শনিবার বাজেট পেশ করেছেন অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন। কিন্তু তাতে অর্থনীতির ঝিমুনি কাটানোর দিশা কতটা মিলল, তা নিয়ে প্রশ্ন অনেকেরই। রবিবার প্রেমাংশু চৌধুরীর সঙ্গে একান্ত সাক্ষাৎকারে সরকারের অবস্থান ব্যাখ্যা করলেন আর্থিক বিষয়ক সচিব অতনু চক্রবর্তী।
আনন্দবাজার: অর্থনীতির ঝিমুনি কাটাতে বাজেটে সরকারি খরচ বাড়ানোর দরকার ছিল। কিন্তু বাজেটে দেখা যাচ্ছে, জিডিপি-র তুলনায় সরকারি খরচ প্রায় একই রয়েছে। গত বছরের থেকে খুব বেশি বাড়ছে না। তা হলে অর্থনীতি চাঙ্গা হবে কী করে?
অতনু চক্রবর্তী: জিডিপি-ও বাড়ছে। সরকারি খরচও বাড়ছে। কিন্তু জিডিপি-র তুলনায় সরকারি খরচ এক লাফে খুব বেশি বেড়ে যাবে, এমন হওয়ার সম্ভাবনা কম। কারণ অর্থনীতির নির্দিষ্ট ক্ষমতা রয়েছে, সে কতখানি সরকারি খরচ নিতে পারবে। খুব বেশি সরকারি খরচ বাড়ানোর নীতি নিতে গেলে অনেকখানি মুদ্রাস্ফীতির আশঙ্কা থেকে যায়, তা মনে রাখা দরকার। সরকারের লগ্নি বেড়ে গেলে বাজার থেকে সরকারই বেশি ধার করবে। বেসরকারি লগ্নি কমে যাবে। আমরা চাইছি, বেসরকারি লগ্নিই বেশি হোক।
আনন্দবাজার: কিন্তু অর্থনীতিকে চাঙ্গা করতে তো সরকারের দায়িত্ব রয়েছে!
অতনু: দু’টি বিষয় বলা দরকার। এক, আমরা সমস্ত সরকারি ‘ফ্ল্যাগশিপ’ প্রকল্পে পুরো টাকা দিয়েছি। দুই, পরিকাঠামো খাতে বরাদ্দ গত বছরের বরাদ্দের তুলনায় প্রায় ৭৬ হাজার কোটি টাকা বেড়েছে। খরচের গুণগত মান দেখা দরকার। রাজকোষে যে ঘাটতি হচ্ছে, তা কোথায় খরচ হচ্ছে দেখতে হবে। আমরা অনেক বেশি পরিমাণে পরিকাঠামো তৈরিতে খরচ করছি।
আনন্দবাজার: কিন্তু একশো দিনের কাজে বরাদ্দ তো সামান্য বেড়েছে?
অতনু: একশো দিনের কাজে এখনও পর্যন্ত সব থেকে বেশি বরাদ্দ করা হয়েছে এ বার। একশো দিনের কাজ হল রোজগার সুনিশ্চিত করা। রোজগার কমে গেলে একশো দিনের কাজের চাহিদা বেড়ে যায়।
প্রয়োজনে আরও অর্থ বরাদ্দ করতে হবে। আমরা এখন একশো দিনের কাজে স্থায়ী সম্পদ তৈরির উপরে জোর দিচ্ছি। যেমন, এই প্রকল্পে পশুখাদ্য খামার তৈরির ঘোষণা হয়েছে। কিন্তু একশো দিনের কাজের প্রকল্পে দীর্ঘস্থায়ী পরিকাঠামো তৈরি করা যায় না। এর নকশাই সে ভাবে তৈরি হয়নি। তাই
একশো দিনের কাজের প্রকল্প সর্বরোগহর বটিকা নয়।
আনন্দবাজার: অর্থমন্ত্রী ধরে নিয়েছেন, বর্তমান বাজারদরের হিসেবে চলতি বছরের তুলনায় আগামী অর্থ বছরে জিডিপি ১০ শতাংশ বাড়বে। তা কি বাস্তবসম্মত?
অতনু: আমরা ১২ শতাংশ ধরতে পারতাম। মাত্র ১০ শতাংশ বৃদ্ধি কি খুব বেশি আশা?
আনন্দবাজার: অর্থমন্ত্রী ১০ শতাংশ আর্থিক বৃদ্ধির অনুমানের পিছনে যুক্তি দিয়েছেন, কিছু প্রবণতা দেখা যাচ্ছে। সেগুলো কী?
অতনু: আপনি যদি শিল্পোৎপাদনের সূচক দেখেন, তা হলে দেখবেন তেল-গ্যাসের মতো ক্ষেত্র বাদে বাকি সব গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রেই উৎপাদন বেড়েছে।
আনন্দবাজার: বাজেটে ধরা হচ্ছে, চালু বাজারদরে জিডিপি ১০ শতাংশ বাড়বে। অথচ কর বাবদ আয় ১২ শতাংশ বাড়বে। খুব বেশি আশা করা নয়?
অতনু: এ বছর করের ক্ষেত্রে কিছু কাঠামোগত সংস্কার হয়েছে। ফলে কর বাবদ আয় কমেছে। সেই কম আয়ের তুলনায় আগামী বছরে ১২ শতাংশ কর বাবদ আয় বৃদ্ধি হবে অনুমান করাটা খুবই বাস্তববাদী।
আনন্দবাজার: এই আর্থিক বছরে লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় কর বাবদ আয় ৩ লক্ষ কোটি টাকা কম হয়েছে। আগামী বছর লক্ষ্য ছোঁয়া যাবে?
অতনু: খুবই সহজে। আগামী বছর, তার পরের বছরও।
আনন্দবাজার: রাজকোষ ঘাটতি এ বছর ৩.৩ শতাংশের লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় বেড়ে ৩.৫ শতাংশ হয়েছে। পরের বছরেও রাজকোষ ঘাটতি ৩ শতাংশে নামিয়ে আনার কথা ছিল। তা বেড়ে হবে ৩.৫ শতাংশ হচ্ছে। সরকার আর্থিক শৃঙ্খলা থেকে সরে আসছে?
অতনু: ধাপে ধাপে রাজকোষ ঘাটতি কমিয়ে আনার সুস্পষ্ট রূপরেখা বাজেটে দেওয়া হয়েছে।
আনন্দবাজার: রাজকোষ ঘাটতিতে লাগাম পরাতে এ বছর বাজেটে খাদ্য ভর্তুকি প্রায় ৭৪ হাজার কোটি টাকা ছাঁটাই করা হয়েছে। খাদ্যে কি ভর্তুকি দেওয়া হবে না?
অতনু: খাদ্যে ভর্তুকির দুটি ভাগ। এক, আপদ-বিপদের জন্য খাদ্যশস্যের ভাণ্ডার মজুত রাখা। দুই, ন্যূনতম সহায়ক মূল্যে ২০ থেকে ৩০ কোটি টন অতিরিক্ত খাদ্যশস্য কেনা। চাষিরা যাতে এমএসপি পান, তার জন্য পুরো টাকাই বাজেট থেকে দেওয়া হয়েছে। যাতে খাদ্য নিগমের পিঠ ভেঙে না যায়। বাকি অর্থ বাজেটের বাইরে থেকে দেওয়া হচ্ছে। না হলে আমার রাজকোষ ঘাটতি বেড়ে যাবে। জিডিপি-র তুলনায় ঋণের অনুপাত বেড়ে যাবে।
আনন্দবাজার: রাজকোষ ঘাটতি পূরণ করতে সরকার যে ধার করছে, তার বড় অংশ আসছে স্বল্প সঞ্চয় প্রকল্প থেকে। ব্যাঙ্কগুলির অভিযোগ, সরকার নিজের ঘাটতি মেটাতে স্বল্প স্বঞ্চয় প্রকল্পের উপর নির্ভরশীল। তাই স্বল্প সঞ্চয়ে সুদ কমছে না। ফলে ব্যাঙ্কও আমানতে সুদ কমাতে পারছে না। কারণ ডাকঘরের তুলনায় ব্যাঙ্কের সুদ কমে গেলে কেউ ব্যাঙ্কে টাকা রাখবে না। আমানতে সুদ কমছে না বলে ব্যাঙ্কগুলি শিল্পের জন্য ঋণেও সুদ কমাতে পারছে না বলে দাবি। এটা কি ঠিক?
অতনু: আমরা মোটেই স্বল্প সঞ্চয় প্রকল্পের উপর নির্ভরশীল নই। বহু মানুষ এর উপর নির্ভরশীল। ডাকঘরে স্বল্প সঞ্চয়ে মোট আমানতের পরিমাণ প্রায় ১২ লক্ষ কোটি টাকা। সেখানে ব্যাঙ্কে মোট আমানতের পরিমাণ প্রায় ১৪০ লক্ষ কোটি টাকা। এখন ব্যাঙ্ক কি বলতে পারে, ডাকঘরে আমানতের জন্য আমি সুদ কমাতে পারছি না! তবে নীতিগত ভাবে সরকারি ঋণপত্রের সুদ বাড়লে-কমলে স্বল্প সঞ্চয়ে সুদ বাড়া-কমা উচিত। সেই সুপারিশও রয়েছে। পরের বার সুদের হার ঘোষণার সময় দেখা যাক, কী হয়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy