রঙবেরঙের লেখায়/ যেন জীবন শেখায়’ এমন আশা নিয়ে হাজির ‘আমপাতা জামপাতা’ (সম্পা: দেবাশিস বসু, পরি: একুশ শতক)। শরতের কাশফুলের মতো উজ্জ্বল ছোটদের আঁকা আর লেখা এই সংকলনের বৈশিষ্ট্য। ভাল লাগে বিজ্ঞানের লেখা, মুদ্রার ইতিহাস নিয়ে দোয়েল বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘কড়ি দিয়ে কিনলাম’, দিব্যেন্দু বড়ুয়ার ‘দাবাখেলার গোড়ার কথা’, অশোককুমার মিত্রের ‘অনুবাদ শিবিরের সেনাপতি কুলদারঞ্জন রায়’ ইত্যাদি। গুরুত্বপূর্ণ লেখা প্রণবেশ মাইতির ‘ছোটদের জন্য ছবি’। সুবীর ভট্টাচার্যের ‘অন্নপূর্ণা (দক্ষিণ) মূলশিবিরে’ লেখায় কিছু অবাঞ্ছিত মন্তব্য কেন?
পুজো সংখ্যা ‘কিশোর ভারতী’র (সম্পা: ত্রিদিবকুমার চট্টোপাধ্যায়) ইতিহাসভিত্তিক লেখাগুলি মনভরানো। বরোদার রাজপরিবারকে কেন্দ্র করে ঝিমলি মুখোপাধ্যায় পাণ্ডের ‘রাজরহস্য’, যাতে রহস্যের তুলনায় ইতিহাসের টানটাই বড় আর নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে লেখা হিমাদ্রিকিশোর দাশগুপ্তের ‘কত কক্ষে কাগজ পোড়ে’ — রত্নদধি, রত্নসাগর আর রত্নরঞ্জকের কাহিনি জীবন্ত হয়ে উঠেছে। কুমার মিত্রের ‘ইনকাসম্রাট উইরাকোচা’ও বেশ ভাল। কল্পবিজ্ঞান ও বিজ্ঞানরচনাও উল্লেখ্য: তরুণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘বিজ্ঞানী সন্ন্যাসী’, শ্যামল চক্রবর্তীর ‘বাঙালি ডাক্তারের ওষুধ আবিষ্কার’ ইত্যাদি। কমিকস-এ এখনও টানে নারায়ণ দেবনাথের চিরন্তন সৃষ্টি ‘নন্টে আর ফন্টে’। শঙ্খ ঘোষ, নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী আর পবিত্র সরকার লিখেছেন অনবদ্য সব ছড়া। এত গুরুত্বপূর্ণ পত্রিকার সম্পাদকীয়তে কেন লেখা হবে ‘গড্ডালিকা প্রবাহ’!
হাতি আর বাঘেরা যখন কলকাতায় এসেছিল তখন কী অবস্থা হয়েছিল তাদের আর কী অবস্থা হয়েছিল শহরবাসীর— তা জানতে হলে পড়তেই হবে শিশির মজুমদারের হাতিরা এল কলকাতায় (পারুল প্রকাশনী, ১৫০.০০)। পড়তে পড়তে ছোটরা মজা পাবে এই ভেবে যে হাতিদের শান্ত করতে ময়দানে শহরের সেরা গাইয়ে-বাজিয়েরা গান গাইছেন, বাজনা বাজাচ্ছেন আর হাতিরা ‘শুঁড় দোলায় সমুদ্রের ঢেউয়ের মতো গানবাজনার তালে তালে।’ আর বাঘেরা? ‘রোজ রোজ হরিণ আর খরগোশে আমাদের আর রুচি নেই’— বলে কলকাতা ঘুরতে চলে এল। কিন্তু যখন সত্যিই মাতলা নদী সাঁতরে ক্যানিং হয়ে ট্রেনে চেপে কলকাতায় পৌঁছল তখন কী হল অবস্থা— তা জানতে হলে এ বই না পড়লে চলবে না। এ দু’টি ছাড়া আছে আরও বারোটি এমন মজাদার কাহিনি। সুন্দর কাগজে স্পষ্ট ছাপায় সরস লেখা আর মজার ছবি এর সম্পদ।
‘কিশোর দুনিয়া’-র (সম্পা: তাপস মুখোপাধ্যায়) ‘তুমি কি জানতে’ অংশে আছে শুক্রগ্রহের ভূমিপৃষ্ঠের তাপমাত্রা ৪৫০ ডিগ্রি অথবা জন্মের সময় মানুষ যে মাপের চোখ নিয়ে জন্মায় সারা জীবন তা একই থাকে-র মতো নানা আকর্ষণীয় তথ্য। এ সংকলনের সম্পদ সমীরকুমার ঘোষের ‘কলকাতা থেকে কেপটাউন’, সুমিত্রা পালের ‘জানা-অজানা’, মানসরঞ্জন গুপ্তর ‘জনৈক শিক্ষকের আত্মদান’-এর সঙ্গে শান্তনু সরকারের ‘বহুযুগের ওপার হতে’, মনজিত্ গাইনের ‘মহাকাশের বিপদ’ ইত্যাদি।
শারদীয় ‘শুকতারা’-য় (সম্পা: অরুণচন্দ্র মজুমদার) আছে আকর্ষণীয় ইতিহাসভিত্তিক উপন্যাস: হিমাদ্রিকিশোর দাশগুপ্তের ‘শেবা মন্দিরের সিংহ মানুষ’, সুভাষ ধরের ‘রাজা সাজার বিড়ম্বনা’, আর অভিজিত্ তরফদারের ‘ভীমবেটকার রহস্য’। ভাল লাগে নির্বেদ রায়ের ‘ড্রাগনের খোঁজে’, শক্তিপদ রাজগুরু-র ‘মুম্বাই-এ পটলা’ ছাড়াও কেনেথ অ্যান্ডারসনকে (১৯১০-’৭৪) নিয়ে ধ্রুবজ্যোতি চৌধুরীর ‘ওয়াইনাদের খুনি’। বিজ্ঞানবিচিত্রা ও ক্রীড়াঙ্গন বেশ ভাল। বীরু বসুর ‘বর্ষসেরা তিন স্কুল ক্রিকেটার’ উল্লেখ্য। তবে অন্যান্য খেলার সফল মুখগুলির কাহিনিও তো সমান জরুরি। কিন্তু হীরেন চট্টোপাধ্যায়ের ‘কালো শয়তানের প্রতিশোধ’ ভুল প্রভাব ফেলবে।
শারদ ‘চাঁদের হাসি’-তে (সম্পা: ছন্দা চট্টোপাধ্যায়) ফরাসি, জাপান, কোরিয়া, গ্রিস, ওয়েস্ট ইন্ডিজের লোককথা-র পাশাপাশি টোটোদের উপকথা, বিহারের লোককথা-র সম্ভার। শোভন শেঠের ‘বিদ্রোহী মহিষাসুর’, বলরাম বসাকের ‘দুপুরের খেলা’ সুন্দর। ‘তোমাদের পাতা’-য় সৃজন দে সরকারের শ্রদ্ধার্ঘ্য ‘সাদা কালো চার্লি’ তথ্যসমৃদ্ধ অথচ সুপাঠ্য।
‘টগবগ’-এ (সম্পা: সরল দে) অবনীন্দ্রনাথের ‘নালক’ কাহিনির সুনির্মল চক্রবর্তীর নাট্য-রূপান্তর ভাল লাগবে বড়দেরও। ভাল লাগে ঋতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘ইতিহাসের মায়াজাল’, ইন্দ্রনীল সান্যালের ‘বাবিনের গল্প’, প্রণব সেনের বিজ্ঞানভিত্তিক কাহিনি ‘সূর্য ওঠার পর’, অমর মিত্রের ‘দলমা মশায়’। ভূগোল পছন্দ না হলেও ভাল লাগবে সাধনা মুখোপাধ্যায়ের ‘ভৌগোলিক’।
‘ঝালাপালা’-য় (সম্পা: অশোককুমার মিত্র) শঙ্খ ঘোষের অপরূপ স্মৃতিকথন ‘তার প্রথম রবীন্দ্রজয়ন্তী’। আজকের শিক্ষকরা যদি সময় করে পড়েন, মনে হয় ছোটদের তাতে ভাল হবে। ভাল লাগে জ্যোতির্ময় দাশের অনুবাদে আধুনিক নেপালি শিশুসাহিত্যের জনক মাধব ঘিমির-এর ‘এক অলৌকিক বাঁশি’। তৃষিত বর্মণের ‘চক শিবরামবাটির সোনার মেয়ে’তে ‘গরীব ঘরের মেয়ে’ শিখা রায়ের লড়াই, মতি নন্দীর ‘কোনি’কে মনে পড়ায়। সলিল চট্টোপাধ্যায়ের ‘নুটুপুটুদের পুজো’, তৃণাঞ্জন গঙ্গোপাধ্যায়ের ‘হনুমান’ মন ছুঁয়ে যায়। ইতিহাসভিত্তিক কাহিনি শুভময় মণ্ডলের ‘দুধ রোটি’, কুমার মিত্রের ‘একটি ঐতিহাসিক দলিল’ বেশ ভাল। গুরুত্বপূর্ণ প্রবন্ধ কাবেরী চক্রবর্তীর ‘ছোটদের একটি আদ্যন্ত রাজনৈতিক পত্রিকা বেণু’।
সুচিত্রা ভট্টাচার্য সম্পাদিত ‘ছুটির দেশে’-তে (নির্মল বুক এজেন্সি) আছে ‘পাগলা দাশু’-র সুনির্মল চক্রবর্তীর করা নাট্যরূপ। আছে শান্তিপ্রিয় বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা লড়াকু এক গরিব ছেলের কাহিনি ‘ব্যাট বলের লড়াই’। ভাল লাগবে প্রচেত গুপ্তর সরস লেখা ‘নালিশবালা বালিকা বিদ্যালয়’। বরুণ মজুমদারের ‘বিচিত্র কাহিনি’, অনিশা দত্তর ‘গাছের প্রাণ’ তথ্যসমৃদ্ধ লেখা। প্রবীর জানা-র ‘কালো বিড়ালের চোখ’ আর ইমদাদুল হক মিলনের ‘নিমপাখি’ দুটিতেই এমন অন্ধ বিশ্বাসের কাহিনি কেন?
‘কিশোর জ্ঞান-বিজ্ঞান’-এর (সম্পা: সোমনাথ বল) সম্পদ ‘নিজে নিজে কর’ অংশটি। সামান্য উপকরণ দিয়ে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস তৈরি শেখানো হয়েছে। মূলত বিজ্ঞানের লেখায় সমৃদ্ধ এই পত্রিকায় আছে অণুবীক্ষণ যন্ত্র আবিষ্কর্তা লিউইনহুক-কে নিয়ে সনন্দ চট্টোপাধ্যায়ের লেখা। আছে আব্রাহাম কোভুর ও নরেন্দ্র দাভোলকরকে নিয়ে রাহুল মজুমদারের লেখা ‘বিজ্ঞান ও যুক্তিবাদের দুই সৈনিক’, বলরাম মজুমদারের ‘পরজীবীর ইতিকথা’, তুহিনশুভ্র মণ্ডলের ‘একটি গাছে অনেক জীবন’। প্রদীপকুমার মিত্র-র ‘চিকিত্সাবিজ্ঞানে আত্মবলিদান’, জনরঞ্জন গোস্বামীর ‘আবুতালেব ও করিম খানের ইংল্যান্ড ভ্রমণ’ গুরুত্বপূর্ণ।
‘সন্দেশ’-এ (সম্পা: সন্দীপ রায়) আছে বেশ কিছু ভাল প্রবন্ধ। বিশ্বদেব গঙ্গোপাধ্যায়ের ‘শতবর্ষ পেরিয়ে শিল্পী সূর্য রায়’, শ্যামল চক্রবর্তীর ‘বইয়ের পাতায় বিজ্ঞানের জাদুকর’, পার্থজিত্ গঙ্গোপাধ্যায়ের ‘কুলদারঞ্জন ও তাঁর রবিনহুডের একশো বছর’, প্রদীপ পারেখের ‘ভারতে আধুনিক প্রাণরসায়নের জনক বীরেশচন্দ্র গুহ’ ইত্যাদি। সন্দীপ রায়ের দুটি চিত্রনাট্য ‘বটেশ্বরের অবদান’ আর ‘বাদশাহী আংটি’ বিশেষ আকর্ষণ। উপন্যাসে মন টানে যশোধরা রায়চৌধুরীর ‘রঙিন জ্যামিতি’, গল্পে বলরাম বসাকের ‘তপুর ভাবনা’, প্রচেত গুপ্তর ‘হাততালি পকেটমার’ ইত্যাদি।
‘ছোটোদের কবিতা’-য় (সম্পা: শ্যামলকান্তি দাশ) পার্থজিত্ গঙ্গোপাধ্যায়ের ‘নরেন্দ্র দেবের ছোটোদের জগত্’ ভাল লেখা। ভিনদেশি কবিতা অংশ উল্লেখ্য। ‘টাপুরটুপুর’-এ (সম্পা: মধুসূদন ঘাটী) সম্পাদকের লেখা ‘ঝিনুকপুরের বন্ধু’ বেশ ভাল। ভাল লাগবে শৈলেন ঘোষ, রতনতনু ঘাটী, প্রদীপ মারিক, হর্ষমানস মন্ডল, মেধস ঋষি বন্দ্যোপাধ্যায়ের গল্পগুলিও। শারদীয় ‘শতদ্রু’-র (প্রধান সম্পা: অজয়কুমার নন্দী) ছোটদের লেখা ও ছবি বেশ ভাল। সুকুমার রুজের ‘ছোট্টুর দুঃখকথা’, জয়তী চট্টোপাধ্যায়ের ‘ওরা চারজন’ আর অন্য গল্পগুলিও মন কেড়ে নেয়।
একগুচ্ছ মনমাতানো ছড়া-গল্পের সঙ্গে হকি খেলা নিয়ে নিবন্ধ এ বারের শারদীয় হৈ হৈ-তে (সম্পা: দেবব্রত নিয়োগী)। সম্পাদকীয় ছড়াটি বেশ:
‘দশমীতে চোখের জলে লক্ষ্মীপুজো এল বলে
নতুন করে নাড়ু, সন্দেশ
সন্ধেবেলা খেয়ে আয়েস...।’
ছোটদের কচিপাতা-য় (প্রধান সম্পাদক: সমর পাল) চিরকালের সেরা ছড়া-কবিতার সঙ্গে এ কালের গোয়েন্দা ও ভূতের গল্প। ইতিহাস ও জীবজন্তুরও গল্প। বিজ্ঞান বিভাগে শ্যামল চক্রবর্তীর ‘কী আছে মঙ্গল-এ’।
প্রণবেশ মাইতির প্রচ্ছদ-সহ চমত্কার অলংকরণে বেরিয়েছে শিশুমেলা (সম্পা: অরুণ চট্টোপাধ্যায়)। প্রকাশিত ছড়া-গল্প-কবিতায় শিশুদের নির্মল মনটির স্পর্শ যেন টের পাওয়া যায়। শঙ্খ ঘোষ তাঁর ছড়া ‘স্বাধীন’-এ লিখেছেন
‘বলো তো আজ কেন আমার
ঐতিহাসিক দিন?
কেন এখন খেতেই পারি
ফুচকা বা চাউমিন?’
রঙবেরঙ-এ (সম্পা: চন্দন নাথ) উপন্যাস নাটক গল্প প্রবন্ধের সঙ্গে বেড়ানো, বিজ্ঞান ও পরিবেশ, ইতিহাস নিয়েও নানা লেখা। বাতাসের শিউলির গন্ধ চুপিচুপি মিশে গিয়েছে এই পুজো সংখ্যাটির নতুন পাতা ওল্টানোর গন্ধে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy