রাসার কৃতী হিন্দু ছাত্রী প্রশমা শাসমল। চারিপার্শ্বে মাদ্রাসা লইয়া যা অপপ্রচারের ঘনঘটা, তাহাতে ইহাকে ভুয়া খবর বলিয়া দাগাইয়া দেওয়া আশঙ্কা নিশ্চিত, তাই ফারাকগুলি বিশদে জানাইয়া দিবার প্রচেষ্টা। ইহাও স্মরণে রাখা দরকার, অত্র খারিজি মাদ্রাসা বলিয়াও এক প্রকার প্রতিষ্ঠান বর্তমান, যেখানে কেবল ধর্মীয় শিক্ষার পাঠদান করা হয়। উহা সাধারণ শিক্ষাগ্রহণের স্থান নহে, বরং ইমামতি বা ইসলামি ধর্মগুরু তৈয়ারির প্রশিক্ষণ স্থল। ঘৃণার কারবারিরা অজ্ঞানতার সুযোগ লইয়া হাই মাদ্রাসা ও খারিজি মাদ্রাসাকে গুলাইয়া দিবার চেষ্টা করে, যদিও বাস্তবে দুইয়ের ফারাক বিশ যোজন।

আদালতের রায়ের সর্বাধিক উজ্জ্বল দিকটি হইল, ফারাক বুঝাইবার কাজটি এই রায়ের মাধ্যমে সম্পন্ন হওয়া সম্ভব। সংখ্যালঘু শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিসাবে মাদ্রাসায় নিয়োগের ভার তাহাদের হাতে আর না থাকায় স্বজনপোষণ ও দুর্নীতি, তৎসূত্রে কেবল সংখ্যালঘুদের চাকুরি নিশ্চিত করিবার যে আশঙ্কা ছিল, তাহাও বহুলাংশে দূর হইবে। ধর্মসংক্রান্ত মাপকাঠি পরিহার করিয়া যে রূপে কেন্দ্রীয় এক কমিশনের মাধ্যমে যে কোনও নাগরিক বিদ্যালয়ে পড়াইবার সুযোগ পাইতে পারেন, তেমনই পাইবেন মাদ্রাসাতেও। ইহার ফলে নিশ্চিত রূপে সংখ্যালঘুরা লাভবান হইবেন। ২০১৩ সাল হইতে মাদ্রাসায় শিক্ষক নিয়োগে যে অচলাবস্থা তৈয়ারি হইয়াছিল, তাহা কাটিয়া প্রচুর মহিলা ও পুরুষ চাকুরি পাইবেন। সামাজিক যোগাযোগের সেতুটি রচিত হইবে, এমন একটি কুহকী আশাও রহিল।

অন্য বিষয়গুলি:

Madrasa Madrasa Serviece Commission Bengali Society
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy