শি ল্পপতিদের বেখাপ্পা আবদারে কংগ্রেস হইতে জনতা দল ইউনাইটেড অথবা সিপিআইএম— বিরোধী আসন আলো করিয়া বসা সব দলই মর্মান্তিক চটিয়াছে। বণিক সমাজ তাঁহাদের সংসদ চালু করিতে বলিয়াছে। কী দুঃসহ স্পর্ধা! দেশের উন্নয়নের ধারাকে স্তব্ধ করিয়া দেওয়া যে বিরোধীদের রাজনীতিসিদ্ধ অধিকার, বণিকমহল সেই কথা কোন সাহসে ভোলে? অতএব, তাঁহারা হরেক প্রত্যাঘাত করিয়াছেন। কেহ জানিতে চাহিয়াছেন, যখন বিজেপি সংসদ অচল করিয়া রাখিত, তখন শিল্পপতিরা ছিলেন কোথায়? কাহারও প্রশ্ন, শিল্পপতিরা কেন প্রধানমন্ত্রীর নিকট অভিযুক্ত মন্ত্রীদের বরখাস্ত করিবার দাবি জানাইতেছেন না? তবে, মূল সুরটি ধরিয়া দিয়াছেন শরদ যাদব। তিনি প্রশ্ন তুলিয়াছেন, কর্পোরেট দুনিয়া কোন অধিকারে সংসদের কাজে নাক গলাইতে আসিয়াছে? তাঁহারা হয়তো মনে করেন, তাঁহারা ভোটে জিতিয়া (অথবা রাজ্যসভায় মনোনীত হইয়া) সাধারণ্যের নাগালের অতীত হইয়াছেন, কেহই আর তাঁহাদের প্রশ্ন করিবার অধিকারী নহেন। অনুমান করা চলে, নেতারা বিলক্ষণ জানেন, তাঁহাদের সংসদ অচল করিয়া রাখিবার রাজনীতিতে শুধু শিল্পপতিরাই বিরক্ত নহেন, গোটা দেশ তাঁহাদের প্রতি চটিয়া আছে। শিল্পপতিদের কথা যত সহজে শোনা যায়, সাধারণ মানুষের কণ্ঠস্বর তত সহজে ক্ষমতার অলিন্দে পৌঁছায় না, ফারাক শুধু এইটুকুই।
শরদ যাদবরা সম্ভবত গোটা দেশকেই চোখ রাঙাইয়া প্রশ্ন করিলেন, সংসদের কাজে নাক গলাইবার অধিকার তাহাদের কে দিয়াছে? অধিকারটি দিয়াছে গণতন্ত্র। নেতারা যে বিশ্বাসই পোষণ করুন না কেন, গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় তাঁহারা সাধারণ মানুষের প্রতিনিধি ভিন্ন আর কিছু নহেন। বৃহত্তম জনসমাজের উন্নতিসাধনই তাঁহাদের একমাত্র কর্তব্য হওয়া বিধেয়। এবং, যদি কাহারও সন্দেহ হয় যে তাঁহারা সেই কর্তব্য পালনে ব্যর্থ হইতেছেন, তবে প্রশ্ন করিবার, পরামর্শ দিবার অধিকার তাঁহার বিলক্ষণ আছে। দেশের প্রথম সারির শিল্পপতির সেই অধিকার যতখানি, রামা কৈবর্ত রহিম শেখেরও ততখানিই। সংসদের কাজের সীমাটি আক্ষরিক অর্থেই গণপরিসর। শরদ যাদবরা স্পষ্টতই কথাটি বিস্মৃত হইয়াছেন। সম্ভবত স্বেচ্ছায়। যে গণতান্ত্রিক দায়িত্ব পালনের অঙ্গীকার করিয়া তাঁহারা সংসদে প্রবেশ করেন, তাহার কথা স্মরণ করাইয়া দিলে এখন তাঁহারা রাগিয়া যান।
তাঁহাদের রাগের একটি দ্বিতীয় স্তর আছে। ভারতীয় রাজনীতিকদের একটি বড় অংশ, অন্তত প্রকাশ্যে, শিল্পপতিদের প্রতি বিরূপ। কোনও অজ্ঞাত কারণে তাঁহারা সন্দিহান হইয়াই থাকেন— বিশেষত যখন তাঁহারা বিরোধী আসনে বসেন, তখন। হয়তো তাঁহারা ভাবেন, শিল্পপতিরা সরকারকে নিজেদের স্বার্থে চালিত করিবার চেষ্টায় আছেন। শিল্পমহলের স্বার্থ আর দেশের স্বার্থ যে আবশ্যিক ভাবে পরস্পরবিরোধী নহে, এই কথাটি ভারতীয় রাজনীতিতে নিতান্তই অনুচ্চারিত। দুনিয়ার বহু দেশে শিল্পপতিরা সরকারের নিকট নিজেদের স্বার্থরক্ষায় ‘লবি’ করিতে পারেন। ভারতে তাহা আইনত নিষিদ্ধ। যে কোনও নিষেধাজ্ঞাই যেহেতু চোরা পথ খুলিয়া দেয়, ভারতেও চোরা পথেই ‘লবি’ হইয়া থাকে। তাহাতে বেনোজল যে ঢোকে না, তেমন দাবি করা কঠিন। কিন্তু, বিনিয়োগকারী মাত্রেই বেনোজলে ভাসিয়া আসা স্যাঙাৎতন্ত্রের প্রতিনিধি, এই সন্দেহবাতিকটি সাংঘাতিক। বিরোধী নেতারা স্মরণে রাখিতে পারেন, শিল্পপতিরা ভারতে নিয়োজিত, ফলে দেশের উন্নয়নের স্বার্থের সহিত তাঁহাদের স্বার্থ জড়িত। অতএব, তাঁহারা রাজনীতিকদের নিকট সেই দাবি পেশ করিতেই পারেন। কুতর্কে কালক্ষেপ না করিয়া সেই দাবিটিকে তাহার প্রাপ্য গুরুত্ব দেওয়াই কর্তব্য।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy