Advertisement
২৪ নভেম্বর ২০২৪
TMC

প্রশাসনের পরীক্ষা

বিজেপি নামক দলটি তথা তাহার পশ্চিমবঙ্গীয় নায়কনায়িকারা তেমন উদ্যোগে অনাগ্রহী, এমন কথাও বলা চলিবে না।

—ফাইল চিত্র।

—ফাইল চিত্র।

শেষ আপডেট: ১২ ডিসেম্বর ২০২০ ০১:২৯
Share: Save:

পশ্চিমবঙ্গের শাসকরা বৃহস্পতিবার বারবেলায় তিনটি পরীক্ষায় ফেল করিয়াছেন। তাঁহারা প্রশাসনিক কর্তব্য যথাযথ ভাবে পালন করিতে পারেন নাই, সামাজিক আত্মমর্যাদা বজায় রাখিতে পারেন নাই এবং রাজনৈতিক কাণ্ডজ্ঞানের পরিচয় দিতে পারেন নাই। প্রথমত, রাজ্য প্রশাসনের কাজ আইনশৃঙ্খলা রক্ষা করা। ভারতীয় জনতা পার্টির সভাপতি জে পি নড্ডা এবং তাঁহার দলীয় সহযাত্রীরা অশান্তি সৃষ্টির উদ্দেশ্য লইয়াই দক্ষিণ চব্বিশ পরগনার নির্বাচিত অঞ্চলে সফর করিতে গিয়াছিলেন কি না, তাহা পুলিশ প্রশাসনের শান্তিরক্ষায় ব্যর্থতার অজুহাত হইতে পারে না। অশান্তি সৃষ্টির পরিকল্পিত উদ্যোগ রাজনীতিতে অপরিচিত কিছু নহে। বিজেপি নামক দলটি তথা তাহার পশ্চিমবঙ্গীয় নায়কনায়িকারা তেমন উদ্যোগে অনাগ্রহী, এমন কথাও বলা চলিবে না। কনভয়ে বাইক বাহিনীর প্রবল উপস্থিতি বা প্ররোচনাত্মক আচরণ হয়তো তেমন কুপরিকল্পনারই লক্ষণ। কিন্তু বিরোধী রাজনীতির মাতব্বরেরা সুশীল সুভদ্র আচরণের সীমায় নিজেদের সীমিত রাখিবেন— প্রাক্-নির্বাচনী পশ্চিমবঙ্গে এমন প্রত্যাশার কিছুমাত্র কারণ নাই। সুতরাং, অশান্তি নিবারণের জন্য প্রশাসনের ষোলো আনা প্রস্তুত থাকা কর্তব্য ছিল। তাহার প্রয়োজনীয় বন্দোবস্ত তাহারা করিয়াছিল কি? করিলে, বিরোধী ‘অভিযান’-এর যাত্রাপথে শাসক দলের অনুগামীদের সভা-সমাবেশ চলিতে দেওয়া হইত না নিশ্চয়ই। অশান্তি হাতের বাহিরে যাইতে দেওয়া হয় নাই, তাহা নিশ্চয় স্বস্তি দেয়, কিন্তু তাহাতে প্রশাসনের ব্যর্থতার দায় কমে না।

দ্বিতীয়ত, সরকার ও শাসক দলের উপরমহল হইতে এই ঘটনার যে প্রতিক্রিয়া মিলিয়াছে, তাহা কেবল দুর্ভাগ্যজনক নহে, লজ্জাকর। রাজনৈতিক বিরোধ আছে, থাকিবে। বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি বা ষড়যন্ত্রের রাজনৈতিক অভিযোগও অভাবিত নহে। কিন্তু বিজেপি নেতাদের জন্য কেন্দ্রীয় নিরাপত্তা রক্ষী থাকিতে রাজ্যের কী দায়— এমন ‘যুক্তি’ ভাবিতেও নাই, ভাবিলে উচ্চারণ করিতে নাই। বস্তুত, রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী বিরোধী দলের উপরে এমন একটি আক্রমণের দ্ব্যর্থহীন নিন্দা না করিয়া আপন পদটির মর্যাদাহানি ঘটাইয়াছেন। তদুপরি, বিজেপি সভাপতির পদবির সহিত মিলাইয়া বিবিধ শব্দ উচ্চারণে অনুপ্রাস নির্মাণের কীর্তিটি তাঁহার আত্মমর্যাদার পক্ষেও কম হানিকর নহে। এই ধরনের কথার খেলা তিনি করিয়া থাকেন। কিন্তু স্বাভাবিক পরিস্থিতিতে যাহা কেবল শব্দতরঙ্গ, এই ধরনের হিংস্র এবং অগণতান্ত্রিক আক্রমণের প্রসঙ্গে তাহা অত্যন্ত কুৎসিত শুনাইতে পারে, এই বোধটুকু রাজ্যের সর্বোচ্চ প্রশাসকের থাকা বিধেয়। বিরোধী দল বা তাহার আচরণ যত অন্যায় এবং অপ্রিয়ই হউক, তাহার অধিকার রক্ষা করা শাসকের কর্তব্য। সেই কর্তব্যে যথেষ্ট মনোযোগী না হইয়া বিরোধীর প্রতি ব্যঙ্গবিদ্রুপ বর্ষণ করিলে গণতন্ত্র বিপন্ন হয়, আত্মসম্মানও।

তৃতীয়ত, এই আক্রমণ এবং তাহার প্রতিক্রিয়ায় শাসকদের এমন আচরণ যে তাঁহাদের রাজনৈতিক সমস্যা বাড়াইবে, তাহা নিছক কাণ্ডজ্ঞানই জানাইয়া দেয়। বিজেপি নেতারা প্রত্যাশিত তৎপরতায় এই ঘটনাকে আপন নির্বাচনী রাজনীতির রসদ হিসাবে কাজে লাগাইতে ব্যস্ত হইয়াছেন। কলিকাতার রাজভবন এবং দিল্লির দরবার সেই রাজনীতির ব্যবস্থাপনায় ব্যগ্র। এই পরিস্থিতিতে রাজ্য সরকারের পরিচালকদের প্রথম এবং প্রধান কাজ, সংযত ও সুস্থির ভাবে আপন প্রশাসনিক কর্তব্য ষোলো আনা দক্ষতা এবং নিরপেক্ষতার সহিত পালন করা। প্রতিপক্ষ যখন জল ঘোলা করিতে অতিমাত্রায় তৎপর, তখন আপন আচরণে সম্পূর্ণ নিয়মানুগ এবং যথাযথ থাকাই বুদ্ধিমান বা বুদ্ধিমতীর কাজ। পশ্চিমবঙ্গের শাসকদের সম্মুখে এখন পাখির চোখ একটিই: সুশাসন। উত্তরবঙ্গ এবং দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা— পর পর দুইটি পরীক্ষায় তাঁহারা লক্ষ্যভেদে ব্যর্থ। পরীক্ষা শুরু হইয়াছে মাত্র।

অন্য বিষয়গুলি:

TMC West Bengal failures BJP JP Nadda
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy