Advertisement
১৯ ডিসেম্বর ২০২৪
BSNL

ঘুরে দাঁড়ানোর লড়াইয়ে প্রশ্নচিহ্ন কেন্দ্রের শর্তে

কর্মী ইউনিয়নের অভিযোগ, সত্যিই কি ঘুরে দাঁড়ানোর লড়াইয়ে বিএসএনএলকে সাহায্য করছে সরকার?

ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

দেবপ্রিয় সেনগুপ্ত
শেষ আপডেট: ১০ জুলাই ২০২০ ০৬:২৪
Share: Save:

আর্থিক সঙ্কটে বিপর্যস্ত রাষ্ট্রায়ত্ত টেলিকম সংস্থা বিএসএনএল এবং এমটিএনএলের বাজারে ছাড়তে চলা ঋণপত্রে সরকার গ্যারান্টি দিতে রাজি, এই খবরের খুশির রেশ খুব বেশিক্ষণ স্থায়ী হল না দুই সংস্থার কর্মীদের একাংশের মনে। কারণ, সংস্থার পুঁজি জোগাড়ের যে পথ এ ভাবে সহজ হয়েছে বলে প্রথমে মনে করা হয়েছিল, তাতে সংশয় মিশল সেই গ্যারান্টির একটি শর্ত জানার পরে। যেখানে বলা হয়েছে, সংস্থার মালিকানা সরকারের না-থাকলে ওই গ্যারান্টিও থাকবে না। কর্মী ইউনিয়নের অভিযোগ, এটি বিএসএনএল বেসরকারিকরণের ইঙ্গিত। তাদের প্রশ্ন, সত্যিই কি ঘুরে দাঁড়ানোর লড়াইয়ে বিএসএনএলকে সাহায্য করছে সরকার? না কি আসলে সামনে সেই গাজর ঝুলিয়ে রেখে, তলে তলে তৈরি করা হচ্ছে বেসরকারি হাতে সংস্থা বেচার জমি?

গত অক্টোবরে সংস্থা দু’টির পুনরুজ্জীবন প্রকল্পে সায় দেয় কেন্দ্র। যার আওতায় প্রায় ৯২ হাজার কর্মী-অফিসারকে স্বেচ্ছাবসর দেওয়া হলেও, ৪জি পরিষেবা চালু ও দুই সংস্থার সরকারি ঋণপত্র ছেড়ে বাজার থেকে মোট ১৫ হাজার কোটি টাকা তোলার পরিকল্পনা থমকে ছিল। চিনের সঙ্গে সীমান্ত সংঘর্ষের আবহে সম্প্রতি ৪জি পরিষেবার যন্ত্রের দরপত্র বাতিল হওয়ায়, সেটির ভবিষ্যৎ আপাতত বিশ বাঁও জলে। তবে ঋণপত্রে সরকারের গ্যারান্টি থাকার প্রস্তাবে বুধবার ছাড়পত্র দিয়েছে অর্থ মন্ত্রক।

বিএসএনএল এমপ্লয়িজ় ইউনিয়নের দাবি, সংস্থার মালিকানা সরকারের না-থাকলে ওই সরকারি গ্যারান্টিও থাকবে না, এমন শর্ত রাখা মানে বেসরকারিকরণের পথ খোলা রাখা। ইউনিয়নের ডেপুটি জেনারেল সেক্রেটারি স্বপন চক্রবর্তী বৃহস্পতিবার বলেন, ‘‘বিএসএনএল সরকারি সংস্থা। তা হলে পরে সরকারের মালিকানা না-থাকলে কী হবে, সেই সংক্রান্ত শর্তের যৌক্তিকতা কী?’’

৪জি পরিষেবার যন্ত্রের দরপত্র বাতিল হওয়াতেও প্রশ্ন তুলছেন স্বপনবাবুরা। তাঁর বক্তব্য, কোনওটিই বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। বেসরকারি সংস্থা বিদেশি যন্ত্র ব্যবহার করলেও, বিএসএনএলের ক্ষেত্রে দেশীয় সংস্থায় জোর দেওয়ার নামে এই দরপত্র বাতিল হল। এটা আসলে পরিষেবার উন্নতিকে পিছিয়ে দেওয়ার চেষ্টা। ফলে বাজার দখলের প্রতিযোগিতায় ধাক্কা খাবে সংস্থা। সংস্থা আরও দুর্বল হলে এবং সরকারি গ্যারান্টি মেটানোর দায় না-থাকলে সস্তায় ও সহজে তা বিক্রির সুযোগ থাকবে।

বিএসএনএলের সিএমডি পি কে পুরওয়ার অবশ্য এ দিন ওই অভিযোগকে আমল দেননি। বলেছেন, যে কোনও রাষ্ট্রায়ত্ত বা সরকারি সংস্থার ঋণপত্রেই সরকারের গ্যারান্টির ক্ষেত্রে ওই বয়ান থাকে।

অন্য দিকে, বিএসএনএল ও এমটিএনএলের উদ্বৃত্ত জমি বা সম্পত্তি বেচে বাড়তি আয়ের পরিকল্পনা রূপায়ণের জন্য চারটি উপদেষ্টা সংস্থাকে নিয়োগ করার কথা জানিয়েছেন পুরওয়ার। বলেছেন, করোনার জেরে প্রক্রিয়াটি বাস্তবায়িত হতে ৮-১০ মাস সময় লাগতে পারে।

বিএসএনএল নিয়ে


• নগদের অভাবে বিপর্যস্ত বিএসএনএল-এমটিএনএলের পুনরুজ্জীবন প্রকল্পে স্বেচ্ছাবসর, দ্রুত ৪জি পরিষেবা চালু ও বাজারে সরকারি ঋণপত্র ছেড়ে টাকা তোলার কথা বলেছিল মোদী সরকার।
• সংস্থা দু’টির ধার পুনর্গঠন ও নতুন লগ্নি টানার জন্য ঋণপত্রে সরকারের গ্যারান্টি চেয়েছিল কেন্দ্রীয় টেলিকম দফতর (ডট)।

সেই পথে


• ডটের প্রস্তাবে সায় দিয়েছে অর্থ মন্ত্রক।
• তবে ছাড়পত্রের অন্যতম শর্ত, সংস্থার মালিকানা সরকারের না-থাকলে ওই গ্যারান্টি থাকবে না।
• বাজারে ঋণপত্র ছেড়ে বিএসএনএলের ৮৫০০ কোটি ও এমটিএনএলের ৬৫০০ কোটি টাকা তোলার কথা।

কর্মী ইউনিয়নের প্রশ্ন

•ঋণপত্রে এই শর্তসাপেক্ষে গ্যারান্টি রেখে আসলে কি ভবিষ্যতে বিএসএনএলের বেসরকারিকরণের পথ খুলে রাখা হল?
•সংস্থার মালিক যখন সরকার, তখন এমন শর্ত বাঁধার যুক্তি কী?
•পরে মালিকানা বদলালে ঋণপত্রের আর্থিক দায় মেটানোর বোঝা যাতে সরকারের ঘাড়ে না-চাপে, সেটা নিশ্চিত করার জমিই কি তৈরি করে রাখা হল আগেভাগে?
•তা হলে বারবার সংস্থা পুনরুজ্জীবনের প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে কেন সরকার?

অন্য বিষয়গুলি:

BSNL MTNL
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy