প্রতীকী ছবি।
লকডাউন শুরুর পরে ঘণ্টায় ৯০ কোটি টাকার সম্পদ বেড়েছে রিলায়্যান্স ইন্ডাস্ট্রিজ়ের কর্ণধার মুকেশ অম্বানীর! আইআইএফএল ওয়েলথ হারুণ ইন্ডিয়া রিচ লিস্টের এই তথ্যের পাশে যেন আরও বিস্বাদ উপদেষ্টা সংস্থা সিএমআইই-র পরিসংখ্যান। যা বলছে, শুধু এপ্রিল-অগস্টে দেশে বাঁধা বেতনের চাকরি গিয়েছে ২.১ কোটি। অসংগঠিত ক্ষেত্রে অসংখ্য।
ফোর্বসের তালিকা অনুযায়ী, এখন আদানি গোষ্ঠীর কর্ণধার গৌতম আদানির নিট সম্পদ বেড়েছে ৭১,৫৪০ কোটি। ব্লুমবার্গের সূচকে স্পষ্ট, ব্যবসা ধাক্কা খাওয়ার এই বছরেও নিট সম্পদ ফুলেফেঁপে উঠেছে বহু ধনকুবেরের (বিশদে সঙ্গের সারণিতে)। অথচ এপ্রিল-জুনে দেশের জিডিপি সঙ্কুচিত ২৩.৯%! রিজার্ভ ব্যাঙ্কের পূর্বাভাস, এই অর্থবর্ষে তা কমবে ৯.৫%। ব্যবসা লাটে উঠেছে বহু ছোট-মাঝারি সংস্থার। কাজ খুইয়ে বাড়ি ফিরেছেন নিঃস্ব পরিযায়ী শ্রমিকেরা।
অর্থনীতিবিদদের মতে, এই আর্থিক অসাম্য নতুন নয়। বহু দিন ধরে ভারত-সহ সারা বিশ্বে তা ঊর্ধ্বমুখী। তবে অতিমারির সময়ে তা আরও তীব্র হয়েছে। কারণ, ধনকুবেরদের সম্পদ যখন রকেট গতিতে বাড়ছে, তখন আয়ে কোপ পড়ছে বহু মানুষের।
নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ জোসেফ স্টিগলিৎজ়ের কথায়, ‘‘মার্কিন মুলুকে নীচের ৯০% মানুষের প্রকৃত গড় আয় (মূল্যবৃদ্ধিকে টপকে নিট আয়) ৪০ বছরে প্রায় বাড়েনি। প্রকৃত মজুরি ৬৫ বছর কার্যত এক! সব থেকে ধনী ১ শতাংশের ঝুলিতে অকল্পনীয় অর্থ। ফলে অসাম্য অবিশ্বাস্য।’’ তাঁর মতে, করোনাকালে এই ব্যবধান শুধু চওড়া হয়নি, আয়ই কমেছে ‘নিচু তলার’ কর্মীদের।
ধরা যাক, ৫% মূল্যবৃদ্ধির হার থাকা দেশে কোনও এক বছর দু’জনের আয় ১০০ ও ২০০ থেকে বেড়ে যথাক্রমে হল ১১০ ও ২৪০ টাকা। অর্থাৎ, আয় বাড়ল ১০% ও ২০%। আর এক বছরে প্রথম জনের আয় কমে হল ৯০ টাকা, দ্বিতীয় জনের বেড়ে ২৪০ টাকা। আইএসআই-কলকাতার অর্থনীতির অধ্যাপক অভিরূপ সরকারের মতে, ‘‘দু’ক্ষেত্রেই অসাম্য বেড়েছে। প্রথমটি তবু ‘সহনীয়’। মূল্যবৃদ্ধিকে ছাপিয়ে আয় বেড়েছে প্রথম জনেরও। কিন্তু দ্বিতীয়টি বেশি দুশ্চিন্তার। কারণ, কমেছে আয়ের অঙ্কই। জীবনযাত্রায় যার প্রভাব মারাত্মক।’’ তাঁর আশঙ্কা, এত কাজ ও বেতন ছাঁটাইয়ে দ্বিতীয় ধরনের অসাম্যই বেশি মাথা তুলছে।
অর্থনীতিবিদদের একাংশের অভিযোগ, ধনকুবেরদের এই ‘পৌষ মাস’ অনেকটাই ছোট-মাঝারি শিল্পের ‘সর্বনাশ’ ও শেয়ারে মধ্যবিত্ত টাকা রাখতে বাধ্য হওয়ায়। রিজার্ভ ব্যাঙ্কের প্রাক্তন গভর্নর রঘুরাম রাজনের কথায়, ‘‘দেশের বড় ৩০-৫০টি সংস্থার ভবিষ্যৎ (মুনাফা) সম্পর্কে লগ্নিকারীদের (শেয়ারহোল্ডার) প্রত্যাশাই প্রতিফলিত হয় (সেনসেক্স, নিফ্টি) সূচকে। অর্থনীতির বাস্তব দশার সঙ্গে তার যোগ সীমিত। তার উপরে, অতিমারিতে বহু ছোট-মাঝারি সংস্থার ব্যবসা গোটানোর দশা হলে ফায়দা পাবে বড় সংস্থার শেয়ার দরই।’’
আইএমএফের গবেষণা বলছে, ২০০৮ সালের মন্দার পরে মূলত বহুজাতিক দৈত্য ও বড় সংস্থার হাত ধরে বিশ্ব অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়িয়েছে। বহু ছোট সংস্থা মাথা তুলতেই পারেনি। করোনাতেও সেই হাল। দিল্লি স্কুল অব ইকনমিক্সের অধ্যাপক দিব্যেন্দু মাইতির বক্তব্য, ‘‘বাজারের উপরে কব্জা যত বেশি গুটিকয় বড় সংস্থার কুক্ষিগত হবে, তত কমবে প্রতিযোগিতা। কমবে দামের লড়াই। পরিসংখ্যান দেখিয়েছে, ২০০৮ সালের পরে অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়ালেও, প্রতিযোগিতার পরিসর কমায় কর্মীদের উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি
বা পণ্যের ঠিক দাম আবিষ্কারের দক্ষতায় মরচে পড়েছে বাজারের।’’ প্রযুক্তি-নির্ভর বড় সংস্থা কম কর্মী নেয় বলে কমেছে কাজ। বেড়েছে অসাম্য। করোনা যা বহু গুণ বাড়াতে পারে।
অভিরূপ মনে করাচ্ছেন, ‘‘করোনাকালে কাজ খুইয়ে বা বেতন ছাঁটাইয়ে বিপাকে নিম্ন ও মধ্যবিত্তেরা। তবু সুদ তলানিতে ঠেকায় ব্যাঙ্কের বদলে (হয়তো ফান্ড মারফত) শেয়ার বাজারে টাকা রাখছেন অনেকে। কম ঝুঁকি নিতে বেছে নিচ্ছেন ‘বড়’ সংস্থার শেয়ার! ফলে সেগুলির শেয়ারের দর চড়ছে। পোয়াবারো ধনকুবেরদেরও।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy