Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
Ram Nath Kovind

নিশানা রফতানি, আস্থা স্বদেশিতে!

দেশের ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল করার পথ খুঁজতে গিয়ে বৈদিক যুগে তার আর্থিক দাপট নিয়ে তৃপ্তির ঢেঁকুর!

—ফাইল চিত্র।

—ফাইল চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০১ ফেব্রুয়ারি ২০২০ ০৩:১৮
Share: Save:

শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তনী কৃষ্ণমূর্তি সুব্রহ্মণ্যনের মুখেও মাঝেমধ্যে ‘স্বদেশি পণ্যের’ জয়গান! সেই শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়, যাকে উদার অর্থনীতি শিক্ষার পীঠস্থান হিসেবে এক ডাকে চেনে দুনিয়া।

মুখ্য আর্থিক উপদেষ্টার মুখে যখন ভারতকে বিশ্বের রফতানি হাব করে তোলার প্রতিজ্ঞা, তখন সংসদে দাঁড়িয়ে তাঁর বক্তৃতায় আমদানিতে দেওয়াল তোলার কথা বলছেন রাষ্ট্রপতি!

ছোট ব্যবসায়ীদের সুবিধা দেওয়ার পক্ষে সওয়াল করা হচ্ছে। অথচ অর্থনীতিতে নতুন উদ্যোগের সুফল বলতে টেনে আনা হল বিশ্বের সব থেকে বড় ১০০টি উদ্যোগের উদাহরণ!

দেশের ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল করার পথ খুঁজতে গিয়ে বৈদিক যুগে তার আর্থিক দাপট নিয়ে তৃপ্তির ঢেঁকুর!

শুক্রবার আর্থিক সমীক্ষা পেশে এমন স্ববিরোধের নমুনা মিলল বারবার। বিশেষ করে দিনভর একটাই প্রশ্ন ঘুরপাক খেল, উদার অর্থনীতি আর আমদানিতে দেওয়াল তোলার কথা একই দিনে উঠে এল কী করে?

সুব্রহ্মণ্যনের দাবি, চিনের ধাঁচে ভারত বিশ্বের অন্যতম রফতানি হাব হয়ে উঠতে পারলে, ২০২৫ সালের মধ্যে ৪ কোটি এবং ২০৩০ সালের মধ্যে ৮ কোটি নতুন ভাল বেতনের কাজের সুযোগ তৈরি হবে দেশে।

তার শর্ত কী?

বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে কাঁচামাল এবং যন্ত্রাংশ আনবে নানা সংস্থা। তার পরে ভারতের মাটিতে সেগুলি জুড়ে জুড়ে পণ্য তৈরি করে তা বিক্রি করবে সারা বিশ্বের বাজারে। ঠিক যে পথে হেঁটে উৎপাদন শিল্পে একেবারে প্রথম সারিতে উঠে এসেছে চিন। কিন্তু প্রশ্ন হল, ভারত যদি সত্যিই এই মডেল আঁকড়ে ধরার কথা ভাবে, তা হলে কী ভাবে এ দিনই শুধু স্বদেশি পণ্য কেনায় জোর দেওয়ার কথা বললেন রাষ্ট্রপতি? একই কথা এর আগে বলেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীও। স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্ন, অন্য দেশের পণ্য-পরিষেবা ভারত না-কিনলে, এ দেশে তৈরি হওয়া পণ্যই বা বাকিরা কিনতে যাবে কেন? অনেকে এটাও জিজ্ঞাসা করছেন যে, বিদেশ থেকে সস্তায় কাঁচামাল ও যন্ত্রাংশ এনে এ দেশে তা দিয়ে পণ্য তৈরির কথা বলছে সমীক্ষা, অথচ ইস্পাত-সহ বিভিন্ন পণ্যের সস্তার আমদানি রুখতে শাস্তি শুল্কের পথেও হেঁটেছে ভারত।

চিনে সস্তায় বিপুল পরিমাণ পণ্য তৈরির সুবিধা পেতে সেখানে লগ্নি না-করা বহুজাতিক প্রায় নেই বললেই চলে। এ দিন যেমন উদাহরণ হিসেবে ওই পড়শি মুলুকে অ্যাপলের ফোন তৈরির কথা বলেছেন সুব্রহ্মণ্যন। দাবি করেছেন, বৈদ্যুতিন পণ্য তৈরির মতো বিভিন্ন ক্ষেত্রে এত দিন চিন ছাড়াও দাপট ছিল জাপান, কোরিয়ার মতো দেশগুলির। কিন্তু লগ্নির গন্তব্য হিসেবে হালে তাদের আকর্ষণ কমছে। মার্কিন মুলুকের সঙ্গে বাণিজ্য-যুদ্ধে জড়ানোয় চিন থেকেও লগ্নি সরাচ্ছে অনেক সংস্থা। ফলে বিদেশি লগ্নি টানার ক্ষেত্রে এটি সোনার সুযোগ।

প্রশ্ন উঠল, তা হলে ভারতে আরও ১০০ কোটি ডলার ঢালার ঘোষণা করার পরেও মার্কিন ই-কমার্স অ্যামাজনের কর্ণধার জেফ বেজোসের বিরুদ্ধে কেন বিবৃতি দিলেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী? বড় বহুজাতিকের লগ্নিকে পাখির চোখ করার পাশাপাশি ছোট উদ্যোগপতিদের একই রকম উৎসাহ দেওয়ার চাবিকাঠি কী হবে, জিজ্ঞাসা তা নিয়েও। বিশেষত যেখানে ছোট ব্যবসার উদাহরণ দিতে ‘ব্যান্ড বাজা বারাত’ ছবির উদাহরণ টেনে এনেছেন সুব্রহ্মণ্যন। বলেছেন, কী ভাবে সেখানে বিয়ে আয়োজনের ব্যবসায় সাফল্য পাওয়ার স্বপ্নে মশগুল শ্রুতি নামে একটি মেয়ে। তাঁর দাবি, ছোট-ছোট ব্যবসা শুরুর হাত ধরে সম্পদ তৈরিই আগামী দিনে চাঙ্গা অর্থনীতির চাবিকাঠি। অথচ অর্থনীতিতে তার প্রভাব বলতে গিয়ে টেনেছেন বিশ্বের প্রথম ১০০টি উদ্যোগের উদাহরণ।

আবার সেই স্ববিরোধ।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy