Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪

চল্লিশেই নড়বড়ে সোদপুরের রেল- উড়ালপুল

বড় বড় খানা-খন্দ ইট দিয়ে চাপা দেওয়া। পথচারীদের হাঁটার জায়গায় কয়েক হাত অন্তর বিরাট ফাঁক। কোনও রাস্তা নয়। সোদপুরের রেল-উড়ালপুল। গাড়ি চলাচল বা হাঁটার রাস্তাতেই শুধু নয়, রেলিংয়েও অসংখ্য ফাটল। নীল-সাদা রঙের প্রলেপেও তা ঢাকা পড়ছে না।

হাঁ: এমন বিপজ্জনক ভাবেই বসে গিয়েছে সোদপুর উড়ালপুলের ফুটপাত। ছবি: সজল চট্টোপাধ্যায়

হাঁ: এমন বিপজ্জনক ভাবেই বসে গিয়েছে সোদপুর উড়ালপুলের ফুটপাত। ছবি: সজল চট্টোপাধ্যায়

সুপ্রকাশ মণ্ডল
শেষ আপডেট: ২১ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০১:৫০
Share: Save:

বড় বড় খানা-খন্দ ইট দিয়ে চাপা দেওয়া। পথচারীদের হাঁটার জায়গায় কয়েক হাত অন্তর বিরাট ফাঁক। কোনও রাস্তা নয়। সোদপুরের রেল-উড়ালপুল। গাড়ি চলাচল বা হাঁটার রাস্তাতেই শুধু নয়, রেলিংয়েও অসংখ্য ফাটল। নীল-সাদা রঙের প্রলেপেও তা ঢাকা পড়ছে না।

এ যদি হয় উড়ালপুলের উপরের অবস্থা, নীচের অবস্থা আরও ভয়াবহ। কোথাও চাঙড় খসে পড়ছে, পলেস্তারা নেই বেশিরভাগ জায়গায়। প্রায় সর্বত্র বট-অশ্বত্থ গাছের মেলা। ফাটলের মধ্যে সেঁধিয়েছে তাদের শিকড়। এমনই ভগ্ন স্বাস্থ্য নিয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে ৪০ বছরের উড়ালপুলটি।

মাঝেরহাটে সেতুভঙ্গের পরে বিভিন্ন সেতুর স্বাস্থ্য নিয়ে কাটাছেঁড়া শুরু হয়েছে। পানিহাটির বিধায়ক তথা বিধানসভায় সরকার পক্ষের মুখ্য সচেতক নির্মল ঘোষ, পানিহাটির পুর প্রধান স্বপন ঘোষ-সহ অন্যেরা দিন কয়েক আগে সোদপুর উড়ালপুল ঘুরে দেখেন। সে সময়ে তাঁরা স্থানীয় বাসিন্দাদের থেকে বিস্তর অভিযোগ পান। বাসিন্দারা জানিয়েছেন, ভারী গাড়ি যাতায়াত করলে উড়ালপুল বিপজ্জনক ভাবে কাঁপে।

আরও পড়ুন: ছাত্র মৃত্যুর ঘটনায় অপসারিত ডিআই, আজ উত্তর দিনাজপুরে বিজেপির বন্‌ধ

সোদপুর স্টেশন লাগোয়া এই উড়ালপুল চালু হয়েছিল ১৯৭৮ সালে। যৌথ অংশীদারিত্বে ছিল রেল এবং পূর্ত দফতর। রেললাইনের উপরের অংশের রক্ষণাবেক্ষণ করে রেল। উড়ালপুলের বাকি অংশ দেখভালের দায়িত্ব পূর্ত দফতরের ব্যারাকপুর ডিভিশনের। উড়ালপুলের উপরের খন্দপথ, নীচে বট গাছের সারি এর রক্ষণাবেক্ষণ নিয়েই প্রশ্ন তুলে দিয়েছে। গত কয়েক দিনে এই উড়ালপুল নিয়ে একাধিক বার আলোচনার পরে অবশেষে নড়ে বসেছে পূর্ত দফতর।

সম্প্রতি গিয়ে দেখা গেল, উড়ালপুলের দু’প্রান্তে রাস্তার পিচ অধিকাংশ জায়গায় উঠে গিয়েছে। এক অটোচালক বললেন, ‘‘সারা রাস্তায় বড় বড় গর্ত। এমন গুরুত্বপূর্ণ উড়ালপুলের এই অবস্থা ভাবা যায় না।’’ তাঁর অভিযোগ, বারবার তাপ্পি মারার ফলেই রাস্তার এমন হাল। একই অভিযোগ এলাকার ব্যবসায়ীদেরও।

অথচ, এই উড়ালপুলের গুরুত্ব অপরিসীম। এর এক দিকে বিটি রোড, যা কলকাতার সঙ্গে ব্যারাকপুর-সহ শহরতলির যোগাযোগের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সড়ক। অন্য প্রান্তের রাস্তা যোগ হয়েছে কল্যাণী এক্সপ্রেসওয়ের সঙ্গে। মূল রাস্তাটি চলে গিয়েছে মধ্যমগ্রাম। বেশ কয়েকটি রুটের বাস চলাচল করে এই উড়ালপুল দিয়ে। পণ্য পরিবহণেও এটি অন্যতম মাধ্যম।

৪০ বছর আগে সারা দিনে কয়েকটি মাত্র বাস আর কিছু অন্য যানবাহন চলাচল করত। বর্তমানে এই উড়ালপুল দিয়ে সারা দিনে চলে গড়ে ১৮ হাজার যানবাহন। তার মধ্যে মালবাহী লরিই কয়েক হাজার। প্রশ্ন উঠছে, এত বেশি যানবাহনের চাপ কি সহ্য করতে পারবে ৪০ বছরের পুরনো উড়ালপুল?

নির্মলবাবু বলছেন, ‘‘উড়ালপুলে কিছু জায়গায় ফাটল এবং গর্ত চোখে পড়েছে। রেল এবং পূর্ত দফতরকে বলেছি, যাতে উড়ালপুলটি ভাল ভাবে পরীক্ষা করা হয়।’’ পূর্ত দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, বছরখানেক আগে মেরামতির কাজ হয়েছে। কিন্তু এই মুহূর্তে রাস্তার পাশের ফুটপাত যে ভাবে ভাঙা, তাতে উপর থেকে রেললাইন দেখা যাচ্ছে। পথচারীদের আশঙ্কা, যে কোনও সময়ে বড় দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।

পূর্ত দফতরের ব্যারাকপুর ডিভিশনের এগ্‌জিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার প্রতাপ পুরকাইত বলেন, ‘‘আমি ওই উড়ালপুল ঘুরে দেখেছি। উড়ালপুলে একটা কম্পন হচ্ছে। দু’-এক দিনের মধ্যেই ফুটপাতে নতুন স্ল্যাব বসানো হবে। সেতুর গায়ে গজানো গাছগুলিও কাটা হবে। একটি বিশেষজ্ঞ দল সেতুর স্বাস্থ্য পরীক্ষা করবে।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Kolkata Flyover Collapse Sodepur Railway Flyover
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE