Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
GDP

কৃষির ভরসায়

কৃষিক্ষেত্রটি যদি এত দিন ধরিয়া এত অবহেলিত না হইত, তবে আজ কৃষিই বৃহৎ সহায় হইতে পারিত।

—ফাইল চিত্র।

—ফাইল চিত্র।

শেষ আপডেট: ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২০ ০০:০০
Share: Save:

ভারতের সংসারে কৃষি যেন ভাঙা কুলা। কর্মহীনতার জঞ্জাল বহিতে আছে। আজ তুচ্ছ কুলাটিই ত্রাণের বাহন হইয়াছে। অতিমারির অভিঘাতে শিল্প বেহাল। জিডিপি প্রায় চব্বিশ শতাংশ পড়িয়াছে, রাজকোষের ঘাটতি বেলাগাম। কেবল স্বাভাবিক বর্ষা হইবার জন্য কৃষি ও সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রে উৎপাদন বাড়িয়াছে ৩.৪ শতাংশ। ইহাতে সামান্য ভরসা মিলিতে পারে, কিন্তু সেই সঙ্গে আক্ষেপ বহু গুণ বাড়িতে বাধ্য। কৃষিক্ষেত্রটি যদি এত দিন ধরিয়া এত অবহেলিত না হইত, তবে আজ কৃষিই বৃহৎ সহায় হইতে পারিত। বাস্তবে ঘটিয়াছে বিপরীত। গত দুই দশকে কৃষির পরিকাঠামোতে প্রায় কোনও বিনিয়োগই হয় নাই। ভারতের কৃষিজমির এক বৃহৎ অংশ আজও সেচ-সেবিত নহে। উর্বর জমি এবং অনুকূল প্রাকৃতিক পরিবেশ সত্ত্বেও একরপ্রতি ফসলের উৎপাদনে ভারত অধিকাংশ উন্নত দেশের পশ্চাতে। অপর দিকে, ফসলের পরিমাণ বাড়াইতে গিয়া যে সকল অপরিণামদর্শী ব্যবস্থা গ্রহণ করিয়াছে সরকার, তাহাতে মাটির স্বাভাবিক গঠন নষ্ট হইয়াছে, ভূগর্ভের জলস্তর কমিয়াছে, রাসায়নিক সার এবং কীটনাশকের অতিরিক্ত ব্যবহারে ফসল দূষিত হইয়াছে। কৃষি উৎপাদন সংরক্ষণ, প্রক্রিয়াকরণ এবং বিপণনের সুষ্ঠু ব্যবস্থার অভাবে আনাজ, ফল, দুধ প্রভৃতির বিপুল অপচয় হইতেছে। তাহাতে চাষি ও ক্রেতা, উভয়েরই ক্ষতি।

সেই ক্ষতির আর্থিক মূল্যের নানা হিসাব হইয়াছে, কিন্তু পুষ্টিমূল্যের অপচয়ের হিসাব করিবে কে? অপুষ্টি ও ক্ষুধা চির কালই ছাই-চাপা আগুনের ন্যায় অগোচরে ভারতের জীবনীশক্তি ক্ষয় করিতেছে। আজ কর্মহীনতা এবং আর্থিক মন্দার কুবাতাসে সেই ক্ষুধার আগুন দাউদাউ জ্বলিয়া উঠিয়াছে। সরকার রেশন ব্যবস্থার মাধ্যমে কিঞ্চিৎ খাদ্যশস্য বিতরণ করিয়াই দায় সারিতেছে। কিন্তু বাজারে খাদ্যের মূল্যস্ফীতি রিজ়ার্ভ ব্যাঙ্কের নির্দিষ্ট লক্ষ্যমাত্রার উপরেই রহিয়া গিয়াছে লকডাউনের মাসগুলিতে। অস্যার্থ, বাজারে বিবিধ খাদ্যদ্রব্যের দাম অতিশয় চড়া, তাহা অধিকাংশ ক্রেতার নাগালের বাহিরে। অতিবর্ষণে কিছু আনাজ নষ্ট হইয়াছে, লোকাল ট্রেন অমিল হইবার জন্য পরিবহণের সমস্যাও আছে। কিন্তু নানা অনুসন্ধানে ইহা স্পষ্ট যে, মধ্যস্বত্বভোগী ব্যবসায়ীদের চক্র আজও কৃষির বাজার নিয়ন্ত্রণ করিতেছে। চাষি ও ক্রেতা, উভয়ই ব্যবসায়ীর হাতের পুতুল মাত্র।

এই ব্যবসায়ী চক্রকে প্রতিহত করিয়া চাষির জন্য ফসলের ন্যায্য মূল্য, এবং ক্রেতার জন্য সুলভে পুষ্টিকর খাদ্যের জোগান, এই দুইটি নিশ্চিত করিবার দায় ছিল সরকারেরই। কিন্তু দলমতনির্বিশেষে সরকার সে দায় এড়াইয়াছে। প্রধানত খাদ্যের আমদানি নিয়ন্ত্রণ করিয়া চাষিকে সুরক্ষা দিতে চাহিয়াছে সরকার, এবং রফতানি নিয়ন্ত্রণ করিয়া ক্রেতাকে। ইহাতে আর যাহাই হউক, কৃষির উন্নতি হইতে পারে না। ভারতে গত এক দশকে কৃষি উৎপাদন বাড়িয়াছে অথচ গ্রামের মানুষের ক্রয়ক্ষমতা কমিয়াছে, এই তথ্য সেই সত্যেরই সাক্ষ্য দেয়। গত কয়েক বৎসরে কখনও ফসলের মূল্যে পতন, কখনও খাদ্যের মূল্যে অতিরিক্ত বৃদ্ধি লইয়া জনরোষ বিস্ফোরক আকার লইয়াছে। সরকার প্রতি বারই নানা প্রতিশ্রুতি দিয়া তাহা চাপা দিয়াছে। ক্রমে স্পষ্ট হইয়াছে, ঘোষণাগুলি কৌশলমাত্র, সংস্কারে মন নাই সরকারের। কৃষি উপেক্ষিতই রহিয়াছে, এই দেশ তাহার সমাদর করিতে শেখে নাই।

অন্য বিষয়গুলি:

GDP GDP Contraction Agricultur Farming
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy