প্রতীকী ছবি।
আর্থিক সঙ্কট প্রশ্নে দু’ভাগ দেশের টেলিকম শিল্প। এয়ারটেল ও ভোডাফোন আইডিয়ার দাবি, লোকসানে ডুবে কাহিল তারা। আর রিলায়্যান্স জিয়ো বলছে, পরিস্থিতি যথেষ্ট ভাল। কোনও সমস্যা নেই। তবে এই চাপান-উতোরের ধাক্কাটা শেষে গ্রাহকের উপরেই এসে পড়ল। আগামী মাস থেকে মোবাইল পরিষেবায় মাসুল বাড়ানোর কথা জানাল এয়ারটেল ও ভোডাফোন আইডিয়া। এ জন্য যুক্তি হিসেবে তুলে ধরল আর্থিক সঙ্কটের সঙ্গে লড়াইয়ের কথাই। ফের কেন্দ্রের কাছে দ্রুত আর্থিক সাহায্যের আর্জিও জানিয়েছে তারা।
সোমবার ভোডাফোন ও এয়ারটেল জানিয়েছে, গ্রাহকদের সুষ্ঠু পরিষেবা দিতে ১ ডিসেম্বর থেকে তারা উপযুক্ত পরিমাণে মাসুল বাড়াবে। এর বিশদ ব্যাখ্যা না দিলেও তাদের বক্তব্য, এখনকার মাসুল ব্যবসার পক্ষে লাভজনক নয়। কারণ, একে এই শিল্পে মূলধনী লগ্নির প্রয়োজন বেশি, উপরন্তু দ্রুত পরিবর্তনশীল প্রযুক্তির জন্য নিয়মিত পুঁজি ঢালাও জরুরি। অথচ আর্থিক সঙ্কটে তাদের ব্যবসায়িক সম্ভাবনা কমছে। তাই এই সিদ্ধান্ত।
সংশ্লিষ্ট মহলের মতে, ইতিমধ্যেই সস্তার পরিষেবায় গ্রাহকদের একাংশ অভ্যস্ত হয়ে গিয়েছে। তবুও দেওয়ালে পিঠ ঠেকে যাওয়ায় কিছুটা ঝুঁকি নিয়েই মাসুল বাড়ানোর মতো ‘অপ্রিয়’ পথে হাঁটছে ওই দুই সংস্থা। কার্যত টিকে থাকার জন্য।
সঙ্কট যুঝতে
• ডিসেম্বর থেকেই মোবাইলে বেশি মাসুল গুনতে হবে ভোডাফোন আইডিয়া ও এয়ারটেলের গ্রাহকদের।
কারণ কী
• বছর খানেক আগে স্পেকট্রাম কেনা বাবদ বিপুল ধার চেপেছিল সংস্থাগুলির পিঠে।
• রিলায়্যান্স জিয়ো বাজারে আসতেই ফোনের মাসুল অনেক কমে যায়।
• সম্প্রতি লাইসেন্স ও স্পেকট্রাম ফি বাবদ সুপ্রিম কোর্ট বিপুল বকেয়া মেটানোর নির্দেশ দিয়েছে। সেই খাতে সংস্থান করতে হয়েছে অনেক টাকা।
• জিয়ো থেকে অন্য সংস্থার ফোনে কথা বলার পরিষেবায় মিনিটে ৬ পয়সা মাসুলও চাপানো হয়। জিয়োর অবশ্য যুক্তি, তা কল সংযোগ বাবদ ধার্য ইন্টারকানেক্ট ইউসেজ চার্জ (আইইউসি)।
• খরচ এ ভাবে বাড়ায় বিপুল লোকসানের মুখে অধিকাংশ সংস্থা। দ্বিতীয় ত্রৈমাসিকে কয়েকটি সংস্থার সম্মিলিত ক্ষতি ছাড়িয়েছে এক লক্ষ কোটি টাকা। শুধু ভোডাফোন আইডিয়া ও এয়ারটেলেরই মোট ৭৪ হাজার কোটি।
• কিছু সংস্থার দাবি, এখন মাসুল হার পরিষেবা খরচের থেকে অনেক কম।
বাড়ছে উদ্বেগ
• সস্তায় বা প্রায় নিখরচায় পরিষেবার দিন কি শেষ হতে চলেছে?
• ব্যাঙ্কের কাছে সংস্থাগুলির ঋণ বিপুল। ফলে তাদের সঙ্কট ছাপ ফেলতে পারে ব্যাঙ্কের হিসেবের খাতাতেও।
• কেন্দ্র অবিলম্বে সাহায্যের ব্যবস্থা না করলে, সব সংস্থা টিকে থাকতে পারবে তো?
রিলায়্যান্স জিয়ো সস্তার পরিষেবা নিয়ে বাজারে পা ফেলার পরে যে মাসুল যুদ্ধ মাথা তুলেছিল, তা হালে কিছুটা থিতিয়েছে। কিন্তু তার বদলে এক দিকে চেপে ধরেছে কল সংযোগ বাবদ ধার্য ইন্টারকানেক্ট ইউসেজ চার্জ (আইইউসি) তুলে দেওয়া নিয়ে জিয়োর মতো নতুন সংস্থার সঙ্গে ভোডাফোন ও এয়ারটেলের মতো পুরনোদের দ্বন্দ্ব। যে বিতর্কে অন্য সংস্থার ফোনে কথা বলার পরিষেবায় ইতিমধ্যেই মিনিটে ৬ পয়সা মাসুল চাপিয়েছে জিয়ো। অন্য দিকে চিন্তা বাড়িয়েছে লাইসেন্স ও স্পেকট্রাম ফি নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের সাম্প্রতিক রায়ের পরে পুরনো সংস্থাগুলির ঘাড়ে দীর্ঘ দিনের বিপুল বকেয়া মেটানোর দায় চাপা। এই অবস্থায় চলতি অর্থবর্ষের দ্বিতীয় ত্রৈমাসিকে চোখ কপালে তোলা লোকসান গুনেছে দেশের বিভিন্ন টেলিকম সংস্থা। শুধু ভোডাফোন, এয়ারটেলের মিলিত ক্ষতির অঙ্কই ভারতের কর্পোরেট মহলের ইতিহাসে সর্বোচ্চ। আর তার পরেই এই শিল্পের ভবিষ্যৎ নিয়ে প্রশ্ন তুলতে শুরু করেছে সংশ্লিষ্ট মহল। চর্চা শুরু হয়েছে আর্থিক সঙ্কট কাটিয়ে তাদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখা নিয়েই। অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামনের অবশ্য দাবি, তাঁরা চান না কোনও সংস্থা বন্ধ হয়ে যাক। তবে এই শিল্পকে আর্থিক সাহায্য দেওয়া নিয়ে এখনও তেমনও কোনও আশ্বাস মেলেনি কেন্দ্রের তরফে।
আরও পড়ুন: অংশীদারি বিক্রিতে সায়, তালিকায় বিসিপিএল
টেলিকম সংস্থাগুলির সংগঠন সিওএআই এ দিনও বকেয়া মেটানোর প্রক্রিয়া তিন বছর স্থগিত রাখার আর্জি জানিয়েছে। আবেদন করেছে, সংস্থাগুলির লাইসেন্সের মেয়াদ ১০ বছর বাড়িয়ে, তত দিন পর্যন্ত তা শোধের সুযোগ দেওয়া হোক।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy