জঙ্গলমহল কথা
সম্পাদক: তাপস মাইতি
মূল্য: ৭০০.০০
প্রকাশক: উপত্যকা, মেদিনীপুর
কচড়া, কুজরী, করঞ্জ, জাড়া ইত্যাদি তেল অথবা কুরকুট, ললকিডাকা, বাসকিডাকা, বাঁওলা ইত্যাদি খাদ্যবস্তুর কথা মহানগরবাসীর সম্পূর্ণ অজানা। যে গাছ সাধারণ পশ্চিমবঙ্গবাসীর কাছে অর্জুন তার নাম যেখানে কাওহা, অমলতাসের নাম হাঁড়িচুপি বা সন্ডাল, সেই অঞ্চলটির নাম জঙ্গলমহল। নামে চেনা হলেও ‘ঘরের কাছে আরশিনগর’ সম্পর্কে জনসাধারণ নিতান্ত অজ্ঞ। ‘অরণ্য তার সম্পদ, পর্যটন যার ভবিষ্যৎ’ সেই সুপ্রাচীন অরণ্যময় ভূখণ্ডের ‘আদিমতম সত্তার উন্মোচনে’ আলোচ্য বইটির ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। জীববৈচিত্র, জনজাতি, খাদ্য ও পোশাকপরিচ্ছদ, ঘরবাড়ি, বাসস্থান, ধর্মবিন্যাস, হাটের চিত্র ও বৈচিত্র, শিল্পচিত্র, ভাষা ও ভাষ্য, সাহিত্য ও পত্রপত্রিকা, গল্পকাহিনি, পরিবেশপ্রবাহ থেকে গণআন্দোলন, অর্থনীতি, প্রত্নক্ষেত্র, উন্নয়ন ইত্যাদি সাতাশটি বিষয়ে ‘জীবনরসে জারিত অথচ অবহেলিত, উপেক্ষিত মানুষের’ এক বিশদ উপাখ্যান রচনা করেছেন তাঁরাই যাঁরা মূলত জঙ্গলমহলের ভূমিপুত্র। অধীত বিদ্যা এবং অন্তরের টান দুইয়ে মিলে বেশিরভাগ প্রবন্ধই তথ্যপূর্ণ ও মর্মস্পর্শী হয়ে উঠেছে। ঝাড়খণ্ড, ওডিশা ও পশ্চিমবঙ্গের কিছু অংশ জঙ্গলমহলের অন্তর্গত হলেও আলোচ্য বইটিতে কেবল ‘পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার সরকারিভাবে জঙ্গলমহল হিসাবে চিহ্নিত অংশ’ বিষয়ে আলোচনা সীমাবদ্ধ রাখা হয়েছে।
বাংলা মঙ্গলকাব্য ও তার উত্তরাধিকার
সম্পাদক: বিমলকুমার থান্দার
মূল্য: ২৬০.০০
প্রকাশক: বিবেকানন্দ বুক সেন্টার
পঞ্চদশ থেকে মূলত অষ্টাদশ শতাব্দী পর্যন্ত বাংলা সাহিত্যে লৌকিক দেবদেবীর মর্ত্যে পূজা পাওয়ার আকাঙ্ক্ষা ও যেনতেনপ্রকারেণ সেই আকাঙ্ক্ষা পূর্ণ করার কাহিনিকে কেন্দ্র করে লেখা হয়েছে সব ক’টি মঙ্গলকাব্য। অষ্টাদশ শতাব্দীর শেষ থেকে এই ধর্মবিশ্বাসের স্রোত ক্ষীয়মান হলেও নানান আবহে তার প্রভাব জনজীবনে আজও বহমান। এই বিষয়ে আয়োজিত এক জাতীয় আলোচনাচক্রে পঠিত প্রবন্ধ থেকে নির্বাচিত সংকলন আলোচ্য বইটি। সূচনায় রামকুমার মুখোপাধ্যায় বলেছিলেন, মঙ্গলকাব্যের ‘নবপাঠ’ প্রয়োজন। ‘কৃষ্ণমঙ্গল’ পাঁচালির অপ্রকাশিত পুথি প্রকাশের পাশাপাশি একাধিক প্রবন্ধে এই ‘নবপাঠ’-এর নানা রূপ ফুটে উঠেছে। অবনীন্দ্রনাথের আঁকা কালকেতু-ফুল্লরার ছবিতে, রবীন্দ্রনাথের নানা প্রবন্ধে, তারাশঙ্করের নাগিনীকন্যার কাহিনী, জীবনানন্দ দাশের রূপসী বাংলা-র একাধিক কবিতায়, শম্ভু মিত্রের চাঁদ বণিকের পালা, মহাশ্বেতা দেবী, সেলিনা হোসেন, রামকুমার মুখোপাধ্যায় সহ আরও কত সাহিত্যিকের সাহিত্য চর্যায় ঘুরে ঘুরে ফিরে ফিরে আসে মঙ্গলকাব্যের উপমা, সে সবের বিশদ আলোচনা সহ মঙ্গলকাব্য বিষয়ে নানা নতুন ভাবনা বইটিকে অন্য মাত্রা দিয়েছে।
বঙ্গ-হৃদি গণপতি গজানন
লেখক: শিবেন্দু মান্না
মূল্য: ২৫০.০০
প্রকাশক: অরুণা প্রকাশন
উনিশ শতকের লিথোচিত্রে শিব ও দুর্গার গণেশ কোলে সরল দৃশ্য দেখলে আলোচ্য বইটির শিরোনাম জটিলই মনে হয়। অবনীন্দ্রনাথ ঠাকুর ‘ভারতশিল্পে মূর্তি’ লেখায় গণেশের মূর্তিবিভঙ্গ প্রসঙ্গে বলেছেন, ‘ক্বচিৎ বালসদৃশং, সদৈব তরুণং বপু।’ অর্থাৎ কখনও-বা বালকের মতো হলেও সদাসর্বদা তরুণবয়স্কের মতো গণেশমূর্তির শরীরের আদল। এ ছাড়া হাতের মুদ্রা, আয়ুধসম্ভার, শিরোভূষণ, নৃত্যভঙ্গিমা— এমন নানা বিষয় সংযুক্ত হয়ে গণেশ মহিমময় গণপতির রূপ পান। লেখকের চর্চার মূল অভিপ্রায় কেন্দ্রীভূত বেদ, পুরাণ, উপাখ্যান, মহাকাব্যের নানা তথ্য আঙ্গিকে বিশ্লেষণী উপস্থাপনায়। এই সূত্র ধরে মধ্যযুগের বাংলা কাব্যে বিজয়গুপ্ত, বিপ্রদাস পিপলাই, দ্বিজ মাধব, মুকুন্দ চক্রবর্তী, ঘনরাম চক্রবর্তী, রামেশ্বর ভট্টাচার্য, ভারতচন্দ্র রায় প্রমুখের বর্ণনায় গণেশ বন্দনার রূপ আছে। বাংলার মন্দিরে, থানে গণেশ আরাধনার প্রসঙ্গক্রমে আছে ধ্যান মন্ত্র, গায়ত্রী মন্ত্র, পুজোর মন্ত্র ও স্তবের নানা সূত্র। লেখক এরই পরিপূরক হিসেবে নবকুমার ভট্টাচার্য কৃত তন্ত্রশাস্ত্রে গণেশ এবং সুহৃদকুমার ভৌমিকের রচনায় আদিবাসী সমাজে গণেশরূপের বিষয় এই বইয়ে সংকলিত করেছেন। ভারতের সনাতন হিন্দু ধর্মমতের অন্তঃপ্রবিষ্ট রূপবৈচিত্রে শুধু নয়, গণেশের পূজা-সংস্কৃতির মহিমা প্রাচ্যদেশের নানা স্থানেই বিস্তার লাভ করেছে। গণেশের বিচিত্র অবয়ব টেরাকোটা ফলকের ছবিতে দৃষ্টি আকর্ষণী হলেও ধাতু কাঠ শোলা হাতির দাঁত চিত্রকলা ইত্যাদি মাধ্যমে প্রকাশিত রূপবৈচিত্র এ বইয়ের চিত্রসম্ভারে থাকলে তা আরও আকর্ষণীয় হত। গণেশ চর্চার তাত্ত্বিক পরিমণ্ডল তৈরিতে, লেখকের অন্বেষণের চমৎকারিত্বে, উৎসুক বঙ্গহৃদয় সিদ্ধিলাভ করবে— এ আশা করাই যায়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy