ভাস্কর চট্টোপাধ্যায়ের অনুবাদ ও সম্পাদনায় যে ফোরটিন স্টোরিজ দ্যাট ইন্সপায়ারড সত্যজিৎ রায় (হার্পার পেরেনিয়াল, ৩৫০.০০) বেরিয়েছে, তাতে শর্মিলা ঠাকুর বইটির প্রচ্ছদে এ কথাটিই খেয়াল করিয়ে দিয়েছেন: ‘আ ওয়ান্ডারফুল ওয়ে টু ইনট্রোডিউস রিডারস নট ওনলি টু সাম সুপার্ব স্টোরিজ, বাট অলসো টু দ্য জিনিয়াস অব সত্যজিৎ রায়, হু, ফ্রম দিজ ভেরি স্টোরিজ, ক্রিয়েটেড গ্রেট সিনেমা।’ পরিশিষ্টে শর্মিলা লিখেছেনও ‘দেবী’তে তাঁর অভিনয়ের অভিজ্ঞতা। অত কম বয়সে ওই রকম একটা চরিত্রে অভিনয় দীর্ঘক্ষণ শুটিংয়ে শটের ফাঁকে কেউই প্রায় কথা বলত না তাঁর সঙ্গে, সত্যজিতের নির্দেশে। ফলে ওই বিচ্ছিন্নতা আর ক্লান্তি ছবিতে দয়া-র চরিত্রটাকে, তার মুখাবয়বকে বাঙ্ময় করে তুলেছিল।
দেবী-র মতো অন্যান্য ছবির সূত্রেই ভাস্কর অনুবাদ করেছেন প্রভাতকুমার মুখোপাধ্যায়, প্রেমেন্দ্র মিত্র, রাজশেখর বসু, উপেন্দ্রকিশোর, নরেন্দ্রনাথ মিত্র, রবীন্দ্রনাথ, প্রেমচন্দ, তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায় এবং স্বয়ং সত্যজিতের গল্প। প্রতিটি অনূদিত গল্পের শুরুতেই রয়েছে সে-ছবির জন্যে আঁকা সত্যজিতের পোস্টার, আর প্রচ্ছদে (সঙ্গে বাঁদিকে) সত্যজিতের একটি দুর্লভ আলোকচিত্র।
প্রচ্ছদে-পোস্টারে এ ভাবে সেজে উঠতে পেরেছে গোটা বইটি, সত্যজিৎ রায় সোসাইটি-র সূত্রে এগুলি পাওয়ার জন্যেই। পরিশিষ্টে সোসাইটির সিইও অরূপকুমার দে’র সাক্ষাৎকারের সঙ্গে তাঁরই অনূদিত সত্যজিতের দু’টি রচনা, ছবি বিশ্বাসকে নিয়ে। রয়েছে ধৃতিমান চট্টোপাধ্যায়ের সাক্ষাৎকারও।
‘‘একটা গানে আমি একেবারে পুরো কর্ণাটকি মেজাজ এনেছি, প্যারোডিস্টিক চালে বলতে পারেন, যেটা ‘ওরে বাঘা রে, গুপী রে’ যেখানে লাস্টে ভারতনাট্যমের নেক-মুভমেন্ট করতে করতে ওরা পালায় আর কী।” করুণাশংকর রায়ের সঙ্গে এক দীর্ঘ সাক্ষাৎকারে ‘গুগাবাবা’র খুঁটিনাটি নিয়ে বলেছিলেন সত্যজিৎ। এটি বেরিয়েছিল ’৭০-এ সত্যজিতের জন্মদিনে তাঁকে নিয়ে প্রকাশিত কলকাতা পত্রিকার বিশেষ সংখ্যায়। পুনর্মুদ্রণে নতুন করে এটি পড়বার সুযোগ পাবেন পাঠক গুগাবাবা/ বিশেষ সংগ্রহ-এ (সম্পা: সুমিতা সামন্ত। সপ্তর্ষি, ২৫০.০০), এতে সংকলিত হয়েছে উপেন্দ্রকিশোরের গল্পটি ও সত্যজিতের চিত্রনাট্য। উপেন্দ্রকিশোরের সার্ধশতবর্ষে শ্রদ্ধার্ঘ্য এই বিশেষ সংগ্রহটি, জানিয়েছেন সম্পাদক। প্রশংসনীয় প্রয়াস। কাহিনি ও চিত্রনাট্য ছাড়াও সংগ্রহটিতে রয়েছে পূর্ণিমা পিকচার্স প্রযোজিত এ-ছবির পোস্টার বুকলেট লবিকার্ড ইত্যাদি।
আর পুনর্মুদ্রিত হয়েছে ‘পরিচালকের কথা’, ১৩৯৫-এর শারদীয় এক্ষণ-এ ‘গুগাবাবা’র যে চিত্রনাট্য ছাপা হয়েছিল তার সঙ্গে এটি লিখেছিলেন সত্যজিৎ (৩০.৮.৮৮)। এবং দেবাশিস মুখোপাধ্যায়ের ‘প্রসঙ্গ: গুপী গাইন বাঘা বাইন’ ছবিটি নিয়ে নানা তথ্য-নথি। চিত্রনাট্যটি সম্পর্কে এক্ষণ-এ জানানো হয়েছিল ‘সেন্সর স্ক্রিপ্ট ও ছবিটি দেখে মুদ্রণযোগ্য পাণ্ডুলিপি তৈরি করেছেন দেবাশিস মুখোপাধ্যায়। চিত্রনাট্যকার প্রয়োজনীয় সংশোধন করেছেন।’ কিন্তু সত্যজিৎ-সংশোধিত সে চিত্রনাট্যটি সংকলিত হয়নি এই সংগ্রহে। তা হলে এটি কি শুটিং-স্ক্রিপ্ট, নাকি সত্যজিতের অন্য কোনও শুটিং-পাণ্ডুলিপি থেকে ছাপা, কিছুই জানাননি সম্পাদক, শুধু লেখা আছে: ‘চিত্রনাট্যস্বত্ব: পূর্ণিমা পিকচার্স’! প্রচ্ছদ (সঙ্গে ডান দিকে) তৈরি হয়েছে সত্যজিতের করা গুগাবাবা-র একটি পোস্টার ভাঙচুর করে। প্রয়াত পরিচালকের শিল্পকর্মকে এ ভাবে বদলিয়ে প্রকাশনার কাজে লাগানো যায় কি?
রুদ্রপ্রসাদ চক্রবর্তীর সোনার কেল্লার সন্ধানে (দীপ, ৮০.০০) বইটির নামকরণ করে এটিকে একাধারে শুটিং-কেন্দ্রিক ভ্রমণকাহিনি ও সরস ঘটনার বিবরণ আখ্যা দিয়েছিলেন সত্যজিৎ। বর্তমান পরিবর্ধিত সংস্করণে সত্যজিৎ, সৌমিত্র ও কামু মুখোপাধ্যায়কে নিয়ে অন্তরঙ্গ স্মৃতিও যোগ করেছেন লেখক। সঙ্গে ‘সেই যে সোনার দিনগুলি’ লিখেছেন তাঁর পুত্র কুশল, সোনার কেল্লা-র মুকুল। ছবির কর্মকাণ্ড ঘিরে দুর্লভ সব ছবি, সত্যজিতের চিঠিপত্র এ-বইয়ের সম্পদ। মুদ্রণেও পরিপাটি বইটি যেন স্বাদু গদ্যে ‘সোনার কেল্লা’ তৈরির নেপথ্যকাহিনি বলে চলে।
এখন সত্যজিৎ-এর ‘ফেলুদা সংখ্যা’য় (২৫০.০০) ফেলুদা-কাহিনি, তার বাহিনী ও ভিলেনদের বৈশিষ্ট্যের বিশ্লেষণ; ফেলুদাকে নিয়ে যাবতীয় তথ্যের খুঁটিনাটি, ক্যুইজ, শব্দছক, ধাঁধা, কমিকস সম্পাদক সোমনাথ রায়ের মতে এটি ‘ফেলুদা এনসাইক্লোপিডিয়া’। প্রতিটি ফেলুদা-কাহিনির প্রথম প্রকাশের সূত্র, সত্যজিতের অলংকরণ-সহ। সোনার কেল্লা-র সত্যজিৎ-কৃত চিত্রনাট্য, গোরস্থানে সাবধান-এর সন্দীপ রায়-কৃত চিত্রনাট্য। সঙ্গে ফেলুদা নিয়ে সন্দীপের চমৎকার সাক্ষাৎকার। শুধু প্রথম তিনটি লেখায় ছাপাখানায় অক্ষরলিপির বিভ্রাট যেন গঙ্গাজলে এক ফোঁটা চোনা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy