আড়াই হাজার বছর ধরে এশিয়া মহাদেশ জুড়ে কুড়িটিরও বেশি দেশে, আর সাম্প্রতিক কালে পশ্চিমী দুনিয়ার কোনও কোনও অংশে বৌদ্ধ স্থাপত্যের বিকাশ ঘটেছে। মূলত স্তূপ-মন্দির-বিহার কেন্দ্রিক এই স্থাপত্যধারা দেশ থেকে দেশে, কালে কালান্তরে বৌদ্ধ ধর্মীয় চিন্তার বিকাশ-বিস্তারের সঙ্গে সঙ্গে নানা বিচিত্র রূপে প্রকাশিত হয়েছে। সর্বত্রই স্থানীয় শিল্পশৈলীর সঙ্গে মিলেমিশে তৈরি হয়েছে তার স্বাধীন সত্তা, তাই কোনও ছক-বাঁধা ব্যাখ্যায় তার পরিপূর্ণ রূপ ধরা অসম্ভব। বিশিষ্ট স্থপতি বিক্রম লাল তাই এই স্থাপত্যকে তুলনামূলক সাংস্কৃতিক প্রেক্ষিতে ধরতে চেয়েছেন। তাঁর পরিকল্পিত বৌদ্ধ স্থাপত্যের সামগ্রিক ইতিহাস শুধু প্রয়োজন ও প্রকরণভিত্তিক খুঁটিনাটি বিবরণ নয়, এই স্থাপত্যশৈলীকে তিনি বুঝতে চেয়েছেন বৌদ্ধধর্মের এক গভীরতর সাংস্কৃতিক প্রক্রিয়ার প্রকাশ হিসাবে। দেশগুলির ভৌগোলিক সীমারেখায় নয়, সাংস্কৃতিক অঞ্চল অনুযায়ী বিক্রম এই ইতিহাসকে সাজাতে চেয়েছেন। ছ’খণ্ডে পরিকল্পিত ‘আর্কিটেকচার অব দ্য বুদ্ধিস্ট ওয়ার্লড’ গ্রন্থমালার প্রথমটি প্রকাশিত হয়েছে: দ্য গোল্ডেন ল্যান্ডস (জেএফ পাবলিশিং/অ্যাবেভিল প্রেস পাবলিশার্স, ৯৫ ডলার)। এই খণ্ডে আছে মায়ানমার, ভিয়েতনাম, ইন্দোনেশিয়া, কম্বোডিয়া, তাইল্যান্ড ও লাওস-এর বৌদ্ধ স্থাপত্য।
বিক্রম লাল সূচনায় অল্প কথায় বৌদ্ধ স্থাপত্যের মূল তাত্ত্বিক দিকটি আলোচনা করে নিয়ে নির্দিষ্ট অঞ্চল প্রসঙ্গে এসেছেন। প্রতিটি দেশের ক্ষেত্রে আলোচনা তিন ভাগে বিভক্ত: প্রথমে সেই অঞ্চলে বৌদ্ধ স্থাপত্যের বিবর্তন, দ্বিতীয় অংশে স্থাপত্য-বৈশিষ্ট্য আর শেষে বাছাই করা কয়েকটি নিদর্শনের কথা। আলোচিত প্রতিটি নিদর্শনই প্রচুর ছবি দিয়ে ব্যাখ্যা করা হয়েছে। সঙ্গে সেই সব স্থাপত্যের আধুনিক প্রযুক্তির সাহায্যে তৈরি ত্রিমাত্রিক মডেল— বিভিন্ন ভাবে তার ছবি থাকায় নানা দিক থেকে এই সব নিদর্শন পাঠকের কাছে স্পষ্ট হয়ে উঠেছে।
মায়ানমারে খ্রিস্টীয় তৃতীয় শতাব্দীতে নির্মিত বুপায়া স্তূপ থেকে দ্বাদশ শতকের আনন্দ মন্দির হয়ে উনিশ শতকের কুথোদো প্যাগোডা, ইন্দোনেশিয়ার নবম শতকের বোরোবুদুর, কম্বোডিয়ার দ্বাদশ শতকের বেয়ন মন্দির এবং তাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম, লাওসের নানা গুরুত্বপূর্ণ বৌদ্ধ স্থাপত্য নিয়ে আলোচনা করেছেন বিক্রম। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার এই বিস্তীর্ণ ভূখণ্ডে বৌদ্ধধর্মের বিস্তার এবং তার স্থাপত্যকলার বিস্ময়কর স্ফুরণ বিক্রমের আলোচনায় সজীব হয়ে উঠেছে। এই গ্রন্থমালা সম্পূর্ণ হলে বিশ্বজোড়া বৌদ্ধ স্থাপত্যসংস্কৃতি নতুন ভাবে দেখার সুযোগ পাওয়া যাবে, সন্দেহ নেই।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy