—প্রতীকী চিত্র।
নিজের শর্তে বাঁচা অনন্য দ্যুতিময় শিল্পী অমৃতা শের-গিলের লেখা ডায়েরির অংশ, চিঠি, অল্প সংখ্যক প্রবন্ধ এবং বক্তৃতার এই সঙ্কলনের পরতে পরতে ফুটে ওঠে তাঁর নাক্ষত্রিক উজ্জ্বলতা। ধরা পড়ে তাঁর একাধারে আন্তর্জাতিক ও তীব্র ভাবে ভারতীয় মনন, মাত্র ঊনত্রিশ বছরের জীবনের অনন্য সব অভিজ্ঞতা ও বীক্ষণ, শিল্পের ক্ষেত্রে রীতি-ভাঙা ডিসকোর্সে তাঁর অনমনীয় আত্মবিশ্বাস।
হাঙ্গেরিয়ান ও ভারতীয় এই শিল্পীর জীবন ও যাপন সাধারণের চেয়ে আলাদা, অশান্ত, বোহেমিয়ান। কেবলই যেন কিছু খুঁজে বেড়াচ্ছেন, না পেয়ে অস্থির হয়ে আবার নতুন অন্বেষণে আত্মনিয়োগ করছেন। হাঙ্গেরি, ইটালি, ফ্রান্স ও ভারতের বিভিন্ন প্রান্তে দিন কাটাচ্ছেন শিল্পের ভাষার খোঁজে, প্রেরণার সন্ধানে, জীবনীশক্তির অন্বেষণে। নিজেকে বার বার ভেঙে নতুন নতুন ভাবে আবিষ্কার করতে চেয়ে বিতর্ককে নিবিড় আলিঙ্গন করাই তাঁর অতিনাটকীয়তায় ভরা জীবনের মূল সুর। বিবিধ ঘটনা এবং তাতে তাঁর প্রতিক্রিয়া কী ভাবে তাঁর ব্যক্তি ও শিল্পী সত্তার পূর্ণ বিকাশের দিকে তাঁকে অতি দ্রুত এগিয়ে দিচ্ছে, তারই বহতা স্রোত ভিভান সুন্দরম-কৃত এই সঙ্কলন।
ডায়েরির প্রথম পর্বে সাত-আট বছর বয়সের কল্পনাপ্রবণ শিশু অমৃতা লিখছেন বিচিত্র সব কাহিনি, চলমান ছবি হয়ে ফুটে ওঠে চোখের সামনে। পরে তাঁর অনিয়মিত রোজনামচা এবং চিঠিপত্রগুলি হবে তাঁর উচ্চাকাঙ্ক্ষী ও অনন্যসাধারণ হয়ে ওঠার সূত্র। তাঁর আত্মবিশ্লেষণ অতি অল্পবয়সেই তাঁকে আলাদা করে তুলছে, তাঁর জীবনকে এক অস্বাভাবিক উজ্জ্বল মাত্রা দিয়েছে। এই আলো তাঁর বহুমাত্রিক চিন্তামার্গ, শিল্প সম্পর্কীয় স্পর্ধিত উচ্চারণ ও দেখার ভঙ্গিকে বোঝার পথে পাঠককে হয়তো একটু এগিয়ে নিয়ে যাবে।
চেনা অমৃতা, অচেনা অমৃতাসঙ্কলন ও সম্পা: ভিভান সুন্দরম,
নির্বাচিত অংশের তরজমা: ঈশানী রায়চৌধুরী
৯৫০.০০
ধানসিড়ি
তবে অমৃতার মতো এক শিল্পীর শিল্পপ্রকরণ রহস্যময়, তার স্বতশ্চলনই তার বিশেষত্ব। সঙ্কলনটি তাঁকে খানিকটা ধরার চেষ্টা করে। তাঁর নিজের ভাষ্যে তাঁর রঙিন ব্যক্তিত্ব ও যাপনের স্বরূপ উন্মোচনের মাধ্যমে তাঁর শিল্পভাবনা ও জীবনবোধ সাধারণ পাঠককে কৌতূহলী করে, তার নিরীক্ষণের বিষয় হয়ে ওঠে এই মুক্তচিন্তক— বাচনে অত্যন্ত ধারালো, আদ্যন্ত প্রথাভাঙা এই শিল্পী, জাগতিক ক্ষেত্রেও যিনি অপ্রত্যাশিত রকম হুঁশিয়ার। ইউরোপীয় শিল্পকলায় প্রশিক্ষিত হওয়ার জন্য মাত্র ষোলো বছর বয়সে প্যারিসের একোল দ্য বোজ়ার-এ ভর্তি হন।
স্টুডিয়ো, মিউজ়িয়ম ও গ্যালারিগুলিতে চলতে থাকে তাঁর শিক্ষা ও তদ্গত গবেষণা। অচিরেই তিনি অসাধারণ স্বীকৃতি পান, যা কিনা সবচেয়ে অল্পবয়সি ও তদুপরি এশীয় হিসাবে তাঁকে গ্র্যান্ড সালঁ-র প্রথম অ্যাসোসিয়েট-এর তকমা এনে দেয়। এই পাওয়া তাঁকে তৃপ্ত করেনি। তাঁর অনুসন্ধানী স্বকীয়তা, শিকড়ের প্রতি টান তাঁকে ফিরিয়ে এনেছে ভারতে: নিয়ে গেছে অজন্তা-ইলোরায়, দাক্ষিণাত্যে। ভ্রমণ কী ভাবে তাঁর শক্তিশালী শিল্পভাষা তৈরি করেছে, তার আভাস ধরা পড়ে সঙ্কলনে সাজানো তাঁর আঁকা ছবিগুলিতে। অমৃতার লেখা ডায়েরি ও চিঠির প্রাথমিক পাঠে তাঁর পরিপার্শ্ব ও সময়ের এক চাক্ষুষ আখ্যান গড়ে ওঠে, তাঁর একটি আত্মপ্রতিকৃতি নির্মাণ করে ব্যক্তি অমৃতা ও তাঁর মনোজগৎকে অনেকখানি ‘চেনা’ করে তোলে।
বহু চিত্রসমৃদ্ধ বইটিতে মুদ্রণ, প্রচ্ছদ ও বাঁধাইয়ের ক্ষেত্রে যতটা যত্ন দেখা যায়, প্রুফ সংশোধনে ততটা নয়। ঈশানী রায়চৌধুরীর তরজমায় বিদেশি ভাষার প্রভাব স্পষ্ট। পাঠককে প্রায়ই অপরিচিত পথের মোকাবিলা করতে গিয়ে হোঁচট খেতে হয়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy