দিল্লিতে ফেসবুক কর্তা। ছবি: পিটিআই।
প্রত্যন্ত অঞ্চলেও প্রযুক্তির প্রসার। আর সেই প্রসারের ঢেউয়ে ভেসে দেশের প্রগতি। নরেন্দ্র মোদীর এই ‘ডিজিটাল ইন্ডিয়া’র স্বপ্নে সামিল হতে চান মার্ক জুকেরবার্গও।
দু’দিনের ভারত সফরে বৃহস্পতিবারই দিল্লিতে পা রেখেছেন ফেসবুকের ধনকুবের প্রতিষ্ঠাতা। এ দিন সেখানেই জুকেরবার্গ বলেন, ইন্টারনেট শুধু ধনী আর প্রতিপত্তিশালীদের মুঠোয় থাকার জন্য নয়। বরং তা পৌঁছনো উচিত প্রতিটি দেশের প্রত্যন্ত প্রান্তে। যাতে আক্ষরিক অর্থেই তা সকলের দরজায় পৌঁছয়। দেখতে হবে, পরিকাঠামোর খামতি, ভাষার ব্যবধান কিংবা নেটের খরচ বইতে পারার অক্ষমতা সেই পথে যেন বাধা না- হয়। আর সেই সূত্রেই তাঁর দাবি, ডিজিটাল ইন্ডিয়া প্রকল্পে সামিল হতেও তিনি এবং তাঁর সংস্থা তৈরি।
শুক্রবার মোদীর সঙ্গে মুখোমুখি বৈঠকে বসবেন জুকেরবার্গ। সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে গিয়েছেন আরও দুই মার্কিন তথ্যপ্রযুক্তি বহুজাতিকের শীর্ষ কর্তা। মাইক্রোসফটের সিইও সত্য নাদেল্লা এবং অ্যামাজনের কর্ণধার জেফ বেজোস। কিন্তু তা সত্ত্বেও প্রায় সকলের চোখে বাড়তি গুরুত্ব পাচ্ছে মোদী-জুকেরবার্গ বৈঠক।
কারণ, সকলের জন্য ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট খুলতে মোদী যেমন জন-ধন প্রকল্পে জোর দিচ্ছেন, তেমনই সকলের দরজায় ইন্টারনেট পৌঁছনোর কথাও প্রায়ই বলেন তিনি। তাঁর দাবি, অটলবিহারী বাজপেয়ীর জমানায় যেমন হাইওয়ে তৈরি হয়েছিল, তেমনই ‘আই-ওয়ে’ তৈরিতে জোর দেওয়া উচিত। যাতে দেশের প্রত্যন্ত প্রান্তেও পৌঁছয় নেট-সংযোগ। আর তার দৌলতে হাতের মুঠোয় ধরা মোবাইলেই আবহাওয়া থেকে বাজারের দর-দাম সব জেনে নিতে পারেন সাধারণ মানুষ।
ওই একই লক্ষ্যে ভারতে এসেছেন জুকেরবার্গও। নোকিয়া, স্যামসাং, কোয়ালকম, এরিকসন-সহ কয়েকটি সংস্থার সঙ্গে হাত মিলিয়ে ‘ইন্টারনেট ডট ওআরজি’ তৈরি করেছে তাঁর সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইট ফেসবুক। যার লক্ষ্যই হল সস্তা অথচ উন্নতমানের স্মার্টফোন তৈরি এবং নেট সংযোগ সর্বত্র পৌঁছে দেওয়া। জুকেরবার্গের নিজের কথায়, “মানুষ একে অন্যের সঙ্গে জুড়ে থাকতে পারলে, অনেক কিছু সহজেই হাসিল হয়। স্বাস্থ্য, প্রযুক্তি, শিক্ষা, কাজের সুযোগ বাড়তি তথ্য মেলে সব বিষয়ে।”
এ দিন ফেসবুক প্রতিষ্ঠাতা স্পষ্ট বলেছেন, ইন্টারনেট ডট ওআরজি-র লক্ষ্যই হল সকলের হাতে নেট পরিষেবা পৌঁছে দেওয়া। যাতে অন্তত প্রাথমিক পরিষেবাটুকু সকলে পান। ঠিক যেমন, ফোন কানেকশন না-থাকলেও মার্কিন মুলুকে জরুরি পরিস্থিতিতে ৯১১ নম্বরে ডায়াল করতে পারেন সকলে। জুকেরবার্গের মতে, অন্ন-বস্ত্র-বাসস্থানের মতো এই শতাব্দীতে প্রাথমিক অধিকারের তালিকায় আসা উচিত ইন্টারনেট পরিষেবাও। তাই গরিব-ঘরে কম খরচে এমনকী কিছু ক্ষেত্রে নিখরচায় নেট সংযোগ পৌঁছে দেওয়ার দায়িত্ব সরকারের নেওয়া উচিত বলে সওয়াল করেন তিনি।
অনেকের মতে, নেট নিয়ে মোদী আর জুকেরবার্গের এই প্রায় এক বিন্দুতে অবস্থানই এমন তুমুল আগ্রহ তৈরি করেছে কালকের বৈঠক ঘিরে। এক জন চা-বিক্রেতা থেকে আজ দেশের প্রধানমন্ত্রী। আর অন্য জন কলেজের গণ্ডি না-পেরিয়েই ফেসবুকের প্রতিষ্ঠাতা। পঁচিশ পেরনোর আগেই ধনকুবের। এমন দুই ব্যক্তিত্ব মুখোমুখি হলে নতুন ধারণার চকমকি জ্বলে কি না, সে দিকেই তাকিয়ে সকলে।
এই প্রবল আগ্রহের আর একটি কারণ অবশ্য মোদীর প্রযুক্তিপ্রেম। দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই মোদীর ওয়েবসাইট, টুইটার প্রোফাইল সর্বদা সচল। ফেসবুকেও তিনি ‘অ্যাক্টিভ’। এমনকী লোকসভা ভোটে তরুণ প্রজন্মের মন জয় করতে একে অন্যতম হাতিয়ারও করেন তিনি।
সোশ্যাল মিডিয়ায় এ হেন দড় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলতে জুকেরবার্গ যে-যথেষ্ট তৈরি হয়ে এসেছেন, তা অবশ্য স্পষ্ট তাঁর কথাতেই। তিনি বলেন, “উন্নয়নশীল দেশগুলিতে এখনও পুরুষদের তুলনায় ২৫% কম মহিলা নেট ব্যবহার করেন। বাসিন্দাদের একটা বড় অংশ কোনও দিন নেট ব্যবহারই করেননি!” জানিয়েছেন, ৬৯% ভারতীয় জানেনই না যে, অনলাইনে থাকার লাভ কী! ভারতের সফল মঙ্গল অভিযানের প্রসঙ্গ টেনে বলেছেন, “এ বার সরকারের পরবর্তী লক্ষ্য হোক, সব নাগরিকের কাছে নেট পরিষেবা পৌঁছে দেওয়া। যাতে তাঁরা তা ব্যবহারে উৎসাহ পান।” তিনি দাবি করেছেন, প্রসার বাড়াতে এখনই হোয়াটস অ্যাপ থেকে মুনাফার কথা ভাবছেন না তাঁরা।
ফেসবুকের স্রষ্টা আর তার অন্যতম পরিচিত ব্যবহারকারী একে অন্যকে ‘লাইক’ করবেন কি? উত্তর মিলবে শুক্রবারই।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy