সাম্রাজ্যবাদী যুদ্ধবিরোধী ইস্তাহার স্কুলের দেওয়ালে সাঁটতে গিয়ে প্রধান শিক্ষকের কাছে ধরা পড়লাম। তিনি বাবাকে ডেকে পাঠালেন। বাবা ভীত এবং ক্রুদ্ধ দুইই। তারপর ঘটনাচক্রে সেদিনই আমার বুক শেল্ফ থেকে বেরিয়ে পড়ল— তৃতীয় আন্তর্জাতিকের শাখা ভারতবর্ষের কম্যুনিস্ট পার্টির মুখপত্র।...’, সরোজ বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই অসমাপ্ত আত্মজীবনী ‘ধূলির আখর’ পাওয়া গেল ক্ষ-এর (সম্পা: রাণা মজুমদার) ‘সরোজ বন্দ্যোপাধ্যায়: স্মরণ সংখ্যা’য়। প্রথম পর্বে আরও আছে পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত কয়েকটি কবিতার পুনর্পাঠ এবং অগ্রন্থিত ক’টি নিবন্ধ। দ্বিতীয় পর্বে উপন্যাস, প্রবন্ধ ও সম্পাদিত গ্রন্থের আলোচনা ও পুনর্মূল্যায়ন। তৃতীয় পর্বটি ‘তাঁর প্রিয়জন, ছাত্র-ছাত্রী, সহকর্মী ও নৈহাটিবাসীর’ স্মৃতিচারণ।
‘সিগমুন্ড ফ্রয়েড বিশেষ সংখ্যা’ প্রকাশ করেছে এবং মুশায়েরা। পুষ্পা মিশ্র সম্পাদকীয়-তে জানিয়েছেন ‘ফ্রয়েডের মনোবিজ্ঞান শুধু যে মানসিক ক্রিয়া-প্রক্রিয়া ব্যাখ্যায় সীমাবদ্ধ ছিল তা নয়। ফ্রয়েড নিজে তার তত্ত্বকে শিক্ষা, সমাজ, সংস্কৃতির বিভিন্ন ক্ষেত্রে, বিশেষ করে সাহিত্যের ক্ষেত্রে, প্রয়োগ করেছেন।’ বিশিষ্ট জনের কলমে ফ্রয়েডকে নিয়ে একগুচ্ছ প্রবন্ধের সঙ্গে তাঁর নিজের রচনাও (অনূদিত) ঠাঁই পেয়েছে। রয়েছে তাঁর জীবন ও গ্রন্থপঞ্জি, বাংলা গ্রন্থে তাঁকে নিয়ে চর্চার পঞ্জি, তাঁর বেশ কিছু ছবি এবং সাক্ষাৎকার। এক সাক্ষাৎকারে তাঁর মন্তব্য ‘যৌনতাকে গুরুত্বপূর্ণ বলে আমি কোনো ভুল করিনি। যৌনপ্রবৃত্তি এতো তীব্র যে এটি সভ্যতার যাবতীয় বর্ম ভেদ করে বেরিয়ে আসতে পারে।... মানুষের যাবতীয় আবেগকে খুঁচিয়ে দেখা হোক, কোনো এক স্তরে যৌনতাকে পাওয়া যাবে।’
প্রণব মুখোপাধ্যায়কে নিয়ে বলাকা-র (সম্পা: ধনঞ্জয় ঘোষাল) বিশেষ সংখ্যা: ‘আমাদের রাষ্ট্রপতি/ এক অনন্য বাঙালি’। অন্যান্য বিশিষ্ট বাঙালি তাঁর এই অনন্য হয়ে-ওঠার ইতিবৃত্ত নিয়ে সমকালীন দৃষ্টিতে লিখেছেন, স্মৃতিচারণ শ্রদ্ধাজ্ঞাপন করেছেন, মুগ্ধতার বয়ান পেশ করেছেন। স্বপন বসুর প্রাক্কথন-এ সংখ্যাটি নির্মাণের অভিপ্রায় স্পষ্ট: ‘গ্রামীণ শিক্ষক পরিবারের এই সন্তানটি জীবন শুরু করেছিলেন শিক্ষকতা দিয়ে। গান্ধীবাদের মন্ত্রে দীক্ষিত এক পরিবারের এই সুসন্তানটির রাজনৈতিক উত্থান রূপকথার গল্পের মতো।’
পরিচয় সম্পাদক বিশ্ববন্ধু ভট্টাচার্য জানিয়েছেন ‘চিন্মোহন সেহানবীশ-এর শতবর্ষের কথা স্মরণ করে এখানে পরিচয়-এর ‘চিন্মোহন সেহানবীশ সংখ্যা’ থেকে একাধিক রচনা পুনর্মুদ্রিত হয়েছে।’ এ সংখ্যায় সম্পাদক-সহ রমেন্দ্রনাথ দত্ত, অমলেন্দু সেনগুপ্ত, অবনী লাহিড়ী, গোলাম কুদ্দুস, কার্তিক লাহিড়ী, দেবেশ রায়ের মতো লেখকদের রচনায় চিন্মোহনকে চেনা যাবে। চিন্মোহনের নিজের রচনাটি, ‘বিশ্ব-মনীষী সঙ্গমে’, হেলসিঙ্কিতে এক বিশ্বশান্তি সম্মেলনের অনবদ্য বিবরণ। দু’টি প্রবন্ধ রয়েছে ব্রজেন্দ্রনাথ শীলকে নিয়েও। এ ছাড়া ঈশানী মুখোপাধ্যায়ের ‘শতবর্ষের অভিবাদন: রায়কিশোরী কল্পনা দত্তের বাল্যজীবন’ উল্লেখ্য।
অশোকনগর পত্রিকার ‘শরদিন্দু সংখ্যা’টি সম্পাদনা করেছেন অভিষেক চক্রবর্তী রুদ্রদীপ চন্দ। শরদিন্দু বন্দ্যোপাধ্যায়কে ঘিরে বৈচিত্রময় এ-সংখ্যা শুরুই হয়েছে তাঁর অপ্রকাশিত পত্রাবলি দিয়ে। শরদিন্দু কেমন জ্যোতিষচর্চা করতেন তারও প্রমাণ আছে। বাদল বসুর স্মৃতি আলেখ্যর সঙ্গে শান্তনু বন্দ্যোপাধ্যায় প্রবীর চক্রবর্তীর মতো উত্তরসূরি আত্মজনের স্মৃতিকথা, সাক্ষাৎকার। শরদিন্দুর গল্প, ঐতিহাসিক উপন্যাস, রহস্যোপন্যাস, এমনকী ব্যোমকেশ বক্সীকে নিয়েও নানা রচনা। তাঁর চিত্রনাট্য নিয়ে লিখেছেন শতরূপা সান্যাল, আর রয়েছে ঋতুপর্ণ ঘোষের ‘সত্যান্বেষী’ ছবিতে ব্যোমকেশের ভূমিকায় সুজয় ঘোষের সাক্ষাৎকার। দেবাশিস মুখোপাধ্যায়-কৃত তাঁর গ্রন্থপঞ্জি ও জীবনপঞ্জি।
অমিত্রাক্ষর-এর (সম্পা: অচিন্ত মারিক) ‘বীতশোক ভট্টাচার্য সংখ্যা’য় তাঁর অপ্রকাশিত চিঠিপত্র, কবিতা ও স্বলিখিত সংক্ষিপ্ত জীবনপঞ্জি। বীতশোক গৃহীত ও প্রদত্ত সাক্ষাৎকার। এবং অবশ্যই তাঁকে নিয়ে রচিত নিবন্ধাদি। তবে সবচেয়ে উল্লেখ্য তাঁর ‘অন্য রচনা’গুলির প্রকাশ, সে সবের একটি ‘নারীভাষা’, তাতে বীতশোকের মন্তব্য ‘নারীভাষা এখনও মূলত ভাষাবিজ্ঞানের চেয়ে শৈলীবিজ্ঞানের বেশি আলোচ্য বিষয়।’
পণ্ডিত পান্নালাল ঘোষের (১৯১১-১৯৬০) প্রতি শ্রদ্ধার্ঘ্য তাঁতঘর একুশ শতক-এর (সম্পা: অরূপ আস) ‘বাঁশি’ সংখ্যায়। তাতে সরোদশিল্পী বুদ্ধদেব দাশগুপ্ত, গীতিকার পুলক বন্দ্যোপাধ্যায়ের রচনার পুনর্মুদ্রণের সঙ্গে রয়েছে কবীর সুমনের নতুন রচনা ‘বাঁশি শুনে আর কাজ নাই’: ‘আড় বাঁশিতে তিনি যা খুশি তাই করতে পারেন। ভারতীয় রাগসঙ্গীতে, কীর্তনে, বাংলার পল্লীসঙ্গীতে তাঁর অবিসংবাদিত সাম্রাজ্য। বাঁশের বাঁশি ও যে-কোনও আড় বাঁশিতে যাঁর দক্ষতার ধারে কাছে কেউ আজও পৌঁছতে পারেননি।’
শঙ্করকুমার নাথ সম্পাদিত তালতলা দর্পণ ‘দাদাঠাকুর স্মারক সংখ্যা’য় সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায়, পরিমল গোস্বামী থেকে সুধীর চক্রবর্তী, দেবেশ রায়, কৃষ্ণ ধর— অনেকেই লিখেছেন। পাঠক আগ্রহী হবেন ‘দাদাঠাকুরের লেখা’ অংশটিতে, যেখানে শরৎচন্দ্র পণ্ডিতের (১৮৮১-১৯৬৮) নিজস্ব রচনার স্বাদ:
‘দেশের নেতা যদি সেথা
ধামা ধরে থাকতে চায়!
আমার মতো ধামাধরা
সেথা কি আর কলকে পায়?’
দুর্লভ কিছু ছবি বাড়তি পাওনা।
‘একরামউদ্দিন (১৮৭২-১৯৪০) বিশেষ সংখ্যা’ প্রকাশ করেছে গল্পসরণি। সম্পাদক অমর দে জানাচ্ছেন ‘আজ থেকে প্রায় একশ’ বছর আগে একরামউদ্দীন সুন্দর ভাষায় রবীন্দ্রকাব্য আলোচনায় যে-কুশলতার পরিচয় দিয়েছেন তা বিস্ময়কর।... এ-কথা আজ অনস্বীকার্য যে বাঙালী মুসলমান হিসাবে তিনি রবীন্দ্রচর্চার পথিকৃৎ।’ তাঁর সাহিত্য চর্চা ও কর্মজীবন নিয়ে আলোচনাদির সঙ্গে তাঁর গল্প-প্রবন্ধও রয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy