সাহিত্যসম্রাটের (১৮৩৮-১৮৯৪) মৃত্যুতে বাংলার সমাজজীবনে তুমুল আলোড়ন উঠেছিল। সাধারণ শিক্ষিত ভদ্রলোক থেকে বৌদ্ধিক সমাজ— সকলেই শোকে স্তব্ধ হয়ে পড়েছিলেন। দুঃখ শোক কাটাতে আর তাঁকে শ্রদ্ধা জানাতে শুরু হয়েছিল স্মরণানুষ্ঠান। স্টার থিয়েটারে এমনই এক স্মরণ সভায় বাংলা সাহিত্যে প্রয়াত মানুষটির অপরিমেয় অবদান নিয়ে রবীন্দ্রনাথ প্রায় এক ঘণ্টা তাঁর পঠিত ‘বঙ্কিমচন্দ্র’ নিবন্ধের ছত্রে ছত্রে বঙ্কিম-স্মরণাঞ্জলি অর্পণ করেছিলেন। বলেছিলেন, ‘‘সৌভাগ্যক্রমে আমরা বাল্যকালে বাঙ্গালা ভাষায় বিদ্যাশিক্ষা লাভ করিয়াছিলাম। স্বল্প ইংরাজি যাহা শিখিতাম তাহার মধ্যে হইতে হৃদয়ের পোষণযোগ্য তৃপ্তিজনক কোন রস আকর্ষণ করিবার ক্ষমতা ছিল না অথচ তৃষ্ণা যথেষ্ট ছিল।... তখন বাঙ্গালা গ্রন্থের সংখ্যা অল্প ছিল। এবং বালকদিগের পাঠের অযোগ্য গ্রন্থও অনেক বাহির হইত। এবং আমরা অপরিতৃপ্ত আগ্রহের সহিত ভালমন্দ সকল গ্রন্থই নির্ব্বিচারে পাঠ করিতাম। তরুণ হৃদয়ের সেই স্বাভাবিক ক্ষুধা উদ্রেকের সময় বঙ্কিমের নবীনা প্রতিভা লক্ষ্মীরূপে সুধাভাণ্ড হস্তে লইয়া আমাদের সম্মুখে আবির্ভূত হইলেন, তখন যে নূতন আস্বাদ, নূতন আনন্দ, নূতন জীবন লাভ করিয়াছিলাম তাহা কোন কালে ভুলিতে পারিব না।’’ আলোচ্য গবেষণামূলক সংকলনটিতে বঙ্কিমচন্দ্রের প্রয়াণোত্তর সময়কালকে ধরা হয়েছে। শোকসংবাদ, শোক লিপি সংগ্রহ থেকে স্মরণানুষ্ঠানের সংবাদ পুঙ্খানুপুঙ্খ তুলে ধরা হয়েছে। শুধু তা-ই নয়, বিধৃত হয়েছে সাহিত্য সম্রাটের পরিবার, শিক্ষা, কর্মজীবন, প্রশাসনিক দক্ষতা নিয়ে পদস্থ আধিকারিকদের মূল্যায়ন।
বঙ্কিম বসন্তে কালবেলা
উদয়ন মিত্র
৩৫০.০০
সোপান
প্রথম পর্বে বিদ্যাসাগর সম্পর্কে বিরূপ ধারণা পোষণ করলেও পরবর্তী কালে বঙ্কিমচন্দ্র তাঁর সম্পর্কে মন্তব্য করেছিলেন ‘‘বিদ্যাসাগর মহাশয় রচিত ও গঠিত বাংলা ভাষাই আমাদের মূলধন।’’ এমনকি এও বলেছিলেন ‘‘বিদ্যাসাগর মহাশয়ের ভাষা অতি সুমধুর ও মনোহর।’’ লেখক বিদ্যাসাগর ও তাঁর লেখালেখি নিয়ে প্রশান্ত হালদারের রচনা থেকে হদিশ মিলবে বাংলা গদ্যসাহিত্যের রীতি-রেওয়াজের কতখানি পথপ্রদর্শক ছিলেন তিনি। তাঁর প্রণীত গ্রন্থাদির বিস্তারিত বিবরণে সে সম্পর্কে আমাদের ওয়াকিবহাল করে তোলেন প্রশান্ত, খেয়াল করিয়ে দেন যে তাঁর সাহিত্য তাঁর কর্মজীবনেরই প্রক্ষেপমাত্র, নিছক উৎকৃষ্ট সাহিত্য সৃষ্টি তাঁর মুখ্য উদ্দেশ্য ছিল না, সহজ প্রাঞ্জল মার্জিত ভাষায় শিক্ষার্থীদের উপযুক্ত পুস্তকাদি রচনার ভিতর দিয়েই তিনি হয়ে উঠেছিলেন বাংলা সাহিত্যের পিতৃত্বের অন্যতম দাবিদার। অমলকুমার মণ্ডল সঙ্কলিত ‘ঘটনাপঞ্জির আলোকে বিদ্যাসাগর’ ও ‘বিদ্যাসাগরের রচনাপঞ্জি: রচিত-সম্পাদিত’ থেকে পাওয়া যাবে জীবন ও কর্মকাণ্ডের রূপরেখা। আছে তাঁর রচনাদির পুনর্মুদ্রণও। ভাই শম্ভুচন্দ্রের রচনা থেকে উঠে আসে দরিদ্রসাধারণের অস্তিত্বরক্ষা-র জন্য কী পরিমাণ লড়াইয়ে শামিল হয়েছিলেন বিদ্যাসাগর। তাঁর প্রতি নিবেদিত সে কাল ও এ কালের কবিদের কবিতা, তাঁকে নিয়ে নানা মূল্যায়ন— অতীত ও সাম্প্রতিকের। সব মিলিয়ে বিদ্যাসাগর সম্বন্ধে সামগ্রিকের সন্ধান সংখ্যাটিতে।
ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর
সম্পা: উৎপল ভট্টাচার্য
৩০০.০০
কবিতীর্থ
পরাধীন ভারতে এক দিকে যেমন একাধিক স্বদেশব্রতী সংগঠনের পরিকল্পনার মধ্য দিয়ে রাজনারায়ণ বসুর (১৮২৬-৯৯) সংগঠন-কুশলতার পরিচয় পাওয়া যায়, তেমনই আবার তিনিই প্রথম জাতিগত উপাদান-সহ নানা দেশাত্মবোধক রচনায় ভারতবর্ষের জাতিকল্পকে সুসংহত রূপে প্রকাশ করেন। কে বা কারা তাঁকে ‘জাতীয়তাবাদের পিতামহ’ আখ্যা দিয়েছিলেন তা জানা না গেলেও তার মধ্যে কোনও অত্যুক্তি নেই। উনিশ শতক জুড়ে বঙ্গীয় নবজাগরণের নানান ওঠাপড়ার ভিতর দিয়ে তিনি অগ্রগতির আদর্শ স্থাপনে সারথি হয়ে উঠেছিলেন। নিরন্তর টানাপড়েন সত্ত্বেও ঐতিহ্য ও আধুনিকতার মেলবন্ধনে সচেষ্ট ছিলেন বরাবর। সমাজের আমূল সংস্কারে এগিয়ে আসেন তিনি, বিশেষত বাল্যবিবাহ বা কৌলীন্যপ্রথার ভয়াবহতা রোধে। বিধবাবিবাহ আন্দোলনের রূপকার বিদ্যাসাগরের প্রধান সহযোদ্ধা ছিলেন তিনিই, তাঁর দুই ভাইকে বালবিধবাদের সঙ্গে বিয়ে দিয়ে সমাজে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেন। সনাতন হিন্দু ধর্মের যুক্তিহীনতা ও কুসংস্কারের বিরুদ্ধে একেশ্বরবাদের আশ্রয় নিয়ে গ্রহণ করেন ব্রাহ্ম ধর্ম। ‘‘তিনি ব্যাকুল ছিলেন দেশের সর্বাঙ্গীন জাগরণের জন্য।’’— সুকুমার সেনের মন্তব্য তাঁর সম্পর্কে। তাঁর সংক্ষিপ্ত জীবনপঞ্জি ও পরিশিষ্টে তাঁর দু’টি রচনা বইটিতে। তরুণ গবেষক অর্ণব নাগ রচিত এ-বই প্রকাশের গুরুত্ব খেয়াল করিয়ে দিয়েছেন বিমলশঙ্কর নন্দ প্রাক্কথনে: ‘‘এদেশের জাতি এবং সমাজ গঠনে এত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা থাকা সত্ত্বেও রাজনারায়ণ বসু অনেক কম আলোচিত।’’
রাজনারায়ণ বসু
অর্ণব নাগ
২৭৫.০০
ইনস্টিটিউট অব সোশ্যাল অ্যান্ড কালচারাল স্টাডিজ়, পরি: অক্ষর প্রকাশনী
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy