Advertisement
২৫ নভেম্বর ২০২৪
Amit Mitra

উদ্দেশ্য-বিধেয়

অমিত মিত্র মহাশয়ের বাজেটের প্রধানতম গুণ, তাহাতে অপ্রত্যাশিত কিছু নাই। গত নয়টি বাজেটে তাঁহারা যাহা করিয়াছেন, এই দফাতেও তাহার ব্যত্যয় হয় নাই।

অমিত মিত্র।—ফাইল চিত্র

অমিত মিত্র।—ফাইল চিত্র

শেষ আপডেট: ১২ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ০০:১৯
Share: Save:

অমিত মিত্র মহাশয়ের বাজেটের প্রধানতম গুণ, তাহাতে অপ্রত্যাশিত কিছু নাই। গত নয়টি বাজেটে তাঁহারা যাহা করিয়াছেন, এই দফাতেও তাহার ব্যত্যয় হয় নাই। বহু মানুষের জন্য বহুবিধ প্রাপ্তির ব্যবস্থা আছে, ঋণের বোঝা লইয়া হাহুতাশ আছে, কেন্দ্রের নিকট প্রাপ্য টাকা আদায় হইতেছে না বলিয়া খেদ আছে। তাঁহাদের অর্থনৈতিক মডেলটিকে এক কথায় উড়াইয়া দিবার উপায় নাই। রাজ্যের মোট অভ্যন্তরীণ উৎপাদন (এসডিপি) বৃদ্ধির হারে পশ্চিমবঙ্গ দেশে প্রথম সারিতে। কিছু দিন পূর্বে কেন্দ্রীয় পরিসংখ্যান জানাইয়াছে, এই রাজ্যে যত দ্রুত হারে দারিদ্র কমিয়াছে, তাহাও দেশে অদ্বিতীয়। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়েরা ‘বাংলা মডেল’ লইয়া গর্ব করিতেই পারেন। অমিতবাবুর বর্তমান বাজেটে আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনের প্রস্তুতির গন্ধ তীব্র। তাহাও অভিনব নহে, প্রাক্‌-নির্বাচনী বাজেট গোটা দেশেই প্রকারান্তরে শাসক দলের নির্বাচনী ইস্তাহার হইয়া উঠে। গত লোকসভা নির্বাচনে যে অঞ্চলের, বা যে বয়ঃক্রমের ভোট বিরোধী ঝুলিতে গিয়াছিল, অমিত মিত্রের বাজেট তাঁহাদের প্রতি উদার হইয়াছে। চা শ্রমিকদের জন্য ‘চা সুন্দরী’ নামক গৃহ প্রকল্প, দরিদ্রের বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য ‘হাসির আলো’, তফসিলি জাতিভুক্ত প্রবীণদের পেনশন বা বেকার যুবক-যুবতীদের জন্য কর্মসংস্থান— বাজেটের উদ্দেশ্য-বিধেয় বোঝা কঠিন নহে। ইহাকে সর্বাঙ্গীণ তোষণ বলিলে অবিচার হইবে। সরকারি সাহায্যের এই অর্থনৈতিক মডেল যে রাজ্যের আয়বৃদ্ধি এবং তাহার বণ্টন, উভয় ক্ষেত্রেই অন্তত আংশিক ভাবে কার্যকর হইতেছে, পরিসংখ্যানই তাহার প্রমাণ।

তাহার পরেও অবশ্য এই বাজেট প্রসঙ্গে, এবং রাজ্য সরকারের অর্থনৈতিক ভাবনা প্রসঙ্গে, বেশ কিছু প্রশ্ন থাকিয়া যায়। সরকারের মোট ঋণের বোঝা বাড়িতেছে। অর্থমন্ত্রীই জানাইয়াছেন, রাজকোষ ঘাটতি বাঁধিয়া রাখিবার পথ হইতে তিনি বিচ্যুত হইবার সিদ্ধান্ত করিয়াছেন। এ-হেন অবস্থায়, যে বোঝা রাজ্য সরকারের বহন না করিলেও চলে, তাহার দায় লওয়া কেন? আয়ুষ্মান ভারত বা প্রধানমন্ত্রী কৃষক সম্মান প্রকল্পের জন্য কেন্দ্রীয় বরাদ্দ প্রত্যাখ্যান করিবার অবিবেচনাপ্রসূত জেদটি ছাড়া উচিত ছিল না কি? তাঁহারা স্মরণে রাখিতে পারেন, টাকা রাজ্য বা কেন্দ্রীয়, কোনও সরকারেরই সম্পত্তি নহে— টাকা জনগণের। কেন্দ্রের সহিত রাজনৈতিক বিরোধকে টাকা না লওয়ার জেদে পর্যবসিত করিয়া শেষ অবধি তাঁহারা পশ্চিমবঙ্গবাসীর ক্ষতিই করিতেছেন। দ্বিতীয় প্রশ্ন, বিশ্ববিদ্যালয়, প্রকল্প ইত্যাদির সংখ্যা বাড়িলেই কি কাজের কাজ হয়? যথা, একশত নয়া শিল্প পার্ক গঠনের পরিকল্পনা ঠিক কত দূর ফলপ্রদ হইবে? অভিজ্ঞতা কিন্তু বলে, শিল্প পার্কের সংখ্যার সহিত লগ্নির বৃদ্ধির প্রত্যক্ষ সংযোগ নাই। রাজ্য যদি ক্ষুদ্র শিল্পকে বিশেষ গুরুত্ব দিতে আগ্রহী হয়, তাহা বিলক্ষণ একটি নীতি হিসাবে গণ্য হইতে পারে। কিন্তু, সেই ক্ষেত্রে সরকারকে জানাইতে হইবে, নীতির ফল কী হইতেছে। তৃতীয় প্রশ্ন, এই বাজেটে বৃহৎ শিল্পের কথা বিশেষ নাই। ক্ষুদ্র শিল্পের দ্রুত বৃদ্ধির জন্যও বৃহৎ শিল্পের প্রসারণ প্রয়োজন, এই কথাটি অর্থমন্ত্রী বিলক্ষণ মানিবেন। তাঁহাদের বিকল্প ‘বাংলা মডেল’-কে সুস্থায়ী করিবার জন্য যে আর্থিক জোর থাকা প্রয়োজন, সেই দিকেও যে নজর দেওয়া জরুরি, অর্থমন্ত্রী তাহা বিস্মৃত হইলেন।

অন্য বিষয়গুলি:

Amit Mitra Bengal Budget 2020
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy