ক্যালকাটা পেইন্টার্স দলের ৫২-তম বার্ষিক প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হল সম্প্রতি অ্যাকাডেমিতে। ১৯৬৪-তে তৈরি হয়েছিল এই দল। এর প্রতিষ্ঠাতা শিল্পী ও ষাটের দশকেই যোগ দিয়েছিলেন যে সব শিল্পী— তাঁদের কাজের মধ্য দিয়ে আধুনিকতাবাদী শিল্পধারার যে ভিত্তি স্থাপিত হয়েছিল তাই বিংশ শতকের শেষ পর্যায় পর্যন্ত বিবর্তিত হয়েছে নানাভাবে। সেই সব প্রবীণ শিল্পীদের অনেকেই প্রয়াত হয়েছেন। দল ছেড়েছেন অনেকে। তরুণতর প্রজন্মের শিল্পীরা যোগ দিয়েছেন। দলের কার্যাবলিতে মাঝে মাঝে শ্লথতা এসেছে। কিন্তু প্রবাহ কখনওই স্তব্ধ হয়নি। তারই পরিচয় রয়েছে এ বারের প্রদর্শনীতেও। প্রবীণ শিল্পীদের অনেকেই পুরনো কাজ দিয়েছেন, যা তাঁদের প্রতিভার পূর্ণ স্বাক্ষর বহন করে না। প্রদর্শনীকে তা ভারাক্রান্ত করেছে। তবু অনেকের কাজেই রয়েছে নান্দনিক দীপ্তি, যা প্রদর্শনীটিকে অভিনিবেশযোগ্য করে।
১৮-জন শিল্পীর কাজ নিয়ে এ বারের প্রদর্শনী। এর মধ্যে একজন, বরুণ রায় (১৯৩৭-২০১৫) সদ্য প্রয়াত হয়েছেন। তাঁর স্মৃতিতে উৎসর্গীকৃত হয়েছে এই প্রদর্শনী।
দুজন ভাস্কর অংশগ্রহণ করেছেন এই প্রদর্শনীতে। প্রবীণ শিল্পী বিপিন গোস্বামীর ব্রোঞ্জগুলিতে আদিম লৌকিকের সঙ্গে অভিব্যক্তিবাদী অনুষঙ্গের সুষম সমন্বয়। তরুণতর ভাস্কর প্রদীপ মণ্ডলের ধাতব রচনাগুলি নির্মাণধর্মী বা কনস্ট্রাক্টিভিস্ট। বিমূর্তের মধ্য দিয়েই ধ্রুপদী বোধের সঙ্গে সাম্প্রতিকের সংঘাতের সমন্বয় ঘটান তিনি।
এই প্রদর্শনীর প্রবীণ শিল্পীদের মধ্যে অমলনাথ চাকলাদারের ছবি নব্য-ভারতীয় ঘরানার প্রসারণ হিসেবে এখনও সমান উজ্জ্বল ও প্রাণবন্ত। ড্রাই প্যাস্টেলে অসামান্য কাজ করেছেন তিনি।
‘দ্য ফ্লাইট’ ছবিটিতে মেঘের উপর দিয়ে উড়ে চলেছে বলাকা শ্রেণী। স্বদেশচেতনাধৃত ধ্রুপদী অনুভবের অসামান্য দৃষ্টান্ত তাঁর অন্য দুটি ছবিও।
অনিমেষ নন্দী তাঁর ‘জার্নি’ চিত্রমালা নিয়ে কাজ করে যাচ্ছেন অনেক দিন থেকে। তেলরঙে আঁকা সুররিয়ালিস্ট ধর্মী এবারের রচনাদুটিতেও মহাকাশের উদাত্ততার সঙ্গে পার্থিবতাকে মেলানোর চেষ্টা করেছেন।
প্রবীন শিল্পীদের মধ্যে রবীন মণ্ডল, যোগেন চৌধুরী, ঈশা মহম্মদ, নিখিলেশ দাস, শ্যামশ্রী বসু, অনিতা রায়চৌধুরী তাঁদের নিজস্ব রূপরীতিতে কাজ করেছেন। তাঁদের প্রাক্তন রূপচেতনাকে নতুন কোনও সম্ভাবনার দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারেননি তাঁরা। অনিতা রায়চৌধুরীর কাগজের উপর মিশ্রমাধ্যমের রচনা দুটিতে গ্রাম ও শহরের নিসর্গকে যেভাবে বিমূর্তায়িত করেছেন তাতে বিদগ্ধ রূপভাবনার পরিচয় থাকে।
১৯৭০-এর দশকে প্রতিষ্ঠাপ্রাপ্ত শিল্পীদের মধ্যে এই প্রদর্শনীতে রয়েছেন দুজন— দেবব্রত চক্রবর্তী ও দ্বিজেন গুপ্ত। দেবব্রত-র অ্যাক্রিলিকের রচনা ‘মহীনের ঘোড়াগুলি’ বাস্তব ও কল্পরূপের সমন্বয়ের মধ্য দিয়ে অতীত স্মৃতিকে উদঘাটিত করে।
শিল্পী: অমলনাথ চাকলাদার
দ্বিজেনের অ্যাক্রিলিকের রচনায় মানবীচেতনার উৎসারণ বিশেষ গুরুত্ব পেয়েছে। বাস্তব ও কল্পরূপের সমন্বয় যার তাঁর ছবিরও বৈশিষ্ট। জলে সন্তরণরত মৎসকন্যার ছবিটি বিশেষভাবে দৃষ্টি আকর্ষণ করে।
তেলরঙের ক্যানভাসে ওয়াসিম কপূর এঁকেছেন যিশুখ্রিস্টের ছবি। স্বাভাবিকতাবাদী প্রাকরণিক দক্ষতা ও বিপন্ন বিশ্বে গভীর মানবিক চেতনার উৎসারণে ছবিটি অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ।
সুশান্ত চক্রবর্তীর ‘ক্লাউন’ চিত্রমালায় কল্পরূপাত্মক অনুষঙ্গ আকর্ষণ করে।
সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়ের কন্টি-র রচনা ‘অ্যাবানডনড’ চিত্রমালায় প্রত্ন-স্থাপত্যের জ্যামিতি নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা।
তরুণতর প্রজন্মের শিল্পী সুব্রত ঘোষ তাঁর ‘সিভিলাইজেশন’ শীর্ষক মিশ্রমাধ্যমের রচনায় আজকের আবিশ্ব অশান্ত পরিস্থিতির বিশ্লেষণ করেছেন অবয়ব ও সংকেতের ভারসাম্যে স্থিত ‘কনসেপচুয়াল’ রচনায়। আঙ্গিক ও ভাবনায় নতুন সন্ধান তাঁর ছবিকে তাৎপর্যপূর্ণ করেছে।
এই প্রদর্শনীর আর একজন সম্ভাবনাময় শিল্পী শুভব্রত নন্দী। কাগজের উপর কালিতে তিনি এঁকেছেন ‘মেটামরফোসিস’ শিরোনামে কয়েকটি ছবি। তাঁর বিষয় প্রধানত নাগরিক স্থাপত্য। উন্মত্ত হয়ে ভেঙে পড়ছে যেন সমস্ত নির্মাণ। কখনও তা সরীসৃপ বা বীভৎস জন্তুর আকার ধারণ করছে। নাগরিক সভ্যতাকে কষাঘাত করেছেন তিনি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy