রিলিজিয়ন অ্যান্ড রবীন্দ্রনাথ টেগোর/
সিলেক্ট ডিসকোর্সেস, অ্যাড্রেসেস অ্যান্ড লেটার্স,
অনুবাদ ও ভূমিকা অমিয় পি সেন। অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি প্রেস, ৪৯৫.০০
অবসরেই কি যথার্থ সার্থক অনুবাদ সম্ভব হয়ে ওঠে? অবসর মানে ভাষার অবসর। শব্দ থেকে শব্দে যে আক্ষরিক অনুবাদ, কিংবা বাক্যের ভাবানুবাদ তার মধ্যে একটা এলানো অবসর দরকার হয়। ওই স্পেসটাতেই থেকে যায় একটা ভাষার আনুষঙ্গিক সংস্কৃতি, যাকে ধরতে
১৮৮৭-১৮৯৫,
রবীন্দ্রনাথ টেগোর।
অনুবাদ রোসিংকা চৌধুরী।
পেঙ্গুইন বুকস, ৪৯৯.০০
না পারলে অনুবাদ বৃথা। রোসিংকা চৌধুরীর অনুবাদে রবীন্দ্রনাথের ছিন্নপত্রাবলী পড়তে গিয়ে কথাগুলো মনে এল। ছিন্নপত্রাবলী কাজের কথা নয়, ভাবের কথা। পত্রলেখকের প্রকাশের নিজস্ব বৈশিষ্ট্যটুকু তার অনুবাদে ধরা না পড়লে পড়ার মজাটাই নষ্ট হওয়ার ভয় থাকে। সুখের কথা, রোসিংকা-র অনুবাদে তা হয়নি। শুধু কয়েক জায়গায় একটু খটকা রয়ে গেল। একটাই উদ্ধৃত করি। মূলে ১০১ নম্বর চিঠির প্রথম লাইন, ‘কোনো জিনিষ যথার্থ উপভোগ করতে গেলে তার চতুর্দিকে অবসরের বেড়া দিয়ে ঘিরে নিতে হয়— তাকে বেশ অনেকখানি মেলিয়ে দিয়ে, ছড়িয়ে দিয়ে, চতুর্দিকে বিছিয়ে দিয়ে, তবে তাকে ষোলো-আনা আয়ত্ত করা যায়।’ অনুবাদে ওই ষোলো-আনাটাও আছে, full sixteen annas, নইলে ওই বয়সের মানুষটাকেই পাওয়া যেত না। কিন্তু কেন যে মেলিয়ে দেওয়ার অনুবাদ spread it out to dry হল, বোঝা গেল না। শুকিয়ে নিতে তো বলেননি রবীন্দ্রনাথ! আর একটা কথা, ইন্দিরা দেবীর হাতের লেখা থেকে ছিন্নপত্রাবলী-র পূর্ণতর পাঠ প্রথম অক্টোবর ১৯৬০-এ বইয়ে সংকলিত হয়নি। সে সবের প্রথম সম্পাদক ও তাঁর সহযোগীও কানাই সামন্ত এবং সুবিমল লাহিড়ী নন। বিশ্বভারতী পত্রিকায় ১৯৪৪-’৪৬ পুলিনবিহারী সেন ও নির্মলচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের টীকা-সহ অপ্রকাশিত চিঠিগুলি প্রকাশিত হয়েছিল। ছিন্নপত্র-এ সংকলিত কিছু চিঠির বর্জিত অংশও ১৯৫৪-র ‘শারদীয় আনন্দবাজার পত্রিকা’-য় পুলিনবিহারী সেন সংকলন করেন। এ সব তথ্য ছিন্নপত্রাবলী-র বিশ্বভারতী সংস্করণের গ্রন্থপরিচয়েই ছিল। তার উপর ভূমিকায় রোসিংকা লিখছেন, As the editor said at the time: ‘In the present day, there can be no conceivable reason for us to discard any part of Rabindranath’s own writings at all.’ সবটা মিলে এটাই মনে হওয়া স্বাভাবিক যে রোসিংকা-র ব্যবহৃত গ্রন্থ-সংস্করণটির সম্পাদক কানাই সামন্তই ছিন্নপত্রের অপ্রকাশিতকে প্রথম প্রকাশ্যে আনেন। সম্পাদকের ওই উক্তির উৎস হিসেবে অনুবাদক বিশ্বভারতীর ছিন্নপত্রাবলী-র পৃ ৩৫৫ নির্দেশ করেছেন। ওটি ১৯৯২-এ প্রকাশিত নূতন সংস্করণের বিজ্ঞপ্তি। সেখানে সম্পাদক লিখেছেন, ‘বর্তমানে রবীন্দ্ররচনার কোনো অংশ বর্জনের সংগত কোনো কারণ থাকিতে পারে না।’ কিন্তু এর মানে কি এই যে এমন দুঃসাহসী সিদ্ধান্ত কানাই সামন্তই প্রথম নিলেন এবং সেই অনুসারে বর্জিত অংশ প্রথম তাঁর সম্পাদনায় প্রকাশিত হল! গবেষণা পুরোপুরি না করেই কাউকে পথিকৃতের সম্মান দেওয়াটা হাস্যকর। ঠিক যেমন হাস্যকর এ বইয়ের পশ্চাৎ-প্রচ্ছদে রবীন্দ্রনাথ সম্পর্কে অমর্ত্য সেনের একটি মন্তব্য বিজ্ঞাপনের মতো করে ব্যবহার করা। ‘আ টাওয়ারিং ফিগার ইন দ্য মিলেনিয়াম-ওল্ড লিটারেচার অব বেঙ্গল’: রবীন্দ্রনাথের আদৌ এই শংসাপত্রটির প্রয়োজন ছিল কি?
দ্য ব্যাচেলর্স ক্লাব,
রবীন্দ্রনাথ টেগোর।
অনুবাদ সুখেন্দু রায়।
অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটি প্রেস,
৪৫০.০০
সুখেন্দু রায়ের অনুবাদে চিরকুমার সভা তার সেই ললিত কৌমার্যটি বজায় রাখতে পেরেছে। শিবাজী বন্দ্যোপাধ্যায়ের একটি ভূমিকা সমাজ-ইতিহাসের প্রেক্ষাপটে রবীন্দ্রনাটককে বিশ্লেষণ করেছে। একান্ত বাঙালি ধারণাগুলিকে বাংলা শব্দেই রাখা হয়েছে এখানে, শেষে গ্লসারি দিয়ে রবীন্দ্রনাথের বিশেষ করে এই লেখাটির ক্ষেত্রে বাংলা ভাষার নিজস্ব লাবণ্য যে কতটা গুরুত্বপূর্ণ সেই বিবেচনাকে গুরুত্ব দিয়েছেন অনুবাদক, আশার কথা এটাই। বাঙালির একান্ত নিজস্ব যে পরিসরটি থেকে ছিন্ন করে নিলে জগত্তারিণী, পুরবালা, অক্ষয়, রসিক, শ্রীশ কিংবা বিপিনকে ছোঁয়া যায় না সেই পরিসরটিকে কোথাও ক্ষুণ্ণ হতে দেননি অনুবাদক। অবশ্য, প্রথম অঙ্ক প্রথম দৃশ্যের ঘটনাস্থল অক্ষয়ের রুম নয়, ড্রয়িংরুম হলে ভাল হত। বৈঠকখানায় ছাড়া অমন দৃশ্য জমে কি? তা ছাড়া, মূলেও কিন্তু বৈঠকখানাই ছিল।
১৮৮০ থেকে রবীন্দ্রনাথের ধর্মচিন্তা ও দর্শনচিন্তা কী ভাবে বিবর্তিত হয়েছে তারই একটা পরিচয় তুলে ধরার উদ্দেশ্য নিয়ে অমিয় পি সেন অনূদিত বইটির প্রকাশ। রবীন্দ্রনাথের কবিতা, গান, নাটক, কথাসাহিত্য ইংরেজিতে যত অনুবাদ হয় তার তুলনায় অনেক কম হয় তাঁর চিন্তামূলক গদ্যগুলি। সে দিক থেকে এই সংকলনটি বিশেষ জরুরি। বইটিতে শুধু প্রবন্ধেরই অনুবাদ সংকলিত হয়নি, চিঠিপত্র, ভাষণ এবং ঘরোয়া সংলাপও জায়গা পেয়েছে। বস্তুত, চিঠিপত্রের অনুবাদগুলি রবীন্দ্রনাথের চিন্তা বুঝতে অনেক বেশি সহায়তা করবে, কারণ চিঠিপত্রেই রবীন্দ্রনাথ তাঁর চিন্তার প্রকাশে সবচেয়ে আন্তরিক, খোলামেলা। ইন্দিরা দেবী চৌধুরাণী ও হেমন্তবালা দেবীকে লেখা অনেকগুলি চিঠির প্রাসঙ্গিক অংশ অনুবাদ করেছেন অমিয়বাবু। আছে, মোহিতচন্দ্র সেনকে লেখা সেই বিখ্যাত চিঠির অনুবাদও যেখানে রবীন্দ্রনাথের ‘জীবনদেবতা’ ধারণাটির ব্যাখ্যা ও প্রকাশ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy