ইতিহাসের আলোকে সুন্দরবন ও পোর্ট ক্যানিং
লেখক: পূর্ণেন্দু ঘোষ
মূল্য: ৫০০.০০
প্রকাশক: লোকসখা প্রকাশন
আবাদ করে জমি তৈরি হয়— গড়ে ওঠে গঞ্জ, শহর। এ সব বৃত্তান্তের মধ্যে থাকে জনসমাজের দিনলিপির ইস্তেহারও। ইতিহাসের আলোকে সুন্দরবন ও পোর্ট ক্যানিং বইটি শুধু এই অঞ্চলের সার্বিক জন-ইতিহাসের চিত্র নয়, তা সমকালের বিবরণমালাও। আঠেরো অধ্যায়ে ব্যাপ্ত সুন্দরবনের ভৌগোলিক চৌহদ্দিতে ক্যানিংয়ের বৃহত্তর প্রেক্ষিত বর্ণনায় প্রায় ছশো পৃষ্ঠার এই বৃহদায়তনিক প্রকাশনা। জন-ইতিহাসের খোঁজে লেখকের ভ্রাম্যমাণ উদ্যোগ, পরিচিত পরিবেশে অনুপুঙ্খ বর্ণনায় প্রতিফলিত। কোন দিকে আলোকপাত করেননি তিনি— আঠেরো ভাটির গাঙের কড়চা, ভূপ্রকৃতি, রাজকাহিনি, ঘরবাড়ি, চিকিৎসা, শিক্ষা, পরিবহণ, বাজার, মৎস্য বন্দর, নৌশিল্প, পর্যটন, ধর্মমত, সাহিত্য, স্মরণীয় ব্যক্তিত্ব ইত্যাদি বহুবিচিত্র তথ্য নিবন্ধিকরণে সুন্দরবনের মুখবন্ধ রচিত হয়েছে। লেখক ইতিহাসের নথি ঘেঁটেছেন আবার দশকর্মা ভাণ্ডার, করাত কল, শাঁখার দোকান, প্রতিমাশিল্পীর মতো সাম্প্রতিক তথ্যহদিশও দিয়েছেন একই রকম অনুসন্ধানী কলমে। কবি জীবনানন্দের অপ্রকাশিত পাণ্ডুলিপি হারিয়ে গিয়ে ক্যানিং শহরের এক মুদিখানায় চলে আসে। নষ্ট হওয়ার আগে তা অবশ্য উদ্ধার হয়। আঞ্চলিক পত্রিকায় ছাপা একটি অপ্রকাশিত কবিতা থেকে উদ্ধৃতিও আছে এখানে। সংগৃহীত বিপুল তথ্য সম্পাদনাপর্বে কিছু ঘাটতি থেকে গেলেও, আঞ্চলিক ইতিহাস চর্চায় এটি নিঃসন্দেহে পরিশ্রমী কাজ।
নীরজ নাটক
লেখক: নীরজ বিশ্বাস
মূল্য: ২৫০.০০
প্রকাশক: কমলিনী
কলকাতার বাইরেও সমকালীন নাট্যচর্চার স্ফুরণ ও উত্তরণ নানা মাত্রায় প্রাণবন্ত। সময়ের পথে সেই সংগঠিত নাট্য আন্দোলন কখনও স্তিমিতও হয়ে পড়ে। উত্তরবঙ্গের বৃহত্তর চৌহদ্দিতে কোচবিহারের নীরজ বিশ্বাস নাট্যকার, অভিনেতা, নির্দেশক হিসাবে গত শতকের পঞ্চাশের দশকের মাঝামাঝি থেকে দীর্ঘদিন সজীব রেখেছিলেন সেই ধারা। পেয়েছিলেন ‘দিশারী’ পুরস্কারও। সেই সব কর্মোদ্যোগের অনুপুঙ্খ তথ্যদলিলের পুরো হদিশ না পাওয়া গেলেও, একাঙ্ক নাটকের সমৃদ্ধ রূপ পাওয়া গেল এই সংকলনে। ‘মিছিল’, ‘দেবতার জন্ম’, ‘কাকের গল্প’, ‘রক্তরাগ’, ‘আলোর যন্ত্রণা’— তাঁর রচিত এমন এগারোটি নাটক অন্তর্ভুক্ত হয়েছে এই বইয়ে। কোচবিহার স্টেট ট্রান্সপোর্ট রিক্রিয়েশন ক্লাব এই নাট্যচর্চায় অন্যতম অণুঘটকের কাজ করেছে। ভ্রাম্যমাণ ট্রাকে করে উত্তরবঙ্গের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে ‘মিছিল’ নাটকের কয়েকশো অভিনয় হয়েছিল। সংকলনের নাটকগুলি নাট্যলক্ষণের নিরিখে আজও প্রাসঙ্গিক। উত্তরবঙ্গের নাট্যভাবনা নিয়ে নাট্যকারের লেখায় টানাপড়েনের কথাও উঠে এসেছে। প্রয়াত নাট্যব্যক্তিত্বের আত্মজা মণিদীপা নন্দী বিশ্বাসের উদ্যোগী প্রয়াসেই নাটকগুলি সংকলিত হল। তবে রচনাকাল ও অভিনয়ের প্রাসঙ্গিক তথ্যপঞ্জি এই বইয়ে জরুরি ছিল।
স্বাদ বদলের গল্প
লেখক: মীরাতুন নাহার
মূল্য: ১২০.০০
প্রকাশক: কাগজের ঠোঙা
অখণ্ড বাঙালির গল্প বলেছেন মীরাতুন নাহার। গল্পের চলন এমন, লেখক যেন আমাদের শোনাতেই চাইছেন গল্পগুলো। যেন লেখক নন, তিনি কথক। প্রায় সব গল্পই জীবন থেকে আহরণ করা, বানানো গল্প লিখতে পারেন না মীরাতুন নাহার। ছেলেবেলা (নাকি মেয়েবেলা!), কলেজ জীবন, ভালবাসা, সম্পর্ক সবই যেন তাঁর যাপিত জীবনের কাহিনি। কিংবা খুব কাছ থেকে, ভিতর থেকে চেনা মানুষজনের গল্প শুনিয়েছেন তিনি। তাঁর বেশিরভাগ গল্পেরই চরিত্র মুসলমান বাঙালির স্বচ্ছল শিক্ষিত অতিক্ষুদ্র সমাজের নারী পুরুষ। দৈনন্দিনতার কিছু কাজকর্ম, যাপন আর কথায় বার্তায় হিন্দু সমাজের থেকে সামান্য ফারাকগুলো বাঙালির এক ভিন্ন বিস্তারের সন্ধান দেয়। এই সব মিলেই বাঙালির অখণ্ডতা— এ ভাবেই সম্পূর্ণতা তার। ঘটমান সময় নিয়ে মন্তব্য বা নিবন্ধ লেখেন মাঝে মাঝে, কিন্তু গল্পের তিনি অনিয়মিত লেখক। এটি তাঁর গল্পের প্রথম বই। গল্পগুলো বেশিরভাগই ব্যক্তির সম্পর্ক আর মনস্তাত্ত্বিক টানাপড়েন নিয়ে। মুসলমান সমাজের ভিতরকার সমস্যাও উঠে এসেছে কিছু গল্পে। তবে তা কখনও উচ্চকিত নয় বরং তিনি বয়ান করেছেন যথেষ্ট শিল্পিত ভাবে। কাঁটাতারের বেড়া, দুনিয়ার দোজখ, মিথ্যে মামলা, রাতের বাঁশি, রূপান্তরের কথা গল্পগুলো মনে থাকবে। আর মেহেরজানের গল্প (আজান ও মেহেরজান), যাঁর জানলার সামনে পাঁচিলের ওপর বসানো আছে মাইক। সে মাইকের চিৎকৃত আজান দিনে পাঁচবার করে শুনতে শুনতে তাঁর পাগল হওয়ার দশা। ক্লাব, নেতা, মোল্লা, মোড়ল এমনকি আল্লার কাছে নালিশ জানিয়েও সুরাহা পান না মেহেরজান। শেষপর্যন্ত বধিরতা তাঁকে মুক্তি দেয় শব্দের তাণ্ডব থেকে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy