Advertisement
২৬ নভেম্বর ২০২৪
চিত্রকলা ও ভাস্কর্য ১

নারীর প্রতিবাদী চেতনাতেও অধ্যাত্মবোধ

এমামি চিজেল-এ অনুষ্ঠিত অর্পণা কৌরের একক প্রদর্শনীটি দেখে এলেন মৃণাল ঘোষএমামি চিজেল আর্টস্-এ অনুষ্ঠিত হল দিল্লি ভিত্তিক শিল্পী অপর্ণা কৌরের একক প্রদর্শনী। প্রদর্শনীর শিরোনাম: ‘ক্রসিং সিক্সটি’। শিল্পীর বয়স ষাট বছর অতিক্রম করেছে— সেই উপলক্ষে আয়োজিত এই প্রদর্শনী।

শিল্পী: অর্পণা কৌর।

শিল্পী: অর্পণা কৌর।

শেষ আপডেট: ১৪ মে ২০১৬ ০০:০০
Share: Save:

এমামি চিজেল আর্টস্-এ অনুষ্ঠিত হল দিল্লি ভিত্তিক শিল্পী অপর্ণা কৌরের একক প্রদর্শনী। প্রদর্শনীর শিরোনাম: ‘ক্রসিং সিক্সটি’। শিল্পীর বয়স ষাট বছর অতিক্রম করেছে— সেই উপলক্ষে আয়োজিত এই প্রদর্শনী। কিন্তু অপর্ণা ষাট অতিক্রম করেছেন দু’বছর আগেই। তাঁর জন্ম দিল্লিতে ১৯৫৪ সালের ৯ এপ্রিল। শিল্পকলায় তাঁর কোনও প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা নেই। কিন্তু তাঁর চিত্রচর্চা শুরু হয়েছে শৈশবেই। কলা-বিভাগে স্নাতকোত্তর শিক্ষা শেষ করার পর তিনি চিত্রকলাতেই তাঁর সমগ্র ধ্যান সমর্পণ করেছেন। তাঁর পারিবারিক সাংস্কৃতিক উত্তরাধিকার এ ক্ষেত্রে তাঁকে বিশেষ প্রেরণা দিয়েছে। ১৯৮৬ সালে দিল্লিতে অনুষ্ঠিত ষষ্ঠ ত্রিবার্ষিকী আন্তর্জাতিক প্রদর্শনীতে তিনি পুরস্কৃত হয়েছিলেন। এর পর থেকেই তাঁর খ্যাতি প্রসারিত হতে থাকে। দেশে ও বিদেশে অজস্র প্রদর্শনী তিনি করেছেন।

লোকশিল্প ও উপজাতীয় শিল্পের প্রতি তাঁর গভীর আকর্ষণ রয়েছে বরাবর। এ বিষয়ে তাঁর এক নিজস্ব সংগ্রহ আছে। সেই সংগ্রহের নির্বাচিত কাজ সংকলন করে একটি বৃহদায়তন গ্রন্থও প্রকাশিত হয়েছে। তাঁর নিজের কাজেও লৌকিক ও উপজাতীয় শিল্পের গভীর প্রভাব রয়েছে। ১৯৮০-র দশকে প্রতিষ্ঠাপ্রাপ্ত শিল্পী তিনি। বিংশ শতকের প্রথম দু-তিনটি দশকে আধুনিকতায় ঐতিহ্য অন্বেষণের যে নিবিড় অনুধ্যান চলেছিল সারা দেশ জুড়ে, নব্য-ভারতীয় ঘরানায় যার ব্যাপ্ত প্রকাশ দেখা যায়, তা নানা ভাবে প্রসারিত ও বিবর্তিত হয়েছে পরবর্তী দশকগুলিতে। আশির দশকের অনেক শিল্পীই পাশ্চাত্য আধুনিকতাবাদের সঙ্গে দেশীয় ঐতিহ্যকে মিলিয়ে নিতে চেষ্টা করেছেন, অর্পণা তাঁদের মধ্যে।

কৈশোর থেকেই পারিবারিক সূত্রে পেয়েছিলেন এক আধ্যাত্মিকতার বোধ। জীবনের কঠোর বাস্তবতা ও নারীবাদী প্রতিবাদীচেতনাকে তিনি এই অধ্যাত্মবোধে সমন্বিত করে নিয়েছেন। এ জন্য তাঁর ছবির ভাবনা ও আঙ্গিক দুটোই স্বতন্ত্র এক প্রকাশভঙ্গি অর্জন করতে পেরেছে। একদিকে প্রতিবাদ, আর একদিকে সমর্পণ এই দুইয়ের সহাবস্থানে তাঁর ছবি অনন্য ঐশ্বর্যমণ্ডিত।

এমামি চিজেলে অনুষ্ঠিত তাঁর আলোচ্য প্রদর্শনীতে দেখানো হয়েছে প্রায় ৭০-টি কাগজের উপর তাঁর ছোট মাপের কাজ। কিছু ছাপচিত্রও ছিল। বিভিন্ন সময়ে তিনি বিভিন্ন চিত্রমালা নিয়ে কাজ করেছেন। সেই চিত্রমালার নির্বাচিত অনেক ছবি এই প্রদর্শনীতে ছিল।

‘ব্লিডিং মুন’ শীর্ষক ছবিটি পেনসিল ও প্যাস্টেলে আঁকা। ২০০৯-এর কাজ। ধূসর প্রেক্ষাপট। উপরে গভীর লাল বর্ণের একফালি চাঁদ। চাঁদ রক্তাক্ত। তার শরীর থেকে রক্ত ঝড়ে পড়ছে ভূমিতলে। সেখানে শুয়ে আছে অজস্র নির্যাতিত যন্ত্রণাকাতর মানুষ। তাদের নগ্ন শরীরে ঝরে পড়ছে চাঁদের রক্ত।

প্যাস্টেল ও অস্বচ্ছ জলরঙে ২০১৫-তে আঁকা একটি ছবির শিরোনাম ‘এমব্রয়ডারার’। এক মানবী শাড়ির উপর সুতোর কাজ করছে। বাঁ-পাশের উপর থেকে নীচে নেমে এসেছে শাড়ির পাড়ের সাদা কারুকাজ। একটি নীল পিস্তল ঝুলছে উপরে। নারীর মগ্নতার উপরে অলক্ষে রয়েছে এই সন্ত্রাস। প্যাস্টেলে ও গুয়াশে আঁকা ২০১৫-র ছবি ‘উই আর লাইক দিজ’। সাদা পাড় ধূসর বর্ণের একটি শাড়ি ঝুলছে প্রেক্ষাপটে। সাদায় রয়েছে এক মানবীর আবক্ষ মাথার ছায়া। সেই মাথার উপর পদাঘাত করছে একটি কালো পা।

‘১০০১ নাইটস’ শীর্ষক ছবিটি কালি ও পেনসিলে ২০০৯-এ আঁকা। শুভ্র, আলোকিত প্রেক্ষাপট। উপরে মন্দির, মসজিদ ও গির্জার সাংকেতিক প্রতিমাকল্প। নিম্নাংশে বসে ও দাঁড়িয়ে আছে দুই নারী। তাঁদের দুপাশে ছড়ানো হত্যার অজস্র অস্ত্র। নিহত কিছু মানুষও ইতস্তত ছড়ানো রয়েছে। এই হল ধর্মীয় সন্ত্রাস। ‘এমব্রয়ডারার’ ছবিটি ১৯৯৭-এর কাজ। মাধ্যম অস্বচ্ছ জলরং। সূর্যাস্তের লাল প্রেক্ষাপটে হলুদাভ বর্ণের তিন নারী কাপড়ের উপর সুতোর অলঙ্করণ করছে। উপরে ও নীচে কলকারখানা থেকে উদগীর্ণ হচ্ছে বিষবাষ্প।

এই শিল্পীর প্রতিবাদী চেতনার নানা দিক আমরা দেখলাম এই ক’টি ছবিতে।

নারীর অবস্থান সব সময়ই তাঁর ভাবনার কেন্দ্রে থাকে। ‘বৃন্দাবনের বিধবা’-রা তাঁর একটি গুরুত্বপূর্ণ চিত্রমালা। অর্পণা-র ছবি খুব সহজ। তাঁর আঙ্গিক খুবই সংবৃত।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy