Advertisement
১৮ নভেম্বর ২০২৪

শ্বশুরবাড়ির সামনেই রাতে গলা কেটে খুন যুবককে

বুধবার রাতে শ্বশুরবাড়ির সামনেই এক যুবকের খুন হয়ে যাওয়ার এই ঘটনাটি ঘটেছে নিমতায়।

মৃন্ময় মণ্ডল।

মৃন্ময় মণ্ডল।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শেষ আপডেট: ১০ মে ২০১৯ ০০:৫১
Share: Save:

আচমকাই ভেসে এসেছিল জামাইয়ের চিৎকার। তা শুনেই তড়িঘড়ি বাড়ির দোতলার বারান্দায় গিয়ে শ্বশুর দেখেছিলেন, রাস্তায় তাঁর জামাইয়ের সঙ্গে কারও একটা ধস্তাধস্তি হচ্ছে। অন্ধকারে সব কিছু ঠিকমতো বুঝতে না পেরে নীচে নেমে আসেন তিনি। মেয়েকে সঙ্গে নিয়ে রাস্তায় বেরিয়ে দেখেন, রক্তাক্ত অবস্থায় ছটফট করছেন জামাই। বেশ কিছুটা দূরে পড়ে রয়েছে তাঁর স্কুটার। হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে ওই যুবককে মৃত বলে ঘোষণা করেন চিকিৎসকেরা।

বুধবার রাতে শ্বশুরবাড়ির সামনেই এক যুবকের খুন হয়ে যাওয়ার এই ঘটনাটি ঘটেছে নিমতায়। পুলিশ জানায়, নিহতের নাম মৃন্ময় মণ্ডল (৩২)। তিনি কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মী ছিলেন। আদতে হাবড়ার বাসিন্দা হলেও কর্মস্থলে যাতায়াতের সুবিধার জন্য নিমতার জহরপল্লিতে শ্বশুরবাড়িতেই থাকতেন। কী কারণে, কে বা কারা মৃন্ময়কে মারল, তা নিয়ে নিহতের পরিজনেদের মতো ধন্দে তদন্তকারীরাও।

পুলিশ ও পরিবার সূত্রের খবর, ২০১৩ সালে জহরপল্লির বাসিন্দা সুকোমল মৈত্র চৌধুরীর মেয়ে সুবর্ণার সঙ্গে বিয়ে হয় মৃন্ময়ের। তাঁদের এক বছরের একটি ছেলে রয়েছে। বিয়ের পরে দমদম এলাকায় বাড়ি ভাড়া নিয়ে থাকতেন ওই যুবক। ছেলের জন্মের পর থেকে তিনি শ্বশুরবাড়িতে থাকতে শুরু করেন। ওই রাতে ওষুধ কেনার জন্য সুকোমলবাবুর স্কুটার নিয়েই ১১টা নাগাদ বাইরে বেরিয়েছিলেন মৃন্ময়। তাঁর শ্বশুর জানান, রাত সাড়ে ১১টা নাগাদ এলাকায় লোডশেডিং হয়ে যায়। সেই সময়ে দোতলার বারান্দায় গিয়ে তিনি দেখেন, বাড়ির উল্টো দিকে স্কুটারের উপরে বসে মোবাইল ঘাঁটছেন মৃন্ময়।

সুকোমলবাবু বলেন, ‘‘প্রথমে ভাবলাম, চেঁচিয়ে ডেকে জিজ্ঞাসা করি, অন্ধকারে রাস্তায় বসে রয়েছে কেন। কিন্তু তা না করে রাস্তায় যাব বলে নীচে নামছি, তখনই মৃন্ময়ের চিৎকার শুনতে পেলাম।’’ পুলিশকে ওই প্রৌঢ় জানিয়েছেন, চিৎকার শুনে ফের বারান্দায় গিয়ে তিনি দেখেন, কারও সঙ্গে ধস্তাধস্তি চলছে মৃন্ময়ের। পাশে আরও দু’জন। কিন্তু অন্ধকার থাকায় তারা কারা, তা বুঝতে পারেননি সুকোমলবাবু। এর পরেই তিনি ও সুবর্ণা রাস্তায় বেরিয়ে পড়েন। চিৎকার শুনে তখন বেরিয়ে এসেছেন প্রতিবেশীরাও। দেখা যায়, বাড়ির উল্টো দিকে রাস্তায় রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে রয়েছেন মৃন্ময়। তাঁর গলা কেটে দেওয়া হয়েছে। রক্তে ভেসে যাচ্ছে গোটা শরীর। ঘটনাস্থল থেকে ১০-১৫ হাত দূরে পড়ে রয়েছে স্কুটারটি। এর পরেই সকলে মিলে মৃন্ময়কে স্থানীয় একটি বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে যান। সেখানে তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করা হয়।

খবর পেয়ে নিমতা থানার পুলিশ বিশাল বাহিনী নিয়ে ঘটনাস্থলে আসে। রাস্তায় যেখানে মৃন্ময় পড়ে ছিলেন, সেখান থেকেই উদ্ধার হয় একটি ভাঙা কাঁচি। তাতে রক্তও লেগে ছিল। প্রাথমিক ভাবে পুলিশের অনুমান, দুষ্কৃতীরা ওই ভাঙা কাঁচি দিয়েই মৃন্ময়ের গলায় আঘাত করেছিল। তার পরে স্কুটারটি নিয়ে তারা চম্পট দেওয়ার চেষ্টা করলেও লোকজন বেরিয়ে পড়ায় গলির মধ্যেই সেটি ফেলে রেখে পালায়। অন্ধকার থাকাতেই ওই দু‌ষ্কৃতীদের পালাতে সুবিধা হয়েছে।

মৃন্ময়ের দাদা অভিষেক মণ্ডল বলেন, ‘‘রাত সওয়া ১২টা নাগাদ খবর পাই, ভাই অসুস্থ। রাতেই এখানে এসে দেখি, অনেক পুলিশ দাঁড়িয়ে। কী হয়েছে, বুঝতে পারছিলাম না। পরে সুবর্ণা জানায়, মৃন্ময় বেঁচে নেই। কিন্তু কে বা কারা এমন করল, কিছুই বুঝতে পারছি না। আমার ভাইয়ের সঙ্গে কারও কোনও শত্রুতা ছিল বলে শুনিনি।’’ একই দাবি করেছেন সুকোমলবাবুও। তিনিও জানান, মৃন্ময় এলাকায় খুবই জনপ্রিয় ছিলেন। সকলের সঙ্গেই তাঁর ওঠাবসা ছিল। কোনও দিনই কারও সঙ্গে তাঁর ঝামেলা হয়েছে বলেও কেউ জানতেন না।

অন্য বিষয়গুলি:

Murder Nimta
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy