সোনালি দিনগুলি। আবুল মাল আবদুল মুহিত। চন্দ্রাবতী অ্যাকাডেমি, ৬০০.০০
বাংলাদেশের অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতকে সবাই জানেন অর্থনীতিবিদ, সাবেক প্রশাসক ও রাজনীতিবিদ হিসেবে। বিদেশেও খ্যাতনামা একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে তিনি দীর্ঘদিন অর্থনীতি পড়িয়েছেন। সেই সুবাদে তাঁর অগণিত ছাত্রছাত্রী রয়েছে। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের পটভূমি নিয়ে তাঁর গ্রন্থ আগ্রহ উদ্দীপক ও তথ্যসমৃদ্ধ। ইংরেজি ও বাংলা ভাষায় তাঁর তিরিশটির অধিক গ্রন্থে অর্থনীতি, সমাজ ও উন্নয়ন ভাবনার প্রকাশ আছে। এই সব গ্রন্থে বাংলাদেশের বিকাশ পর্ব বেশ প্রণিধানযোগ্য হয়ে উঠেছে। বাহান্নর ভাষা-আন্দোলনে তাঁর সংযোগ ও মেধাবী ছাত্র হিসেবে প্রতিষ্ঠা ছাত্রজীবনেই তাঁকে বিশিষ্ট করে তুলেছিল।
আত্মজীবনীর প্রথম খণ্ড সোনালি দিনগুলি-তে তাঁর শৈশব কৈশোর পর্ব ও পারিবারিক বৃত্তের নানা অজানা কাহিনি উন্মোচিত হয়েছে। ব্যক্তিগত-পারিবারিক নানা আলেখ্য তুলে ধরেছেন তিনি এই গ্রন্থে। বস্তুত তাঁর বৃহৎ অভিজাত পরিবারের কথা, তাঁর ঠাকুরদার পরিবার, বাবার কথা ও তাঁর ভাইবোনদের প্রসঙ্গ তিনি বিস্তারিত তুলে ধরেছেন। শিক্ষার আলোকপ্রাপ্ত তাঁর সকল ভাইবোনই বাংলাদেশের সমাজ জীবনে প্রতিষ্ঠিত। আমরা এই বিবরণে একটি কালখণ্ড পাই। এতে পরিবারের সঙ্গে উঠে এসেছে সমাজ ও রাষ্ট্রেরও নানা অনুষঙ্গ। সঙ্গে পাই মুসলিম মধ্যবিত্ত পরিবারের উন্মেষ ও বিকাশের বিবর্তনের কথাও। এই গ্রন্থে বিগত শতাব্দীর তিরিশ ও চল্লিশের দশকে সিলেটের রাজনৈতিক পরিবেশ ও তৎকালের মুসলিম মধ্যবিত্তের আশা, আকাঙ্ক্ষা সহ কোন পরিপ্রেক্ষিতে মুসলিম সমাজ স্বাতন্ত্র্যে বিকশিত হতে চাইছিল তারও বিবরণ রয়েছে। তাঁর গ্রন্থে পরিবর্তমান সমাজ-রাজনীতির মূল্যবান সাক্ষ্য আছে। পঞ্চাশের দশকে তৎকালীন পূর্ব বাংলার রাজনৈতিক পরিস্থিতি ও ঝঞ্ঝাক্ষুব্ধ দিনগুলোয় বিচরণও তাঁর এই স্মৃতিকথায় উঠে এসেছে।
যে ভাবে তিনি ছাত্রজীবনের খুঁটিনাটি তথ্য দিয়েছেন তা একটু বিস্ময়কর। এই বিবরণে আমরা পাই শিক্ষার পরিবেশ ও দেশবিভাগের পর বাঙালি মুসলিম তরুণের বিকাশ ও অধ্যয়নেরও প্রসঙ্গ। এটা সম্ভব হয়েছে তাঁর ডায়েরি লেখার অভ্যাসের ফলে।
মেধাবী ছাত্র মুহিত ছাত্রজীবনে সব সময় ভাল ফল করেছেন। তৎকালীন সময়ে আই এ পরীক্ষায় সারা প্রদেশে প্রথম স্থান অধিকার করেন। অর্থনীতিবিদ মুহিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেছিলেন ইংরেজি সাহিত্যে, পরে বিদেশে গিয়ে তিনি অর্থনীতিতে ডিগ্রি লাভ করেন। ছাত্রজীবনে তিনি ছিলেন কৃতী খেলোয়াড়। ভলিবল, লন টেনিস ও হকিতে পেয়েছেন পুরস্কার। তিনি সলিমুল্লাহ হল ছাত্রসংসদের সহ সভাপতি ছিলেন। পরবর্তী জীবনে তিনি পাকিস্তান সিভিল সার্ভিসের চৌকস সদস্য হিসেবে বহু গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করেন। পাকিস্তানের দূতাবাসে দায়িত্ব পালনকালে ১৯৭১ সালে তিনি বাংলাদেশের পক্ষে অবস্থান নেন। সে সময় যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে সক্রিয় অবদান রাখেন।
উইলিয়াম শেক্সপিয়র/ চারশতম মৃত্যুবর্ষ স্মরণগ্রন্থ। কথা প্রকাশ, ৪০০.০০
আশা করছি তাঁর জীবনের পরের খণ্ডগুলি তাঁর বর্ণাঢ্য ও ঘটনাবহুল জীবন এবং তাঁর সময়কে তুলে ধরবে।
উইলিয়ম শেক্সপিয়রের চারশোতম মৃত্যুবর্ষ উপলক্ষে একটি সংকলনের পরিকল্পনা করেন দুই সাহিত্যানুরাগী। প্রায় দু’বছর পরে সায়েবা হাবীব ও পিয়াস মজিদ সম্পাদিত তিনশো সতেরো পৃষ্ঠার গ্রন্থটি প্রকাশিত হয়েছে। দু’জনই বাংলা অ্যাকাডেমিতে কর্মরত। বাংলাদেশের নানা সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও শেক্সপিয়র যে কত ভাবে এখানকার সাহিত্যানুরাগী ও মননজীবীদের কাছে আজও প্রাসঙ্গিক, গ্রন্থটি পাঠ করে সে কথাই মনে হল। বিশেষত অ্যাকাডেমিক আবহের বাইরেও এই মহান নাট্যকার ও কবি বাংলাদেশে নিত্যস্মরণীয়। নানা দৃষ্টিকোণ থেকে নাট্যকারকে পর্যবেক্ষণ আমাদের অভিজ্ঞতার দিগন্তকে বিস্তৃত করে।
বিষ্ণু দে-র একটি প্রবন্ধে বাংলা ভাষায় শেক্সপিয়র যে কত ভাবে অনূদিত ও চর্চিত হয়েছিলেন সে কথা স্মরণ করিয়ে দিয়েছে। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ও আতাউর রহমানের নিবেদিত কবিতা গ্রন্থটির মর্যাদা বৃদ্ধি করেছে। মোট ২৩টি প্রবন্ধের লেখকরা অধিকাংশই ঢাকা, জাহাঙ্গিরনগর ও রাজশাহি বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি ও বাংলা বিভাগের শিক্ষক হলেও শুধু অ্যাকাডেমিক নয়, নানা দৃষ্টিকোণ থেকে প্রত্যক্ষণ করা হয়েছে।
গ্রন্থটির উল্লেখযোগ্য ও বিশ্লেষণধর্মী প্রবন্ধ সিরাজুল ইসলাম চৌধুরীর শেক্সপিয়রের মেয়েরা, শামসুর রাহমানের হ্যামলেট প্রসঙ্গে, মুনীর চৌধুরীর মাইকেল ও শেক্সপিয়র, আলী আনোয়ারের সাম্প্রতিক শেক্সপিয়রীয় সমালোচনা, সৈয়দ মনজুরুল ইসলামের বাংলাদেশে শেক্সপিয়র চর্চা সবিশেষ উল্লেখযোগ্য। বিগত ষাট বছর ধরে বাংলাদেশে শেক্সপিয়র-বিশ্লেষণ ও ভাবনার একটি ছবি এতে উজ্জ্বল হয়ে ওঠে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy