Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
Vodafone

বৃহত্তর ক্ষতি

আদালতের প্রতি সম্পূর্ণ শ্রদ্ধাশীল থাকিয়াও সাম্প্রতিক সিদ্ধান্তটির সূত্রে ২০১৩ সালের কথা স্মরণ করাইয়া দেওয়া প্রয়োজন, যখন টু-জি মামলার প্রেক্ষিতে আদালত বিতর্কিত ১২২টি ইউনিফায়েড অ্যাকসেস সার্ভিস লাইসেন্স বাতিল করিয়া দিয়াছিল।

শেষ আপডেট: ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ০০:০০
Share: Save:

২০০৭ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে যখন আর্থিক মন্দার ছায়া ঘনাইতেছে, তখন একটি বাক্যবন্ধ বহুলব্যবহৃত হইয়াছিল— টু বিগ টু ফেল। অর্থাৎ, এমন কোনও সংস্থা, যাহা লাটে উঠিলে সামগ্রিক ভাবে অর্থব্যবস্থার গায়ে প্রবল ধাক্কা লাগিবে। ২০২০ সালের ভারতীয় বাজারে কোনও একটি টেলিকম সংস্থার ক্ষেত্রে এই বিশেষণ প্রয়োগ করা যাইবে না, তাহা সত্য। ভোডাফোন-আইডিয়া যদি ব্যবসা গুটাইতে বাধ্যও হয়, ভারতীয় অর্থব্যবস্থা ভাঙিয়া পড়িবে না। তাহা হইলে কি এই কথা বলা চলে যে টেলিকম দফতরের দাবি মানিয়া অ্যাডজাস্টেড গ্রস রেভিনিউ বা এজিআর-বাবদ ৫৪,০০০ কোটি টাকা দিতে বাধ্য হইলে সংস্থাটিকে যদি ভারতীয় বাজার ছাড়িতে হয়, তবে তাহাই সই? গত শুক্রবার সুপ্রিম কোর্ট যে রায় ঘোষণা করিয়াছে, আশঙ্কা হয়, তাহার পরিণতি ভিন্নতর হইবে না। শীর্ষ আদালতের সিদ্ধান্ত সম্বন্ধে সম্পূর্ণ শ্রদ্ধা বজায় রাখিয়াও বলিতে হয়, তেমন ঘটিলে তাহা ভারতীয় টেলিকম ক্রেতাদের নিকট দুঃসংবাদ হইবে। বাজারে পড়িয়া থাকিবে দুইটি মাত্র টেলিকম সংস্থা— ভারতী এয়ারটেল এবং রিলায়্যান্স জিয়ো। তাহার মধ্যে প্রথমটিরও এজিআর বাবদ বিপুল বকেয়া। সেই টাকা পরিশোধ করিবার পর নূতনতর প্রযুক্তি— যেমন ফাইভ-জি পরিষেবায়— লগ্নি করিবার সাধ্য তাহাদের কতখানি থাকিবে, সেই প্রশ্ন প্রকট। ফলে, ভারতীয় টেলিকম বাজারটি কার্যত দুই সংস্থার ব্যবসা বা ডুয়োপলিতেও দাঁড়াইবে না, তাহা একচেটিয়া ব্যবসা অর্থাৎ মোনোপলিতে পর্যবসিত হইবে, এমন আশঙ্কা প্রবল। একচেটিয়া ব্যবসার বাজার ক্রেতার পক্ষে প্রবল ক্ষতিকর। প্রসঙ্গত বিএসএনএল-এর কথা উঠিবে। সরকার যদি এই সংস্থাটিকে কার্যত তুলিয়া না দিত, এখন বাজারটি ক্রেতার পক্ষে এতখানি বিপজ্জনক হইত না।

কেন্দ্রীয় সরকার কেন ১.৪৫ লক্ষ কোটি টাকার ‘বকেয়া’ এজিআর আদায়ে মরিয়া, তাহা বোঝা সম্ভব— এই টাকা রাজকোষে ঢুকিলে অনেক ঘাটতি ঢাকিয়া যাইবে। কিন্তু, টেলিকম দফতর যে পরিমাণ টাকা দাবি করিতেছে, তাহা কি আদৌ পাওনা? প্রশ্নটি উঠিবে, কারণ আদিতে এজিআর-এর ব্যবস্থা ছিল, লাইসেন্স ফি ও স্পেকট্রাম ব্যবহার বাবদ টেলিকম সংস্থাগুলি তাহাদের রাজস্বের একটি অংশ টেলিকম দফতরকে দিবে। সংস্থাগুলির টেলিকম-বহির্ভূত ব্যবসা হইতে যে রাজস্ব আয় হইয়াছে, সরকার তাহার উপরও এজিআর দাবি করিতে পারে কি না, বিতর্কের শিকড় এখানে। তাহার নিষ্পত্তি করা প্রয়োজন। এবং, সেই ফয়সালায় যাহাতে কোনও টেলিকম সংস্থার ব্যবসা উঠিয়া না যায়, তাহাও দেখিতে হইবে। কোনও একটি বাজারকে একচেটিয়া ভাবে কোনও একটি সংস্থার হাতে তুলিয়া দেওয়া যদি শাসক দলের লক্ষ্যও হয়, তবু প্রশাসন সেই কাজটি করিতে পারে না। তাহাকে বাজারের স্বার্থ দেখিতেই হইবে। এজিআর সংক্রান্ত বিবাদ দীর্ঘ দিন ধরিয়া চলিতেছে। বাজারের পরিস্থিতির কথা মাথায় রাখিয়া তাহার নিষ্পত্তির প্রক্রিয়াটিকেও যথেষ্ট সময় দেওয়া বিধেয়।

আদালতের প্রতি সম্পূর্ণ শ্রদ্ধাশীল থাকিয়াও সাম্প্রতিক সিদ্ধান্তটির সূত্রে ২০১৩ সালের কথা স্মরণ করাইয়া দেওয়া প্রয়োজন, যখন টু-জি মামলার প্রেক্ষিতে আদালত বিতর্কিত ১২২টি ইউনিফায়েড অ্যাকসেস সার্ভিস লাইসেন্স বাতিল করিয়া দিয়াছিল। পরবর্তী কালে জানা গিয়াছিল, টু-জি স্পেকট্রাম বণ্টনে কেলেঙ্কারির কোনও প্রমাণ মিলে নাই। কিন্তু, টেলিকমের বাজারটির যে ক্ষতি হইল, তাহা পূরণ হইল না। বর্তমান সিদ্ধান্তটিও তেমন ক্ষতি করিবে কি না, ভাবিয়া দেখা বিধেয়। এবং, বাজারটি এমন অনিশ্চিত হইলে ভবিষ্যতে কোনও সংস্থা তাহাতে লগ্নি করিতে চাহিবে কি না, এবং না চাহিলে প্রতিযোগিতার কত ক্ষতি হইবে, সেই কথাগুলিও ভাবা প্রয়োজন।

অন্য বিষয়গুলি:

Telecom Vodafone Telecom Sector Airtel
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy