Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪

ছি

শাসক এবং বিরোধী, উভয়েরই চিন্তায় পড়িবার কথা যে প্রার্থীকে নিগ্রহ করিলেন যিনি, তাঁহার রাজনৈতিক পরিচয় তেমন প্রবল নহে।

করিমপুরের বিজেপি প্রার্থী জয়প্রকাশ মজুমদারকে পদাঘাত। ইনসেটে অভিযুক্ত। নিজস্ব চিত্র

করিমপুরের বিজেপি প্রার্থী জয়প্রকাশ মজুমদারকে পদাঘাত। ইনসেটে অভিযুক্ত। নিজস্ব চিত্র

শেষ আপডেট: ২৭ নভেম্বর ২০১৯ ০০:৩৯
Share: Save:

বিজেপি প্রার্থী জয়প্রকাশ মজুমদারের নিগ্রহের ঘটনাটি সুতীব্র নিন্দার যোগ্য। কোনও সভ্য দেশে এমন ঘটনা ঘটিতে পারে, ভাবিতে কষ্ট হয়। করিমপুর কেন্দ্রের প্রার্থী বিবাদে জড়াইয়া পড়িতেছিলেন কি না, কেন্দ্রীয় আধাসেনা বাহিনী তাঁহাকে বুথ হইতে বহিষ্কার করিয়াছিল কি না, তিনি নিজেই পরিস্থিতি তাতাইয়া তুলিতেছিলেন কি না, এই সকল প্রশ্নই আসলে অপ্রয়োজনীয়। কারণ, কোনও পরিস্থিতিতেই প্রার্থীর সহিত এই আচরণ চলিতে পারে না। প্রার্থী হইবারও প্রয়োজন নাই, কাহাকেও কি এমন ভাবে পদাঘাত করা চলে? টেলিভিশন ক্যামেরার দৌলতে ঘটনাটি অনেকেই দেখিয়াছেন। এবং, আশ্চর্যের কথা, অনেকের নিকটই প্রথম দৃষ্টিতে ঘটনাটি তত নিন্দার্হ ঠেকে নাই। আসলে, রাজনৈতিক নিগ্রহের সহিত পশ্চিমবঙ্গের জনসমাজ এমনই পরিচিত হইয়া উঠিয়াছে, তাহা এমনই জলভাত হইয়া গিয়াছে যে ঘটনাগুলিকে অস্বাভাবিক বলিয়াই যেন আর মনে হয় না। গুরুতর দুশ্চিন্তার বিষয়। কেবল এই একটি ঘটনার নহে, এই গোটা পরিস্থিতির দায় লইতে হইবে প্রশাসনকে। বহু ক্ষেত্রেই যে প্রশাসন দেখিয়াও না-দেখিয়া থাকে, রাজনৈতিক রঙের উপর ন্যায়-অন্যায় বিচার সর্বাংশে নির্ভর করে, তাহা ইতিমধ্যে রাজ্যবাসী জানিয়া গিয়াছেন। জানিয়া গিয়াছেন যে, অপরাধী বুক ফুলাইয়া ঘুরে, প্রশাসনের হুঁশ ফিরে না। রাজনৈতিক নিগ্রহের যে শাস্তি হওয়া উচিত— এই কথাটিই পশ্চিমবঙ্গের জনপরিসর হইতে হারাইতে বসিয়াছে। মজুমদারের নিগ্রহের ঘটনা লইয়া রাজনীতি ও চাপান-উতোর ছাপাইয়া নেতারা যদি কিছু আত্মবিশ্লেষণ করেন, একমাত্র তাহাতেই রাজ্যের মঙ্গল। ব্যক্তি জয়প্রকাশ মজুমদার নহেন, করিমপুরে আক্রান্ত হইয়াছে রাজনৈতিক শিষ্টতার গণ্ডি। এই চৌকাঠ এক বার পার হইয়া গেলে ফিরিবার পথ খুঁজিয়া পাওয়া কঠিন।

শাসক এবং বিরোধী, উভয়েরই চিন্তায় পড়িবার কথা যে প্রার্থীকে নিগ্রহ করিলেন যিনি, তাঁহার রাজনৈতিক পরিচয় তেমন প্রবল নহে। বিজেপির অভিযোগ যে তিনি তৃণমূল কংগ্রেসের সক্রিয় কর্মী। অভিযোগটিতে হয়তো সারবত্তা আছে— হয়তো নাই— কিন্তু, তিনি যে স্থানীয় রাজনীতির মঞ্চেও সুপ্রতিষ্ঠিত নহেন, তাহা এক রকম স্পষ্ট। এই অতীব অন্যায় আচরণটি তিনি করিবার সাহস পাইলেন কী ভাবে, ভাবিয়া দেখা দরকার। হয়তো ইহাই তাঁহার নিকট রাজনৈতিক সিঁড়ি টপকাইবার দ্রুততম পন্থা। হয়তো এই ভাবেই রাজ্য রাজনীতির পাদপ্রদীপের আলোয় কেহ আসিতে পারেন। সত্যই তো, পশ্চিমবঙ্গে বিভিন্ন রঙের রাজনীতিতে বেশ কিছু নেতা-উপনেতার উত্থান ঘটিয়াছে এই পথেই। রাজনৈতিক সৌজন্য বস্তুটি পশ্চিমবঙ্গে অলীক হইয়া উঠিয়াছে। নীচতলার এই বেয়াদবিতে উপরমহলের স্মিত সস্নেহ ও সক্রিয় প্রশ্রয়। ইহাতে সঙ্কীর্ণ দলীয় রাজনীতির রমরমা হইতেছে, কিন্তু, মারাত্মক ক্ষতি হইতেছে পশ্চিমবঙ্গের। রাজনৈতিক বা অন্য কোনও ক্ষেত্রে কেহ প্রবলতম প্রতিদ্বন্দ্বী হইতেই পারেন, তাঁহার সহিত চূড়ান্ত মতবিরোধও থাকিতে পারে, কিন্তু তবুও যে কোনও মতেই শারীরিক নিগ্রহ করা চলে না, এই মূলগত কথাটি পশ্চিমবঙ্গের সমাজ ভুলিতে বসিয়াছে। এই দায় নেতাদেরই লইতে হইবে। প্রায়শ্চিত্ত না করিলে অশিষ্টতার সেই আগুন এক দিন তাঁহাদেরও ছাড়িয়া কথা বলিবে না, সব দলের নেতারাই কথাটি স্মরণে রাখিতে পারেন।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE