Advertisement
১৮ নভেম্বর ২০২৪
প্রবন্ধ ২

ডিসিপ্লিন মানে বাটামের ভয়

ওসব টিভি চ্যানেলে লপচপানি মেরে আমার টিকিটি ছোঁয়া যাবে না! শিক্ষা কাকে বলে, শিক্ষকের ভূমিকা কী শিখব স্যর আশুতোষের কাছে, বিদ্যাসাগরের কাছে, আমাগো দিদিমণিয়ার কাছে। কিছু টিআরপি-হ্যাংলা বিদ্বজ্জন আর আচাভুয়া ছাত্রের কাছে নয়।

শেষ আপডেট: ২১ সেপ্টেম্বর ২০১৪ ০০:০০
Share: Save:

ওসব টিভি চ্যানেলে লপচপানি মেরে আমার টিকিটি ছোঁয়া যাবে না! শিক্ষা কাকে বলে, শিক্ষকের ভূমিকা কী শিখব স্যর আশুতোষের কাছে, বিদ্যাসাগরের কাছে, আমাগো দিদিমণিয়ার কাছে। কিছু টিআরপি-হ্যাংলা বিদ্বজ্জন আর আচাভুয়া ছাত্রের কাছে নয়। ছাত্রগুলোর বেয়াদপি দেখলে তো মনে হয় এজেন্সি ডেকে পার হেড তেরোটা চড় কষাই। কথায় কথায় ধর্নায় বসব, ঘেরাও করব, বাপ-মা’র মতো শিক্ষকদের অশ্রাব্য ভাষায় গালাগাল করব, আর পুলিশ পেটালে তখন ডুকরে: ওরেবাবারে, আমরা সব কোমল তুলতুলে বালক-বালিকা, দ্যাকো না আমাদের ছুধুছুধু মাচ্চেএএ ভ্যঁাঅ্যঁাঅ্যঁাঅ্যঁা! আর এই এক ঢং হয়েছে, অন্যায়ের ডাঁটে আন্দোলন ফাটে। আমাদের টুকতে দিতে হবে, ফেল মারলেও পাশ করাতে হবে, ক্যাম্পাসটা আমাদের বাঁদরামির বেন্দাবন, কেউ বারণ করতে এয়েচ কি লাগ লাগ লাগ আন্দোলন। আন্দোলনের মতো মজা আর কীসে! গিটার বাজাও, হল্লা করো, বিরিয়ানি খাও, ক্লাস ফাঁকি দেওয়াটাকে বিপ্লবের ডাকনামে চালিয়ে দাও! কদ্দুর আস্পদ্দা, অন্যায় হয়েছে, কমিটি গড়েছি, তাতে শান্তি নেই, বলছে কমিটিতে কে থাকবে আর কে থাকবে না আমরা ঠিক করে দেব। হ্যঁা, তোরা বিশ্ববিদ্যালয়টা চালাবি, আর আমরা হাতজোড় করে ‘জো হুজুর’ বলার জন্যে মোতায়েন। আবার কৈফিয়ত চাইছে, আমার ডিসিশন জানাতে দেরি কেন। আরে ব্যাটারা, নিগ্রহ কি বিগ্রহ নাকি, ঠিক লগ্নে অংবং শুরু না হলেই পাপ ছুড়বে? সিদ্ধান্ত নিতে প্রকাণ্ড ভাবতে হয়, ভাবতে ভাবতে মাথা ঢুলে আসে, তা ছাড়া সে সিদ্ধান্ত তোদের আদৌ জানাতে যাব কেন, সে-ও তো ভাবার! বাঁদরপিন্ডির সামনে মুক্তোর মালা ডিসপ্লের কী দরকার?

আর এই এক পোষা টার্ম হয়েছে, ‘বহিরাগত’। এই যে তোদের আন্দোলনে এতগুলো বাইরের ছেলে কোরাসে ফ্যঁাসাগলা মিলিয়ে হল্লা পাকাচ্ছিল, কী, না, সলিডারিটি দেখাতে এয়েচি, তারা বহিরাগত নয়? যখন পাকা দাড়িফাড়ি নিয়ে ক’টা বুদ্ধিজীবী, যাদের দু’বেলা সরকারের বাপ-মা না তুললে ভাত হজম হয় না, তারা তোদের ধিক্কার-মিছিলে জগিং বাগিয়ে অশ্রুকণায় সিলিপ কাটল, তখন তো মনে পড়ল না, এই আন্দোলনে এরা বহিরাগত? আর কর্তৃপক্ষের মায়ায় যদি খানকয় মস্তানের চোখ ছলছলিয়ে ওঠে, ছাত্রদের হাতে অন্যায় অত্যেচার সয়ে কত মাস্টারের প্রেশার বাড়ছে সুগার লাফাচ্ছে সেই দুশ্চিন্তায় ফুঁপিয়ে কতকগুলো মুশকো দরদির যদি মনে হয়, যাই, তেলচুকচুকে লাঠিগাছটা দিয়ে চ্যাঙাব্যাঙাগুলোকে সবক শিখিয়ে আসিগে, মহাভারত বি আর চোপড়া হয়ে গেল?

গেঞ্জি-পুলিশ গেঞ্জি-পুলিশ বলে আর এক হল্লা! আরে, পুরুষমানুষ গেঞ্জি পরলে দোষটা কী হল! খালিগায়ে এলে তো এই মেয়েগুলোই সেক্সুয়াল হ্যারাসমেন্ট বলে খাবি খেত! নাকি লাঠি দিয়ে বেধড়ক পেটানো হয়েছে, মেয়েদের মলেস্ট করা হয়েছে! পষ্ট দেখনু ছাত্ররাই পুলিশদের চিলুবিলু পেটাচ্ছে, যাচ্ছেতাই খিস্তি করছে, আমাকে তো ওপেনলি বললই, চামড়া ছাড়িয়ে নেব! খেতেও দিবি না, আবার চামড়াও ছাড়াবি! সেই গালাগাল দেওয়া ছোঁড়াগুলোর গালে পটাস পটাস খুন্তিছ্যঁাকা দিলে উচিত শিক্ষা হত। তার বদলে যা করা হয়েছে, দেখলে গাঁধীজিও হাঁটু গেড়ে নোট নিতেন! একটিকেও মারা হয়নি, জাস্ট ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। সব ক’টা মিথ্যেবাদীর জাসু, এখন টিভিতে গিয়ে নাকে কেঁদে অ্যাক্টিং শানাচ্ছে! কোত্থেকে পয়সা দিয়ে ক’টা প্লাস্টার করিয়ে এনেছে আর লাল ওষুধ দিয়ে রক্ত বানিয়েছে, এখন শহিদ-শহিদ খেলতে পেয়ে চোখ খুঁচিয়ে গ্লিসারিন বের করে পোজ!

আবার বলে পদত্যাগ করো! তোরা পদত্যাগ কর রে ড্যাকরা! তোরা ক্যাম্পাস ছেড়ে ওই পয়সা-খাওয়া মিডিয়া হাউসে গিয়ে চাকরি খোঁজ! টেকো সব বুড়োরা আমাকে জ্ঞান দিতে এয়েচেন, ছাত্রদের সঙ্গে আলোচনায় বসা উচিত ছিল! এই একটা লব্জ হয়েছে বটে। অভদ্র ট্যাক্সিওলাদের সঙ্গে আলোচনা করো, ব্যাদড়া হকারদের সঙ্গে আলোচনা চালাও, পাজির-পাঝাড়া ছাত্রদের সঙ্গে আলোচনায় গিড়গিড়াও। ওরে, এ হাঁটুর বয়িসি গেধোগুলোর সঙ্গে, এই উগ্র তেরিয়া টেররিস্টের ছানাগুলোর সঙ্গে আলোচনা করতে আমার ডিগনিটিতে লাগে! আমি কর্তাব্যক্তি, এলিট। আমরা বন্ধ দরজার ও-পারে বসে গ্রাম্ভারি সব ফরমান জারি করব, ওরা সেগুলো সুড়সুড়িয়ে মানবে, এই হচ্ছে টনকো বন্দোবস্ত। কোনও ত্যান্ডাইম্যান্ডাই দেখলেই সিধে পুলিশকে ফোন করে বলব, ভয় নাগছে। ব্যস, ঝাড় শুরু! ঝাড় খেলে, বাওয়া, হেভি ব্যথা করে। গা টাটায়। সেই তড়পানো ঘা-য়ে তখন তোমার ওই আঁতেল ফেসবুকার এসেও মলম লাগাতে পারবে না, বুজুম ফ্রেন্ড মিডিয়াও ধোলাই বুঝলে সুড়সুড়িয়ে আমির খানের স্লটে সেঁধিয়ে যাবে।

আরে ভাই, সাফ কথা তো মন্ত্রী বলেইছেন, শিক্ষার জায়গাটা কি নোংরা রাজনীতির আখড়া? ছাত্ররা আমাদের সন্তানের মতো, তারা বিপথে যাচ্ছে দেখলে, পলিটিক্সে ঢুকে পড়ছে দেখলে, আমরা তাদের বেধড়ক্কা ঠ্যাঙাব না? বাঃ, বাপ-মা যদি দেখেন সন্তান নর্দমা থেকে টফি তুলে চাখছে, থাবড়া মেরে দাঁত খুলে নেন না? আবার অ্যাডমিনিস্ট্রেশনে নাক গলাতে এলে, ফের পেটাব। শিক্ষার আসলি ব্যাপার হল, ডিসিপ্লিন। কাকে কী নিগ্রহ করা হয়েছে, অত জগত্‌ব্যাপারে মাথা না ঘামিয়ে, নিজেরা ডিসিপ্লিন শেখো। সব অ্যাজেন্ডা বদলে, এটাই আমি লাগু করব। ডিসিপ্লিন মানে কী? মানে, বাটামের ভয়। লাঠি ছিল কি না তা নিয়ে ডিবেট করছ তো, পরের বার বলে দেব মুগুর আনতে। তার পর বেঁটে বন্দুক। ছ্যঁাচড়ামির খাপে-খাপ ওষুুধ আমাকে, আর আমার প্রিয় সরকারকে, অন্যের কাছে শিখতে হবে না। শাসন করা তারেই সাজে, শাসন করে যে গো।

লেখাটির সঙ্গে বাস্তব চরিত্র বা ঘটনার মিল থাকলে তা নিতান্ত অনিচ্ছাকৃত, কাকতালীয়

অন্য বিষয়গুলি:

post editorial jadavpur university case
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy