Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪

সম্পাদক সমীপেষু: আলোর ঝরনাধারা

সুচিত্রা মিত্রও তো বলেছেন: ‘‘সারাটা জীবন কেটেছে/তাঁর গানের ঝরনাতলায়/সুখে দুঃখে ঝড়ে ঝঞ্ঝায়/ আত্মপ্রত্যয় এসেছে/ চলায় বলায়।/এই এক গীতবিতান/আমার কাছে/গীতা বাইবেল কোরান/তাই ভালোবাসি এই গান।’’ (রবীন্দ্রসঙ্গীত জিজ্ঞাসা: সুচিত্রা মিত্র)।

শেষ আপডেট: ০২ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০০:০০
Share: Save:

নীললোহিতের ‘হঠাৎ দেখা’ থেকে গৃহীত ‘রবীন্দ্রসঙ্গীতের আসরে’ শিরোনামে সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের একটা রচনার যৎসামান্য উদ্ধৃতি দেওয়ার লোভ সামলানো গেল না। ‘‘আমি অনেক দিন বাদে একই আসরে কণিকা সুচিত্রার গান শুনলাম। সুচিত্রা মিত্রের এখনও চঞ্চলা গতি, তরতর করে এসে ঝপাস করে বসে পড়েন। মাথাটা একটু নিচু করে গান শুরু করেন। সেই ধারালো চকচকে গলা। বিরাট জলসায়, মিছিলে, কাঠের বাক্স দিয়ে বানানো মঞ্চে যেখানেই সুচিত্রা মিত্রকে তুলে দেওয়া হোক, অকুণ্ঠ গলায় তিনি গান ধরবেন, প্রেরণার মতন গান মার্গ সুর ঘেঁষা রবীন্দ্রসঙ্গীত। সুচিত্রা মিত্র যেন নিজেই নিজের ভাগ্যবিজয়ী।’’ (সুব্রত রুদ্র সম্পাদিত: রবীন্দ্রসঙ্গীত চিন্তা)। কত দিন আগেকার লেখা। তবু, মনে হয়, সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় কী অবলীলায় বলেছিলেন, ‘‘অকুণ্ঠ গলায় তিনি গান ধরবেন, প্রেরণার মতন ছড়িয়ে পড়ে সেই গান...।’’

সুচিত্রা মিত্রও তো বলেছেন: ‘‘সারাটা জীবন কেটেছে/তাঁর গানের ঝরনাতলায়/সুখে দুঃখে ঝড়ে ঝঞ্ঝায়/ আত্মপ্রত্যয় এসেছে/ চলায় বলায়।/এই এক গীতবিতান/আমার কাছে/গীতা বাইবেল কোরান/তাই ভালোবাসি এই গান।’’ (রবীন্দ্রসঙ্গীত জিজ্ঞাসা: সুচিত্রা মিত্র)।

১৯৪৬ সালের ৭ অগস্ট (২২ শ্রাবণ ১৩৫৩) যে শিশু সঙ্গীতায়নের জন্ম হয়েছিল, ২০১১-র ৩ জানুয়ারি, তাঁর সুরলোকে গমনের পর কেন সেই ঐতিহ্যবাহী প্রতিষ্ঠান তার ঔজ্জ্বল্য হারাল, সে কথা ঊহ্যই থাক। দেবাশিস ভট্টাচার্য তাঁর প্রতিবেদনে (যে ধ্রুবপদ দিয়েছ বাঁধি..., ১৮-৮) একটু ছুঁয়ে গিয়েছেন শুধু।

শনিবার সন্ধে, রবিবার সকাল যে আমাদের কাছে পরমপ্রাপ্তি হিসেবে প্রতি বার রচিত হত! সুচিত্রাদি ক্লাস নিচ্ছেন, গাড়ি থেকে নামছেন ৩৭ নম্বর পরাশর রোডের বাড়িটাতে। স্পেশাল ক্লাসে বসার জায়গা পাওয়া দুরূহ হচ্ছিল ক্রমে। কত অনুষ্ঠানের অনুশীলন, বালিগঞ্জ ফাঁড়ির কাছে তাঁর দশ তলার ফ্ল্যাটে কত রিহার্সালের শুভ মুহূর্ত— সব, সব ভিড় করে আসছে মনে। ‘রবিতীর্থ’ বলতেই তো আমাদের মনে ফুটে ওঠে সেই ছবি: সুচিত্রাদি হারমোনিয়ামে। পাশে বসে আছেন কাশীদা (কাশীনাথ রায়)। দুলালদা তবলায় সুর বাঁধছেন। দিদি জেনে নিচ্ছেন, আগের ক্লাসে কী গান শেখানো হয়েছে। ক্লাস শুরু করবার আগে তিনি আশা করেন মন্দিরের শুদ্ধতা বা গির্জার নিস্তব্ধতা। দুটো সুরেলা হারমোনিয়ামে সুর ভেসে আসে। তিনি নির্দেশ দেন, ‘‘দুলাল, ঠেকা দে। দুটো ঠেকা যাবে। তার পর গান ধরবে।’’ এক ঘর কণ্ঠস্বর সমবেত সুর তোলে আগের দুটো ক্লাসে শেখানো গান: ‘‘পান্থ, এখনও কেন অলসিত অঙ্গ/হেরো, পুষ্পবনে জাগে বিহঙ্গ।’’ পুরো গানটা দু’তিন বার গাওয়া হলে ছোট ছোট গ্রুপে গান শোনাবার পালা। বড় সূক্ষ্ম কান তাঁর। ত্রুটি-বিচ্যুতিগুলো অসীম ধৈর্য সহকারে শুধরে দেবেন। কত ছাত্রছাত্রীর কত প্রশ্ন। কত জনের কত দাবি। সময়ে অসময়ে কত লোক যে কত ভাবে তাঁকে বিব্রত করেন। তবু, সব সইতে হয় তাঁকে। আর আমরা? ক্লাস শেষ হলেও বসে থাকি প্রিয় ‘রবিতীর্থ’-র চবুতরায়। ভোলা যায় সেই সুখস্মৃতি? এই প্রবাদপ্রতিম প্রতিষ্ঠানটি সম্পর্কে অলোকরঞ্জন দাশগুপ্ত লিখেছিলেন: ‘‘শান্তিনিকেতন ছেড়ে নগরের পথে/আমিও যখনই যাই শ্রাবণে শরতে/একান্ত ঠিকানা বলতে এ গীতবিতান/রবিতীর্থ আছে জানি পরাশর রোডে।’’ সত্যিই ছিল। এখন? না, সে কথা থাক।

তাঁর নিয়মানুবর্তিতার কথা না বললে অসম্পূর্ণ হবে সম্মাননা জ্ঞাপন। ক্লাসে কেউ দেরি করে ঢুকলে প্রচণ্ড অসন্তুষ্ট হতেন। যে কোনও শিক্ষার মতো রবীন্দ্রসঙ্গীত শিক্ষাও যে একটি শৃঙ্খলা দাবি করে, এ কথা বারংবার বলতেন। একটা অনুষ্ঠানের কথা মনে পড়ছে। ১৯৮১ সালের ৩১ জানুয়ারি। ইউকো ব্যাঙ্ক শিলিগুড়ি শাখার রিক্রিয়েশন ক্লাব আয়োজন করেছিল তাঁর একক গানের অনুষ্ঠান। তিনি এবং তাঁর যন্ত্র-সহযোগীরা ছিলেন ‘মালুজা’ হোটেলে।
আমরা জানতে গিয়েছিলাম, দিদি, আপনাকে ক’টায় নিতে আসব? ‘‘তোমাদের অনুষ্ঠান ক’টায় শুরু?’’ ছ’টায়। তাঁর জবাব ছিল: ‘‘সুচিত্রা মিত্রর ছ’টা মানে কিন্তু পাঁচটা উনষাট। ছ’টা এক নয়।’’

এক দিন রোববার সকালে ক্লাসে আসতে তাঁর দেরি হল। দুঃখ প্রকাশ করে বললেন, একটা ছবির কাজে গত কাল রাতে ফিরতে বেশ দেরি হয়েছে। তার পর ‘দহন’ মুক্তি পেল। আমরা আপ্লুত তাঁর অভিনয় দেখে। এবং ক্ষুব্ধ, এ কার কণ্ঠস্বর ব্যবহৃত হয়েছে? ছবির চরিত্রানুযায়ী ওই বেমানান কণ্ঠ আমাদের প্রত্যাশা পূরণ করেনি। এখনও ভাবলে অবাক হই। কেন ঋতুপর্ণ ঘোষ তাঁর গলা না রেখে ডাবিং করিয়েছিলেন? আমাদের প্রশ্নে সুচিত্রাদি ‘মুখ ফুটে’ কিছু না বললেও ‘চাপা দুঃখ’ কিন্তু বোধগম্য হয়েছিল তাঁর ছাত্রছাত্রীদের কাছে।

গাড়ি থেকে যখন তিনি নামতেন ‘রবিতীর্থ’তে, পথচারীরা, প্রতিবেশীরা সসম্ভ্রমে দু’দণ্ড তাঁকে দেখতেন। তিনি ক্লাস নিচ্ছেন, কত আপ্লুত শ্রোতা পরাশর রোডে দাঁড়িয়ে সেই ব্যক্তিত্বময়ীকে অবলোকন করে ধন্য হতেন। আর আমরা? ক্লাস শেষ হয়ে গিয়েছে কখন! আমরা চাতালে বসে আড্ডা মারছি। দিদি যাওয়ার সময় এক ঝলক দেখে স্নেহমিশ্রিত কণ্ঠে, একটু রাগত গলায় বললেন, ‘‘তোদের বাড়ি যেতে ইচ্ছে করে না, তাই না রে?’’ শুকদেবদা ফাইলপত্তর নিয়ে পিছন পিছন ছুটছে। ওই তো কাশীদা বেরিয়ে গেলেন। দুলালদাও। ‘রবিতীর্থ’র দরজা-জানালা বন্ধ হচ্ছে। আমরা আরও একটু আড্ডা মারব। তার পর তীর্থপতি ইনস্টিটিউশনের ফুটে শম্ভুর চায়ের দোকানে, লেবু-চায়ে গলা ভিজিয়ে যে যার গন্তব্যে রওনা দেব। সেই ‘গোল্লাছুট’ অতিক্রমণের জন্য আরও এক সপ্তাহের অপেক্ষা। আবার শনিবার। ক্লাস। সুচিত্রাদির সান্নিধ্য। রবীন্দ্রগানে দীক্ষিত হওয়ায় প্রতীক্ষা। এখন শুধু স্মৃতিচারণা। ‘দিন অবসান হল...।’ যদিও রবিতীর্থে এখন আলো জ্বলে। কিন্তু ২০১১-র ৩ জানুয়ারিতে যে আলো নিভে গিয়েছিল, তা কি আর কখনও জ্বলবে?

ধ্রুবজ্যোতি বাগচী

কলকাতা-১২৫

অসঙ্গত

জাকার্তায় অনুষ্ঠিত এশিয়ান গেমসে ২০০ মিটারে ফল্স স্টার্টের জন্য বাতিল হয়ে গিয়ে ভারতের তারকা অ্যাথলিট হিমা দাস যে কারণ দেখিয়েছেন (‘...বিস্ফোরক হিমা’, ২৯-৮)— দু’জন ব্যক্তি তাঁর বিরুদ্ধে অসমে অপপ্রচার চালাচ্ছেন, তাই তিনি মন­ঃসংযোগ হারিয়ে ফেলেছেন— তা সঙ্গত নয়। প্রথমত, ট্রেনিংয়ের জন্য এখন তাঁর বেশির ভাগ সময়টাই কাটে পাতিয়ালা, দিল্লি বা বিদেশে। মনঃসংযোগের অভাব বোধ করলে ভারতীয় দলের মনোবিদের কাছে না গিয়ে কেন তিনি স্টার্টিং ব্লকে এসে দাঁড়ালেন? তাঁর মনে রাখা উচিত ভারত সরকার তাঁর ট্রেনিংয়ের জন্য প্রতি মাসে বিপুল পরিমাণ অর্থ ব্যয় করেন। হিমা যখন ভিডিয়োতে এ সব মন্তব্য করছেন, তাঁর পাশে নাকি তখন ছিলেন অসমের কোচ নিপন দাস ও নবজিত মালাকার। তাঁরা তাঁদের ছাত্রীকে কেন এ ধরনের মন্তব্য করার থেকে বিরত করলেন না তাও ভেবে দেখার বিষয়।

তপনমোহন চক্রবর্তী

কলকাতা-৯১

ঠিক কী বোঝায়

বিশ্বভারতীর আচার্য পদে প্রধানমন্ত্রীর থাকা উচিত কি না, ১৯৫১ সাল এ নিয়ে সংসদে দীর্ঘ আলোচনা হয়েছিল। শেষ পর্যন্ত তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী আচার্যপদ গ্রহণ করেছিলেন। নিয়ম মেনে ভারতের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী বিশ্বভারতীর আচার্য। কিন্তু আনন্দবাজারে আলপনা রায় আচার্যের যোগ্যতা বিচারের দায়িত্ব নিয়েছেন (‘আচার্যকে যোগ্য হতে হবে’, ১২-৮)। তাঁর মানদণ্ড অনুযায়ী, অাচার্যকে ‘শিক্ষাবিদ’ ও ‘রবীন্দ্রমনস্ক’ হতে হবে। প্রশ্ন হল, এগুলো বলতে ঠিক কী বোঝায়? আমরা শান্তিনিকেতনের আশেপাশে ঘরবাড়ি করে থাকি, সুতরাং আমরা ‘রবীন্দ্রমনস্ক’? আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে কোনও ভাবে যুক্ত, অতএব আমরা ‘শিক্ষাবিদ’? এই সরলীকরণ অযৌক্তিক নয় কি? নিজেরা কতখানি শিক্ষামনস্ক ও রবীন্দ্রমনস্ক হয়ে উঠতে পেরেছি, সেই মূল্যায়ন কে করবে?

মৈনাক মুখোপাধ্যায়

শ্রীপল্লি, শান্তিনিকেতন

চিঠিপত্র পাঠানোর ঠিকানা

সম্পাদক সমীপেষু,

৬ প্রফুল্ল সরকার স্ট্রিট, কলকাতা-৭০০০০১।

ইমেল: letters@abp.in

যোগাযোগের নম্বর থাকলে ভাল হয়। চিঠির শেষে পুরো ডাক-ঠিকানা উল্লেখ করুন, ইমেল-এ পাঠানো হলেও।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE