Advertisement
১৯ নভেম্বর ২০২৪
পুস্তক পরিচয় ২

অনালোকিত শিল্প মর্যাদা পেল

চতুর্দশ থেকে অষ্টাদশ শতকের মধ্যবর্তী পর্বে দক্ষিণ ভারতের ইতিহাস উত্তরের তুলনায় অনেক বৈচিত্রপূর্ণ। অথচ উত্তরের সুলতানি ও মুঘল জমানা নিয়ে যত বইপত্র লেখা হয়েছে, দক্ষিণে তেমন নজরই পড়েনি। সবে গত কয়েক দশকে শিল্প-ঐতিহাসিকদের চোখ পড়েছে দক্ষিণে।

শেষ আপডেট: ০২ মে ২০১৫ ০১:০২
Share: Save:

চতুর্দশ থেকে অষ্টাদশ শতকের মধ্যবর্তী পর্বে দক্ষিণ ভারতের ইতিহাস উত্তরের তুলনায় অনেক বৈচিত্রপূর্ণ। অথচ উত্তরের সুলতানি ও মুঘল জমানা নিয়ে যত বইপত্র লেখা হয়েছে, দক্ষিণে তেমন নজরই পড়েনি। সবে গত কয়েক দশকে শিল্প-ঐতিহাসিকদের চোখ পড়েছে দক্ষিণে। দাক্ষিণাত্যের ইসলামি স্থাপত্য নিয়ে ই এস মার্কলিঙ্গার-এর পথিকৃৎ কাজের (১৯৮১) পর বিস্তারিত গবেষণা পাই জর্জ মিচেল ও মার্ক জেব্রোস্কি-র বইয়ে (১৯৯৯), চিত্রকলা নিয়ে মার্ক জেব্রোস্কি-র বইটির (১৯৮৩) পর ডেবোরা হাটন (২০০৬), আর সামগ্রিক শিল্পভাবনা নিয়ে নবিনা নজত হায়দর ও মারিকা সরদারের বইয়ে (২০১১)। এ বার হাতে এল নতুন ভাবনায় সমৃদ্ধ দ্য ভিসুয়াল ওয়ার্লড অব মুসলিম ইন্ডিয়া/ দি আর্ট, কালচার অ্যান্ড সোসাইটি অব দ্য ডেকান ইন দি আর্লি মডার্ন এরা (সম্পা. লরা ই পারোদি, আই বি টরিস)।

তথ্য ও তত্ত্বভিত্তিক আলোচনার ধারায় আলোচ্য বইটি ব্যতিক্রমী সংযোজন। বৃহত্তর প্রেক্ষিতে, নানা বিচিত্র ক্ষেত্রের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন করে শিল্প-স্থাপত্য-দরবারি ও জনসংস্কৃতির বিশেষ কয়েকটি দিককে এখানে আলোকিত করা হয়েছে। ১৩২৩ থেকে ১৩৪০ খ্রিস্টাব্দের মধ্যেই দাক্ষিণাত্যের তিনটি প্রধান হিন্দু রাজবংশ— মরাঠিভাষী যাদব, কন্নড়ভাষী হয়সল এবং তেলুগুভাষী কাকটীয়— উৎখাত হয়ে যায় দিল্লির সুলতানদের একের পর এক অভিযানে। এক বার তো মহম্মদ বিন তুঘলক দিল্লি থেকে রাজধানী দেবগিরিতে সরিয়েও এনেছিলেন। তুঘলক ক্ষমতার অবসানে দাক্ষিণাত্যে সৃষ্টি হয় দুই প্রধান শক্তির— বিজয়নগরে সঙ্গম বংশ এবং গুলবর্গায় বাহমনি, গড়ে ওঠে নিজস্ব হিন্দু-মুসলিম সংস্কৃতি। বাহমনি থেকে পরে বেরার, বিজাপুর, আহমদনগর, বিদর ও গোলকোন্ডা— পাঁচ শক্তির উদ্ভব। এদের পারস্পরিক সংযোগ ও বিরোধের পথেই সেই সংস্কৃতির সমৃদ্ধি। সতেরো শতকের শেষে মুঘল সাম্রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত হয় এই অঞ্চল।

আলোচনায় এসেছে দাক্ষিণাত্যে বৃত্তাকার নগর স্থাপনের ধারাবাহিকতা, (কাকটীয় রাজধানী ওরঙ্গল সব থেকে উল্লেখযোগ্য উদাহরণ), গোলকোন্ডার মসজিদ ও সমাধি-স্থাপত্য (যেখানে এক নতুন সমীক্ষায় উঠে এসেছে আগে অনালোচিত বহু নিদর্শন), উপকূলবর্তী ‘চল’ শহরের বৃত্তান্ত, বিজয়নগরের স্থাপত্য-ভাস্কর্যে পরিযান ও তার সাংস্কৃতিক প্রভাব, গুলবর্গার ‘বড় মসজিদ’-এর প্রকৃত চরিত্র, দক্ষিণের নিজস্ব শৈলীর বিশাল সব কামান যেখানে অটোমান প্রভাব স্পষ্ট, ভাস্কর্যে বিভিন্ন প্রাণীর সংঘাতের প্রতীকী বৈশিষ্ট্য, দক্ষিণী উর্দুর অন্যতম প্রাচীন চিত্রিত নমুনা মহম্মদ কুলি কুতুব শাহের ‘দিওয়ান’, বিজাপুরে এক ডাচ শিল্পী, বিদরি-শিল্পী, সুফি রোমান্স ‘গুলশন-ই ইশ্ক’, মুসলিম জনসংস্কৃতির পবিত্র স্থান, ইত্যাদি বিষয়। সব মিলিয়ে সমসাময়িক বিশ্বের সামগ্রিক ইসলামি সংস্কৃতির প্রত্যক্ষ সংযোগে পরিপুষ্ট প্রাগাধুনিক দাক্ষিণাত্যের ঐতিহ্য এই বইয়ে প্রকাশ পেয়েছে।

বর্তমান রাজস্থানের দক্ষিণপূর্ব প্রান্তে অবস্থিত বুঁদি ছিল কয়েকশো বছর ধরে রাজপুত শাসিত এক ছোট্ট রাজ্য। ১৫৬৯-এ সম্রাট আকবর রাও সর্জনকে পরাজিত করে রণথম্ভোর দুর্গ দখল করেন, বুঁদি পরিণত হয় মুঘলের করদ রাজ্যে। ষোড়শ শতকের শেষে সর্জনের উত্তরাধিকারী ভোজ সিংহের সময়েই সম্ভবত বুঁদির নতুন প্রাসাদ তৈরি শুরু হয়, ১৮৮৭-তে কিপলিং এই প্রাসাদের চিত্র মহলে শিল্পীদের দেওয়ালচিত্র আঁকতে দেখেছিলেন। তিনশো বছর ধরে বুঁদির মহারাওদের আনুকূল্যে প্রাসাদের বিভিন্ন মহলে যে বিপুল পরিমাণ ছবি আঁকা হয়েছিল, রাজস্থান চিত্রকলার ইতিহাসে তার জুড়ি মেলা ভার। বুঁদির এই সব ছবি নিয়ে আলোচনা কম হয়নি, কিন্তু রঙিন আলোকচিত্রে তার বড় অংশ এই প্রথম প্রকাশিত হল মিলো সি বিচ-এর অ্যান আননোন ট্রেজার ইন রাজস্থান/ দ্য বুঁদি ওয়াল-পেন্টিংস (আলোকচিত্র হিলডি লওয়ার্ট ও উইনি গোবিন। টেমস অ্যান্ড হাডসন, ৪৯.৯৫ পাউন্ড)। বড় আকারের বইটির দুশো পাতার চিত্র সম্ভারে উঠে এসেছে এক আশ্চর্য শিল্পজগৎ, রাজস্থানি অণুচিত্রের তুলনায় যা অনেক সজীব, অনেক মাটির কাছাকাছি।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy