Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
Babri Masjid Demolition Case

দোষ কাহারও নহে

শিলান্যাস-উত্তর ভারতে আডবাণী-জোশী-উমা ভারতীদের বিচারের কি আদৌ কোনও তাৎপর্য অবশিষ্ট ছিল? 

ফাইল চিত্র।

ফাইল চিত্র।

শেষ আপডেট: ০১ অক্টোবর ২০২০ ০০:৩২
Share: Save:

তথ্যপ্রমাণের অভাবেই বেকসুর খালাস পাইলেন লালকৃষ্ণ আডবাণী, মুরলীমনোহর জোশী, উমা ভারতী-সহ বাবরি ধ্বংস মামলায় অভিযুক্তরা। আদালতের সিদ্ধান্ত শিরোধার্য, তবে গত নভেম্বরের কথা স্মরণ করিয়া কেহ প্রশ্ন করিতেই পারেন, বিতর্কিত স্থলটিতেই যে রামের জন্মভূমি, তাহারও প্রমাণ ছিল না— তবু মন্দির স্থাপনের সিদ্ধান্তটি সেই অভাবের চোরাবালিতে আটকাইয়া যায় নাই কেন? না কি, প্রমাণ নহে— রাম জন্মভূমি বিষয়ে ভক্তজনের যে বিশ্বাস বা ভাবাবেগ ছিল, আডবাণী আদি নেতাদের অপরাধ সম্বন্ধে সেই বিশ্বাস বা আবেগের অভাবই তাঁহাদের নির্দোষ প্রমাণ করিল? এ ক্ষণে কাহারও সন্দেহ হইতে পারে, ওইখানে আদৌ কোনও মসজিদ ছিল তো? তাহার কি যথেষ্ট প্রমাণ আছে? না কি, সেই স্থানে যাহা ছিল, তাহা ‘কাঠামো’মাত্র, বিজেপি মুখপাত্ররা যেমন বলিয়া আসিয়াছেন— এবং, আপনা হইতেই তাহা ভাঙিয়া পড়িয়াছিল? কে বলিতে পারে, হিন্দুরাষ্ট্রের ভিতে কাঠামোটি হয়তো আত্মবলিদানই করিয়াছিল! এবং, সেই হিন্দুরাষ্ট্রের মহাসৌধের ভিত্তিপ্রস্তর গত ৫ অগস্ট গাঁথা হইয়া গিয়াছে— হিন্দুত্ববাদী প্রতিশ্রুতি শিরোধার্য করিয়া মন্দির ‘ওইখানেই প্রতিষ্ঠিত হইতেছে’। মহামান্য আদালতের প্রতি সম্পূর্ণ শ্রদ্ধা বজায় রাখিয়াও কেহ প্রশ্ন পারেন, শিলান্যাস-উত্তর ভারতে আডবাণী-জোশী-উমা ভারতীদের বিচারের কি আদৌ কোনও তাৎপর্য অবশিষ্ট ছিল?

এই প্রশ্নের উত্তরে সর্বশক্তিতে ‘হ্যাঁ’ বলা ভিন্ন উপায় নাই। রাম নামক কোনও চরিত্র আদৌ কখনও ছিলেন কি না; থাকিলেও, অযোধ্যার বিতর্কিত পরিসরটিতেই তাঁহার জন্ম কি না; হইলেও, সেইখানেই মন্দির গড়া আবশ্যক কি না— সব প্রশ্নের ঊর্ধ্বে ছিল একটি সত্য: ১৯৯২ সালের ৬ ডিসেম্বর অযোধ্যায় একটি ঐতিহাসিক মসজিদ ধ্বংস করা হইয়াছিল। গত নভেম্বরে সুপ্রিম কোর্ট বলিয়াছিল, বাবরি মসজিদ ধ্বংস করা ছিল এক ভয়ঙ্কর অপরাধ। সিবিআই আদালতও সেই ঘটনাকে ‘অপরাধ’ হিসাবেই গণ্য করিয়াছে। সেই ধ্বংসের পিছনে আডবাণীদের কী ভূমিকা ছিল, প্রশ্ন তাহাই। সেই দিন নেতারা প্ররোচনামূলক ভাষণ দিয়াছিলেন, তাহার ‘সাক্ষ্যপ্রমাণ’ যদি না-ও বা থাকে, আডবাণীর রথযাত্রা তো প্রমাণহীন নহে। অযোধ্যায় করসেবার আহ্বানও প্রমাণহীন নহে। মন্দির বানাইবার হুঙ্কারটিও নিতান্ত গোপন ছিল না। ধর্মোন্মাদ জনতাকে একটি ঐতিহাসিক সৌধে একত্র করিয়া সেইখানে মন্দির নির্মাণের হাঁক দেওয়াকে প্ররোচনা হিসাবে বিবেচনা না করিবার কারণটি জনমানসে স্পষ্ট হওয়া জরুরি ছিল। যে মন্দির নির্মাণের পূর্বশর্ত বহুপ্রাচীন মসজিদটি ধ্বংস করা, সেই মন্দির নির্মাণের হাঁক দেওয়া কি মসজিদ ভাঙিতে প্ররোচনা নহে? সিবিআই আদালতের রায়ে এই প্রশ্নের স্পষ্ট উত্তর মিলিল না।

বিতর্কিত জমিটির মালিকানা ন্যায্যত কাহার, সেই দেওয়ানি মামলার মীমাংসায় সময় লাগিতে পারে। কিন্তু মসজিদ ধ্বংসের ‘ভয়ঙ্কর অপরাধ’-এর বিচার হইতে এত সময় লাগিল কেন, এই প্রশ্নটি উত্তরহীন। শুধু একটি ঐতিহাসিক সৌধ ধ্বংসই অপরাধ ছিল না, অপরাধটি ছিল ভারতের ধর্মনিরপেক্ষ চরিত্রের বিরুদ্ধে। বাবরি মসজিদ ধ্বংস যে কোনও রাজনৈতিক কার্যক্রম নহে, সেই অপরাধের প্রকৃত গুরুত্ব যে সঙ্কীর্ণ রাজনীতির তুলনায় ঢের বেশি, দীর্ঘসূত্র বিচার এই কথাটি ভুলাইয়া দিল। তাহার দ্রুত বিচার, এবং অপরাধীদের শাস্তির মাধ্যমেই ভারতীয় রাষ্ট্র সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তার আশ্বাস দিতে পারিত। সেই আশ্বাস দয়ার দান নহে। স্বাধীন দেশের জন্ম হইতে রাষ্ট্র যে ভাবে নিরাপত্তা নিশ্চিত করিতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ, বাবরি মসজিদ ধ্বংসকারীদের শাস্তিবিধান না হওয়া দেশের সেই মৌলিক চরিত্রের অবমাননা। বিচারে তাই ভারত নামক বহুত্ববাদী, ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্রের পরাজয় ঘটিল।

অন্য বিষয়গুলি:

Babri Masjid Demolition Case Babri Masjid
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy