শব্দগল্পদ্রুম/ বাংলা ব্যুৎপত্তি অভিধান
লেখক: অভ্র বসু
মূল্য: ৩৫০.০০
প্রকাশক: গাঙচিল
‘ভাষার ক্ষেত্রে চলতে চলতে যাতে আমাকে খুশি করেছে, ভাবিয়েছে, আশ্চর্য করেছে, তারই কৌতুকের ভাগ সকলকে দেব বলেই লেখবার ইচ্ছে হল’— বাংলা ভাষা পরিচয় বইটির ভূমিকায় লিখেছিলেন রবীন্দ্রনাথ। এই সুরেই যেন বাঁধা হয়েছে অভ্র বসুর বইটি। ভূমিকায় অভ্র তাঁর প্রয়াত অধ্যাপক দেবদাস জোয়ারদারের সঙ্গে কথোপকথনে উঠে আসা অভিধান পাঠ প্রসঙ্গে জানিয়েছেন যে তখন থেকেই তাঁকে আকৃষ্ট করেছে ‘শব্দের ব্যুৎপত্তির বিষয়টি’। ‘ব্যুৎপত্তি’ অর্থে হরিচরণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের বঙ্গীয় শব্দকোষ-এ পাওয়া যায় ‘শব্দার্থবোধের শক্তি’, ‘তাৎপর্য’ ইত্যাদি। অভ্র বসুর আগ্রহ এই অর্থের বিবর্তনের দিকে— ‘শব্দার্থ পরিবর্তনই আমাদের মূল লক্ষ্য’। যে হেতু শব্দভাণ্ডারের দিকে তাঁর আগ্রহ নেই তাই গতানুগতিক অভিধানের সঙ্গে আলোচ্য বইটির কাঠামোর প্রথমেই ফারাক হয়ে যায়। ‘সব শব্দের ব্যুৎপত্তি সুস্পষ্ট নয়’— বলেছেন অভ্র। যথার্থ। কিন্তু ‘পাঞ্জাব’-এর মতো কিছু শব্দের ব্যাখ্যায় বোধহয় আরও একটু বিস্তারে বলার দরকার ছিল। আর বাংলা ব্যুৎপত্তি অভিধানে এত ইংরেজি শব্দের প্রয়োজন কী?
পরিবেশ নিয়ে ভাবতে শেখালেন যাঁরা
সম্পাদক: শুভেন্দু গুপ্ত
মূল্য: ২৩০.০০
প্রকাশক: পত্রলেখা
‘এই পৃথিবীতে মানুষই সব নয়। বরং মানুষই পৃথিবীর অংশ। পৃথিবীর ভাগ্যে যা ঘটবে, মানুষের জন্য একই পরিণতি অপেক্ষা করে থাকবে’— এই পরম সত্য উচ্চারণ করেছিলেন আমেরিকার ইন্ডিয়ান ড্বনিশ উপজাতি প্রধান সি’আহেল (যাঁর নামে সিয়াটেল শহর), ১৮৫৪ সালে। ক্রমবর্ধমান বিশ্ব উষ্ণায়ন এবং ওজোন-স্তর হ্রাস আজ সারা পৃথিবীর সমস্যা। এই সংকটকালে সভ্যতার আদিকাল থেকে পরিবেশ নিয়ে যাঁরা মানুষকে সচেতন করেছেন তাঁদের ভাবনাগুলি ফিরে দেখার আত্যন্তিক তাগিদ থেকেই লেখা হয়েছে বইটি। ‘অথর্ব বেদ’-এর ‘পৃথিবীসূক্ত’ বা ‘ভূমিসূক্ত’য় ধরা আছে প্রাচীনতম প্রকৃতিপ্রেম ও পরিবেশ সচেতনতা। এই বই শুরু হয়েছে সেই চিন্তাসূত্র ধরে। তিনটি ভাগে বিন্যস্ত বইটির প্রথম ভাগে আলোচিত হয়েছেন ‘পৃথিবীসূক্ত’ থেকে বুদ্ধদেব, মার্কস, রবীন্দ্রনাথ, গাঁধী, অল্ডো লিয়োপোল্ড, আর্নে নেস এবং সি’আহেল-এর মতো পরিবেশ-দার্শনিকরা। দ্বিতীয় ভাগ পরিবেশ বিজ্ঞানীদের জন্য। সেখানে আছেন কার্ল লিনিয়াস, চার্লস ডারউইন, র্যাচেল কারসন প্রমুখ। তৃতীয় ও শেষ ভাগের আলোচ্য পরিবেশ আন্দোলনের পুরোধা ও সক্রিয় কর্মীদের জীবনকথা। সম্রাট অশোক, বিশনই-দের গুরু জাম্বোজি থেকে সুন্দরলাল বহুগুণা, ওয়ান্গারি মুটা মাথাই, চিকো মেন্ডিস থেকে বন্দনা শিব— অনেকেই আছেন সেখানে। অতীত থেকে বর্তমান, তত্ত্ব, স্বপ্ন, আদর্শ থেকে কর্ম ও আন্দোলন— পরিবেশকে কেন্দ্র করে এই সব ক’টি দিকে আলো ফেলা হয়েছে। সুবিন্যস্ত সুলিখিত বইটি নিঃসন্দেহে ব্যতিক্রমী হয়ে উঠেছে।
দার্জিলিং সঙ্গী
লেখক: হিমানীশ গোস্বামী
মূল্য: ২৫০.০০
প্রকাশক: সপ্তর্ষি
‘জঙ্গল, ক্ষুরধারা নদী, মশা এবং পীপরাস’, ১৮৩৭। দার্জিলিঙ যাওয়ার পথের সমস্যা নিয়ে এক ব্যক্তি লিখেছিলেন। হাতে কয়েক দিন পেলেই দার্জিলিঙে ঢুঁ মারা বাঙালির মজ্জাগত হয়ে গিয়েছে। কিন্তু এই শৈল শহরের গড়ে ওঠার ইতিহাস, তার আনাচে-কানাচে ছড়িয়ে থাকা ইতিহাস, উদ্ভিদ ও প্রাণীদের নিয়ে বাঙালি খুব একটা মাথা ঘামায় না। সেই ইতিহাসও যে কত বিচিত্র হতে পারে তা উঠে এসেছে হিমানীশ গোস্বামীর বইটিতে। উপরের উক্তিটি খুঁজে বার করেছেন লেখকই। তিনি অবশ্য বলেই নিয়েছেন এটি গাইড বই নয়, বরং আড্ডা জমানোর বই। হিমানীশ গোস্বামীর লেখা মানেই তাঁর বাঁকে বাঁকে লুকিয়ে আছে সরস গল্প। ইতিহাসের আকর থেকে সেই সব গল্প তুলে এনেছেন লেখক। হিমালয়ের কোলে লুকিয়ে থাকা সিকিম সাম্রাজ্যের এক অখ্যাত গ্রাম কী ভাবে আজকের দার্জিলিঙ হয়ে উঠল সেই গল্প শুনিয়েছেন লেখক। শুধু দার্জিলিঙ নয়, একই সঙ্গে পাল্টে গিয়েছে শিলিগুড়িও। ঘোড়া বা গরুর গাড়ি, পায়ে হেঁটে পাল্কি চেপে দার্জিলিঙ যেতে হত। ধীরে ধীরে রেলের প্রসার সে যাত্রাকে সহজ করে তুলেছে। শিলিগুড়ি থেকে দার্জিলিঙ পর্যন্ত টয় ট্রেন সে যাত্রাকে আরও মনোরম করেছে। যে ট্রেনের পিছনেও রয়েছে ইতিহাস। দার্জিলিঙের উদ্ভিদ ও প্রাণীজগৎও বৈচিত্রে ভরা। সে জগতেরও এক ঝলক এই বইয়ে ধরা পড়েছে। মানুষের তাড়নায় অবশ্য প্রাণী ও উদ্ভিদ জগৎ— দার্জিলিঙে দুই-ই বিপন্ন। সত্তরের দশকের শেষ দিকে দাঁড়িয়ে যার আভাস পেয়েছিলেন লেখক। হারিয়ে যাওয়া এই বইটিকে ফিরিয়ে এনেছে সপ্তর্ষি প্রকাশন। দার্জিলিঙ সম্পর্কে আগ্রহ থাকলে এক বার চোখ বুলিয়ে নিতে পারেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy